• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বিএনপিকে কেন ভোট দেবে : প্রধানমন্ত্রী

সংগৃহীত ছবি

সরকার

বিএনপিকে কেন ভোট দেবে : প্রধানমন্ত্রী

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৪ অক্টোবর ২০২১

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেছেন, জনগণ ভোট দিতে পারছে না বলে যারা অভিযোগ করছেন, তাদের কে ভোট দেবে। তিনি বলেন, বিএনপি জানে যে তাদের আর কোনো ‘সম্ভাবনা নেই’, সে কারণে তারা নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত করার চেষ্টা’ করছে।

সোমবার বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট এবং এর স্থায়ী সমাধানের বিষয়টি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। এ আলোচনার ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্কের (এসডিএসএন) পক্ষ থেকে দেওয়া ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারকে দেশের টেকসই উন্নয়নের স্বীকৃতি বলে মন্তব্যও করেন শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে বলেন, একটা দল কীভাবে জিতবে, তার নেতৃত্বটা কোথায়? একজন এতিমের টাকা চুরি করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আরেকজন গ্রেনেড হামলার মামলায় কারাদণ্ড নিয়ে দেশান্তরী, সাজাপ্রাপ্ত আসামি। জনগণ কোন ভরসায় ওই দলকে ভোট দেবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ কখন ভোট দেয়? মানুষ দেখে ওই দলকে ভোট দিলে ক্ষমতায় কে যাবে। তারা (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান) তো ইলেকশনও করতে পারবে না।’ বিএনপি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিশ্বাসই ‘হারিয়ে ফেলেছে’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা জানে যে তাদের কোনো সম্ভাবনা নেই। সম্ভাবনা যখন নেই, যেভাবে হোক নির্বাচনটা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা, অর্থাৎ গণতন্ত্রের যে ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে, সেটা নষ্ট করা।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের ভোট দেবে কেন, এই প্রশ্নটা করেন না। জনগণ ভোট দিতে পারছে না, এই কথাটা যারা বলে, মানুষ তাদের ভোট কেন দেবে? কারা কেন, কোন সুখের স্বপ্নে বা কোন আশার আলো দেখে বিএনপিকে ভোট দেবে? সেটাও একটু জিজ্ঞেস করেন, জেনে রাখি।

সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা ও এর স্থায়ী সমাধানের আলোচনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখবে। তিনি বলেন, অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপক্ষীয় ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের অধিবেশন চলাকালে বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছি। বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিয়ে আমি পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ও সহযোগিতা কামনা করি।

সরকারপ্রধান বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে আমি আবারো বিশ্বনেতৃবৃন্দকে স্মরণ করিয়ে দেই, রোহিঙ্গা সংকটের সৃষ্টি মিয়ানমারে, সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে। রাখাইন রাজ্যে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই কেবল এ সংকটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে উল্লেখ করে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে গঠনমূলক উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানাই।

শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, সৌদি আরব, ওআইসি, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, গাম্বিয়া এবং বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আমি মূল বক্তব্য দিয়েছি। অনুষ্ঠানে তুরস্ক, গাম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা এবং আসিয়ানের বিশেষ দূত বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে কয়েকটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানাই। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দেওয়া প্রস্তাবগুলোর কথা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর উত্থাপিত প্রস্তাবগুলো হলো : ক. প্রত্যাবর্তনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এ লক্ষ্যে সব কার্যক্রম পরিচালিত করা। খ. মিয়ানমারের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেও প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা। গ. রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর কার্যকর ভূমিকা পালন। ঘ. জাতিসংঘ ও উন্নয়ন সহযোগীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর পদক্ষেপ ও প্রকল্প গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন। ঙ. রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত সহিংসতা ও জাতিগত নিধনের বিচার নিশ্চিত করতে আইসিজে ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে চলমান প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ যে অবিচলভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে, এসডিএসএনের পক্ষ থেকে দেওয়া ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার দেশের টেকসই উন্নয়নের বিশ্ব স্বীকৃতি। আমি দেশের জনগণকে এই পুরস্কার উৎসর্গ করি।’

এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার দেশের জনগণকে উৎসর্গ করে শেখ হাসিনা বলেন, সফরের প্রথম দিনে ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের এসডিএসএনের পক্ষ থেকে ২০১৫-২০২০ সময়কালে এসডিজি অর্জনে সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য আমাকে ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, এসডিএসএন-এর প্রেসিডেন্ট প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রফেসর জেফ্রি স্যাক্স আমার হাতে সম্মাননাটি তুলে দেন। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ যে অবিচলভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে, এই পুরস্কার তারই বিশ্ব স্বীকৃতি। আমি আমার ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্যে দেশের জনগণকে এই পুরস্কার উৎসর্গ করি।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বৃক্ষরোপণ দেশের জন্য বিরল সম্মান বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্থায়ী বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। তার নিচে একটি বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে কোনো রাজনৈতিক নেতার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ এটিই প্রথম। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আমরা আলোচনা করি, বৃক্ষরোপণ আমাদেরও লক্ষ্য। বাংলাদেশে আমরা সেটি করে যাচ্ছি। জাতিসংঘ সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করতে পারা সত্যেই আমার জন্য আনন্দের।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতিবারের মতো এবারো বাংলায় ভাষণ দিয়েছি। আমি কোভিডমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে টিকার সর্বজনীন সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।

তিনি বলেন, ‘টিকা বৈষম্য দূরীকরণে আমি কোভিড-১৯ টিকাকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই। মহামারির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ক্ষতি কমানো, ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান, টেকসই অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের অনুরোধ করি।’

সরকারপ্রধান বলেন, চলমান মহামারির প্রকোপে শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এবং টেকসই পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ডিজিটাল সরঞ্জাম ও সেবা, ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে আমি জাতিসংঘকে অংশীদারিত্ব ও প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানাই। অভিবাসী বহনকারী দেশগুলোকে অভিবাসীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার, তাদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে নারীদের অবদানের কথা তুলে ধরি। তৃণমূল পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব গঠন এবং নারী নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহের রাজনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করি।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথাও বিশ্বদরবারে উপস্থাপন করেছি, যা সব মহলে বহুল প্রশংসিত হয়েছে। অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপক্ষীয় ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী।

২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি বাংলায় ভাষণ দেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads