• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ফিচার

ভালোবাসার সাতকাহন

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৩ এপ্রিল ২০২২

আসমাউল হুসনা

ভালোবাসতে ভালোবাসে সবাই। কিন্তু সেই ভালোবাসা দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারে কজন? আচ্ছা মানুষ ভালোবাসে কেন? বিভিন্ন কবি-সাহিত্যেকেরা বিভিন্নভাবে ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের অন্যতম কবি রফিক আজাদ ভালোবাসার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘ভালোবাসা মানে দুজনের পাগলামি, পরস্পরকে হূদয়ের কাছে টানা, ভালোবাসা মানে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া’। আফগানি কথাসাহিত্যের অন্যতম বিখ্যাত লেখক আকরাম ওসমান ‘মানুষ কথা রাখে’ গল্পে অধিবক্তার মুখ দিয়ে বলেছেন, ‘প্রেমিক কখনো মৃত্যুকে ভয় করে না, ভালোবাসা কখনো পাহাড় কিংবা জেলখানা ভয় করে না, প্রেমিকের মন ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো, যা রাখালের রক্তচক্ষু কিংবা চিৎকারে ভয় পায় না।’ কবি সাহিত্যিকদের এই সংজ্ঞাগুলোকেই যেন প্রমাণ করে দিলেন ফাহমিদা মাহমুদ জুটি! কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার ছেলে মাহমুদুল হাসান নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করছেন আর চট্টগ্রামের ফাহমিদা কামাল বিবিএ করছেন আইইউবি থেকে। শিক্ষাজীবনে পরিচয় হয় তাদের। পরিচয় থেকে প্রেম তারপর প্রণয়ের জন্য দীর্ঘ ছয় বছরের অপেক্ষা। ২০২০সালের শেষের দিকে দুই পরিবারের অনুমতি নিয়ে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০২১সালের শুরু থেকে ফাহমিদা অসুস্থ হতে শুরু করে। জানুয়ারির ২১ তারিখ তারা জানতে পারেন ফাহমিদা ‘রেকটাম’ ক্যানসারে আক্রান্ত! দুজনে হাত ধরে জনম জনম থাকার রঙিন স্বপ্নে নিমিষেই ভর করে ঘন কালো মেঘ। প্রথমে ফাহমিদাকে রাজধানীর এভায়কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের টাটা হাসপাতালে। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি! সেখানকার ডাক্তাররা জানান ফাহমিদার আর কোনো চিকিৎসাই কাজে আসবে না। ৫ মার্চ তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে চট্টগ্রামের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাহমুদ তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তের সম্মুখীন হন। একদিকে প্রেমিকার অনিবার্য মৃত্যু, অন্যদিকে তার পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা। মৃত্যুপথযাত্রী ফাহমিদাকে ছেড়ে আসবেন? নাকি তার হাতে হাত রেখে ভরসা দিয়ে বলবেন, ‘ভয় নেই আমি তো আছি।’ একবিংশ শতাব্দীর এই স্বার্থপরতার যুগে সুনীলের ‘কেউ কথা রাখেনি’ উক্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রবি ঠাকুরের ‘আমি তোমারও বিরহে রহিব বিলীনও তোমাতে করিবো বাস, দীর্ঘ দিবসও দীর্ঘ রজনী দীর্ঘ বর্ষ ও মাস’-লাইনটিকে আপন করে নেন তিনি। তার প্রতিজ্ঞায় অটল থেকে বলেন, ‘ফামিদাকে যদি মরতে হয় আমার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে।’ মাহমুদ তার কথা রেখেছেন ৯ মার্চ হাসপাতালের বেডেই লাল শাড়িতে কনে সেজে, নাকে স্যালাইনের নল নিয়েই বিয়ের পিড়িতে বসেন ফাহমিদা- মাহমুদ। সৃষ্টি করেন ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত! যা অমর হয়ে রবে বহুকাল। বিয়ের পর হাসপাতালের ছোট্ট কেবিনের মধ্যেই সাজান সুখের সংসার। তবে তাদের এ সুখের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১২ দিন। গত ২২ মার্চ দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যান ফাহমিদা! এ জীবন তো ক্ষণিকের! কে চায় ক্ষণিকের মোহে আবদ্ধ হয়ে জন্ম-জন্মান্তর দূরে ঠেলে দিতে? কিছু দূরত্ব থাকে কাছে আসার, কিছু বিরহ থাকে খুব করে ভালোবাসার! ক্ষণিকের মোহের এই জীবনে ফাহমিদার দূরত্ব মাহমুদের কাছে না হয় বিরহ হয়েই গচ্ছিত থাক। হয়তো প্রিয় মানুষ হারানোর বেদনা এইজীবনে তাকে তাড়িয়ে বেড়াবে। আক্ষেপ নিয়ে মাহমুদ অপেক্ষা করবে পরজনমের। যেমনটি বাউল কবি লিখেছেন-‘তোমার সনে প্রেম করিয়া আমার মন ভরে নাই। পরজনমে আবার তোমায় চাই।’ সৃষ্টিকর্তা হয়তো এজনমের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পরজনমে পূরণের সুযোগ করে দিবেন তাদের সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য। মাহমুদ-ফাহমিদার এই ভালোবাসা বর্তমান প্রজন্মের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। তারা প্রমাণ করে দিয়েছে চাইলেই আজীবন পাশে থাকা যায় একে অপরের ভরসা হয়ে। যদিও ক্ষণিকে এই পৃথিবী থেকে  বিদায় নিয়েছেন তিনি, তবুও  সফল প্রেমিকা হয়ে হাজার বছর থেকে যাবেন মাহমুদুল হাসানের ভালোবাসায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads