• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
ঐতিহ্যবাহী শাঁখারিবাজার

সংগৃহীত ছবি

ফিচার

ঐতিহ্যবাহী শাঁখারিবাজার

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ১৫ মে ২০২২

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের আদি অংশটিকে বলা হয় পুরোনো ঢাকা। এই গোটা এলাকাটি যেন এক জীবন্ত ইতিহাস। পুরোনো বাড়িঘরগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে কতই না গল্প। ঐতিহ্যবাহী নানা স্থাপত্য, বিরিয়ানি, বাকরখানির মতো বিখ্যাত সব খাবার, শঙ্খ, তামা, কাঁসার হস্তশিল্প সবকিছু নিয়ে পুরোনো ঢাকা একটা নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। বুড়িগঙ্গা নদীর কাছে ইসলামপুর রোড এবং নওয়াবপুর রোডের সংযোগস্থলে রয়েছে শাঁখারিবাজার। যারা শাঁখা তৈরি করেন, তাদেরকে বলা হয় শাঁখারি। বহুকাল ধরে পুরোনো ঢাকার এই অঞলে শাঁখারিরা বসবাস করেন বলেই জায়গাটার নাম শাঁখারিবাজার। আগে ঢাকা শহরের খ্যাতি ছিল শাঁখার জন্য। এখনো সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে শাঁখারিবাজার। নানান ডিজাইনের শাঁখা এখানে পাওয়া যায়। এছাড়া সিঁদুর, আলতা, ঘট, প্রদীপ, ধুতি, পদ্মফুল বেলপাতা প্রভৃতি জিনিস এখানে মেলে, যেগুলো সাধারণত পুজোয় ব্যবহূত হয়। এখানকার শাঁখারিরা বংশানুক্রমিকভাবে শাঁখা তৈরি করে চলেছেন। গবেষকরা বলেন, এদের পূর্বপুরুষরা হাজারো বছর আগে বল্লাল সেনের আমলে দক্ষিণ ভারত থেকে এসেছিলেন বাংলায়। তারাও শাঁখা বানাতেন। প্রথমে তারা বসতি গড়ে তোলেন বিক্রমপুর অঞ্চলে। তারপর ঢাকা এলাকার শাঁখারিপট্টি বা শাঁখারিবাজারে থাকা শুরু করেন। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ঢাকায় সুবাহ বাংলার রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। তার নিযুক্ত সুবাহদার ইসলাম খাঁর সেনাপতি মির্জা নাথানের লেখায় শাঁখারিবাজারের উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৭ শতকে নেপাল, ব্রহ্মদেশ, ভুটান, চিন প্রভৃতি নানা দেশে এখান থেকে শাঁখা রপ্তানি হতো।

প্রয়োজনের তাগিদে এই জায়গা ছাড়াও বরিশাল, সাতক্ষীরা, খুলনা, পাবনা, নাটোর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুরের মতো নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছেন শাঁখারিরা। জেমস ওয়াইজ ১৮৮৩ সালে লিখেছেন, তখন ঢাকায় ৮৩৫ জন শাঁখারি বসবাস করতেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে শাঁখারিবাজার গুঁড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে আবার নতুন উদ্যমে শাঁখা তৈরির কাজ শুরু হয় এখানে। মূলত হিন্দুরাই শাঁখা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। শঙ্খ কেটে শাঁখা তৈরি, নানারকম অলংকরণ এগুলো খুব জটিল এবং সূক্ষ্ম কাজ। পরিশ্রমসাধ্যও বটে। তাই শাঁখারিপাড়ায় নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই পেশাকে গ্রহণ করতে চান না। অনেকেই ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য পেশাতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এর ফলে প্রাচীন শাঁখা শিল্প আজ বিপন্নতার মুখোমুখি। তারই মধ্যে লড়াই করে চলেছেন শাঁখারিরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads