• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

সরকার

চালের দামে বিপাকে সরকার!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সয়াবিন তেলের মতো চালের দামের উর্ধ্বগতি নিয়েও বিপাকে পড়েছে সরকার। তবে সয়াবিনের মতো চাল নিয়ে কোনো টানাপড়েন নেই বিশ্ববাজারে। দেশে পর্যাপ্ত মজুত, আমদানি এবং বাম্পার ফলনের পরও দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। তাই চাল নিয়ে এবার নড়েচড়ে বসছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শুরু হতে যাচ্ছে আলোচনা। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এসব বৈঠক করে কি চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সরকার।

এর আগে সরকারের কোনো কার্যক্রমই চালের বাজার স্থিতিশীল করতে পারেনি। করোনা, লকডাউন, বিধিনিষেধসহ নানা অজুহাতে দাম বেড়েই চলেছে। বাজারে নিম্নমানের মোটা চালের কেজিও এখন ৫০ টাকার বেশি।

দেশে এখন চাল নিয়ে চালবাজির ঘটনা যেন নিত্যদিনের। চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এ খাদ্যপণ্যটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। বিআর-২৮ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। মোটা জাতের মধ্যে স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা।

এছাড়া ভালো মানের মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৬৮ থেকে ৭২ টাকা কেজিতে। কিছুটা কম মানের মিনিকেট ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা কেজি। আগে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা কম ছিল। নাজিরশাইল ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৬৯ টাকায়। মানভেদে কাটারিভোগ ৩ টাকা বেড়ে ৭০ থেকে ৭২ টাকা হয়েছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা বলছেন, চাল ও তেলের দাম বাড়ায় অন্য পণ্য কিনতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু বাজারে কোনো ধরনের চালের সংকট নেই। চালের দোকানগুলোয় শত শত বস্তাভর্তি চাল। তারপরও বাড়তি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। করোনার কারণের এমনিতেই আয় কমে গেছে। তার ওপর নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে।

এদিকে, দফায় দফায় চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের বৈঠকেও সুফল আসেনি। দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজার তদারকির নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। এমন পরিস্থিতিতে আবারো এলাকা ভাগ করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আবারো আলোচনায় বসছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

ইতোমধ্যে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ডেকেছে মন্ত্রণালয়। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে গতকাল সোমবার বিকালে প্রথম মতবিনিময় সভা হয়। অন্যটি হবে পরদিন আজ মঙ্গলবার। আর বিকাল ৪টায় রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় মতবিনিময় সভা। সভায় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, চালকল মালিক, আড়তদার ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, চালের চাহিদার অনুপাতে দ্রুত উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ বছর আউশ, বোরো ও আমনে রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। সরকারি মজুতও সর্বকালের সর্বোচ্চ। তারপরও দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চালের মূল্য নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে ঝুঁকছে সরকার। এর জন্য দরকার উচ্চ ফলনশীল ইনব্রিড ও সুপার হাইব্রিড জাতের আবাদ বাড়ানো। সেই লক্ষ্যে রোডম্যাপ আসছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, চালের উৎপাদন বাড়াতে নতুন উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতগুলোকে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে হবে। সুপার হাইব্রিডেরও চাষ বাড়াতে হবে। এছাড়া, পাহাড়, হাওর, উপকূলসহ প্রতিকূল এলাকায় ধানের চাষ সম্প্রসারণ করতে হবে। কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারেও খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। এছাড়া দেশে এখন ১০ লাখ রোহিঙ্গা আছে। প্রতিবছর ২২-২৪ লাখ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। গবাদিপশু ও মাছের খাদ্য হিসেবেও চালের ব্যবহার হচ্ছে। মানুষের আয় ও জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। এসব মিলে চালের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে, দাম কিছুটা বেশি। তবে এই মুহূর্তে দেশে খাদ্যের সংকট নেই বলে জানান মন্ত্রী।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পাইকারি বাজারগুলোতে মজুত করে কৃত্রিম সংকট যেন না করা হয়, সে বিষয়ে কঠোর তদারকির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ জন্য রাইস মিলগুলোতেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছে সরকার। এমন প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, চালের বাজারের পরিস্থিতি, সরবরাহ, মজুত ও সংগ্রহ বিষয়ে আপডেট থাকতেই সভা ডাকা হয়েছে। এ সভায় সরকারি-বেসরকারি চাল সংশ্লিষ্টরা থাকবেন। সভার পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

বৈশ্বিক করোনা মহামারিতে অনেক মানুষ চাকরি, আয়রোজগার হারিয়ে অনেকে গ্রামে প্রত্যাবর্তন করলেও করোনার প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন হু হু করে বাড়তেই লাগল। একদিকে মানুষের আয় কমেছে, করোনায় সুরক্ষাসহ জীবন-জীবিকা নির্বাহে ব্যয় বৃদ্ধি নাগরিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। যদিও সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিদের এ কথায় সায় নেই।

পেঁয়াজ, চাল, আলু, সবজি, ভোজ্যতেল, চিনি, আটা, ময়দা, মসলা এভাবে চক্রাকারে এক একবার এক একটি পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। করোনার এই মহামারি সংকটে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসাবে দেখা দিয়েছে প্রান্তিক ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন ঘটালেও গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিরতায় এই সফলতা ম্লান করে দিচ্ছে। অনেকে আবার নিজেদের অসাধু ব্যবসার সফল সিঁড়ি তৈরি করতে সরকারি দলের নেতার খাতায় নাম লেখাচ্ছেন।

বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় চাল একটি অন্যতম উপাদান। ভেতো বাঙালির ভাত ছাড়া চলেই না। আর সেই চালের বাজার অস্থির বেশ কয়েক মাস ধরেই। ঊর্ধ্বমুখী চালের অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। আর যারা চাল সংকটের সঙ্গে জড়িত সেই মিলমালিকদেরকে বিদেশ থেকে চাল আমদানিতে অনুমতি প্রদান করেছে সরকার।২১

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads