• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সরকার

ঋণনির্ভরতা কমছে সরকারের

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ অক্টোবর ২০২১

সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ কমিয়েছে সরকার। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমেছে ৪৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের জুলাইয়ে ৩ হাজার ৭০৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার বিপরীতে এ বছর জুলাই মাসে এ খাত থেকে ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এর ফলে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা লাঘবের পথ মসৃণ হলো।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্য বলছে, জুলাই মাসে সবমিলিয়ে ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের মোট নিট বিক্রির পরিমাণ ৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৯৮ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এই বিশাল অঙ্কের টাকার সুদ বা মুনাফা গুণতে হবে এখন সরকারকে। অন্যদিকে, গত অর্থবছরের শেষ দিন (চলতি বছরের ৩০ জুন) পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৮ কোটি টাকা।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সঞ্চয়পত্র থেকে গত অর্থবছরে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় ৩ জুন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় সেই লক্ষ্য বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়।

কিন্তু বছর শেষে দেখা যায়, সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে মূল বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নিয়েছে। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বেশি নিয়েছে ৩২ শতাংশ। আর আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি নিয়েছে প্রায় তিন গুণ। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এরমধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে সরকার ঠিক কাজটিই করেছে। এখন বিক্রি কমে আসবে; সরকারকে বেশি সুদ পরিশোধ করতে হবে না। এর ফলে সরকার স্বস্তিতে থাকবে। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর সুদের হার কমানো ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় ছিল না। গত অর্থবছরে সুদ-আসল বাবদ সরকারকে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। এটা একটা বিশাল অংক; বাজেট থেকে সুদ-আসল বাবদ এতো টাকা চলে গেলে অন্য কাজ কীভাবে হবে।’

২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এর আগে দেশের ইতিহাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে; ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি ৪৮ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সেজন্য গত ২২ সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের সুদের কমিয়ে দিয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম সুদের হার, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম হার এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেক রকম হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হারে সরকার হাত দেয়নি। অর্থাৎ আগে যে হারে সুদ পাওয়া যেতো, এখনো সেই হারে পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads