• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

সরকার

প্রিয়জনকে মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলবেন না: প্রধানমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ মে ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য মহামারীর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ছুটোছুটি করবেন না। যে যেখানে আছেন, সেখানে থেকেই উৎসব উদ্যাপন করুন। এভাবে গ্রামে গিয়ে প্রিয়জনকে মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলবেন না। গতকাল রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে তিনি এসব বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, ঈদের সময় মানুষপাগল হয়ে গ্রামে ছুটছে। কিন্তু এই যে আপনারা এভাবে একসঙ্গে যাচ্ছেন- সেটা ফেরিতে, গাড়িতে বা অন্য যে কোনোভাবে হোক- কার যে করোনা ভাইরাস আছে তা আপনি জানেন না। কিন্তু আপনি সেটা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আপনার পরিবারের কাছে। বাড়িতে মা-বাবা, দাদা-দাদি, ভাই-বোন,  যে-ই থাকুক, আপনি কিন্তু তাকেও সংক্রমিত করবেন। তার জীবনটাও মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলে দেবেন।

একটা ঈদে কোথাও না গিয়ে নিজের ঘরে থাকলে কী ক্ষতিটা হয়? আপনারা ছুটোছুটি না করে যে যেখানে আছেন, সেখানেই থাকুন। সেখানে নিজের মতো করে ঈদ উদ্যাপন করুন। আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন, নিজের ভালো চিন্তা করুন। যার যার পরিবারের ভালোর চিন্তা করুন। মহামারীতে সারা বিশ্বেই মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশে প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশে যখন প্রকোপ দেখা দেয়, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশে আসারও আশংকা  থাকে। সেজন্য আগে থেকেই আমাদের নিজেদের সুরক্ষিত থাকতে হবে। নিজেদের সেভাবে চলতে হবে যেন সবাই করোনা থেকে বেঁচে থাকতে পারি।

সবাইকে স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন। আপনারা একটু মাস্ক পরে থাকবেন। সাবধানে থাকবেন। কারণ নতুন আরেকটা ভাইরাস (নতুন ভ্যারিয়েন্ট) এসেছে। এটা আরো বেশি ক্ষতিকারক। তাই আপনি নিজে সুরক্ষিত থাকেন, অপরকে সুরক্ষা দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের অবশিষ্ট মূল অধিবাসী এবং ক্ষতিগ্রস্ত মোট ১ হাজার ৪৪০ জনের মধ্যে প্লট বরাদ্দ পত্র প্রদান করেন। বলেন, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বিশাল বিশাল অট্টালিকা থাকলেও নতুন গড়ে ওঠা পূর্বাচলে একটি প্লটের জন্য অনেকেই মরিয়া। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি- অতিরিক্ত সম্পদ গড়ার মানসিকতা পরিহার করুন।

যাদের এত বিশাল বিশাল অট্টালিকা, বাড়িঘর ফ্ল্যাট সবই আছে, তাদের আরো লাগবে কেন? মরলে তো সবাইকে যেতে হবে সেই কবরে- মাত্র তিন হাত-সাড়ে তিন হাত জায়গায়। এই ধনসম্পদ কেউ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না। এই কথাটা মানুষ কেন ভুলে যায় আমি জানি না। আমরা শহর গড়ে তুলতে চাই। আমাদের দেশে যারা বিত্তশালী তারা প্লট কেনেন, ভালো ভালো দৃষ্টিননন্দন বাড়িঘর বানান। যখন পূর্বাচল শুরু হলো, তখন আমি দেখেছি- গুলশান, বারিধারায় বিশাল বিশাল অট্টালিকার মালিকদের  পূর্বাচলে একটা প্লট না থাকলে নাকি ইজ্জতই থাকে না। যারা সত্যিকার প্রাপ্য তাদেরই প্লট দেওয়া হয়েছে। প্লটের বরাদ্দ পাওয়াদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কিন্তু বঞ্চিত ছিলেন। আমার সব সময় একটা প্রচেষ্টা ছিল- কীভাবে আপনাদের বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেব। আপনারা জমি দিয়েছেন, অথচ প্লট পাবেন না এটা হতে পারে না।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে পূর্বাচলে জাতির পিতার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের একটা প্রকল্প অনুমোদনের প্রস্তাব এলেও তাতে সায় দেননি বলে অনুষ্ঠানে জানান সরকারপ্রধান। বলেন, সেই ফাইলে আমি লিখে দিয়েছিলাম, এখানকার যারা আদিবাসী তারা প্লট পাবে। তারপর আমি এ প্রকল্পের অনুমোদন দেব। তার আগে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেব না এবং কীভাবে প্লট বের করবে সেটা যেন মন্ত্রণালয় বা রাজউক খুঁজে বের করে- সেই নির্দেশনাটাই আমি দিয়েছি। আমি এইটুকু চাই- বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। যেটুকু পারি, যেভাবে পারি মানুষকে একটা ঘর, মাথা গোঁজার ঠাঁই আমরা করে দেব। প্রত্যেকটি ঘরেই বিদ্যুৎ থাকবে, আলো জ্বলবে। প্রতিটি পরিবারেই শিক্ষিত মানুষ থাকবে, লেখাপড়া শিখবে।

যুবসমাজকে আত্ননির্ভরশীল করে গড়ে তোলার প্রত্যয়ের কথা তুলে ধরে বলেন, লেখাপড়া শুধু কেতাবি হবে না। এরসঙ্গে ভোকেশনাল ট্রেনিং, কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে- যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। শুধু বিএ, এমএ পাস করে চাকরির পেছনে ঘুরলে হবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, নিজেরা যেন চাকরি দিতে পারে সেভাবে নিজেদের তৈরি করতে হবে। অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ অধিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে প্লটের বরাদ্দপত্র তুলে দেন।

প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকায় মোট ছয় হাজার ২৭৭ একর জমিতে পূর্বাচল নতুন শহর গড়ে তুলতে ১৯৯৬ সালে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নের কাজে শুরু হতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লেগে যায়। ২৫ বছর আগে শুরু হওয়া সরকারের এই সর্ববৃহৎ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৭৮২ কোটির টাকারও বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকা অবস্থায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে স্থানীয় এবং মূল অধিবাসীদের মধ্যে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তাদেরকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় প্লট বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেন। ইতোমধ্যে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্তদের ৬ হাজার ৪৪২টি প্লটের বরাদ্দ দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকা অবস্থায় মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত বাকিদের মধ্যে এক হাজার ৪৪০টি প্লটের বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রোববার পূরণ করলেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র প্রান্তে আরো উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads