মারুফ হাসান। ছবি : সংগৃহীত
মাত্র আট বছরের শিশু নাটোরের মারুফ হাসান। বয়সের সাথে যার সাফল্যের কোনো তুলনা নেই। অবিশ্বাস্য দ্রুততায় মাত্র ৭০ দিনে পবিত্র কোরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করে হাফেজ হয়ে এখন সে সবার অনুপ্রেরণা।
নাটোরের নূরে মদিনা মডেল মাদ্রাসার ছাত্র মারুফ হাসান। বয়স মাত্র আট। কিন্তু তার অর্জন যেন বয়সকে হার মানিয়েছে। অন্য শিশুরা যখন খেলাধুলা আর বিদ্যালয়ের পড়ায় ব্যস্ত, তখন মারুফ মনোযোগ দিয়েছে কোরআন শেখায়। প্রতিদিন নিয়ম করে পড়া, শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন এসবই তাকে মাত্র ৭০ দিনে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়।
মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের শিক্ষকদের ভাষায়, শুরু থেকেই মারুফ ছিল মনোযোগী, নীরব, পরিশ্রমী। প্রতিদিনের নির্ধারিত সাবক ও নতুন সাবক মুখস্থ করতে সে রাখত বিশেষ মনোযোগ। এই নিষ্ঠাই তাকে এত দ্রুত সময়ে হিফজ শেষ করতে সাহায্য করেছে। এদিকে একই মাদ্রাসার নয় বছরের আব্দুর রহমানও কম সময়ে হিফজ সম্পন্ন করে সবার নজর কাড়ছে। মাত্র ১৪০ দিনে কোরআনের ৩০ পারা মুখস্থ করেছে সেও।
হাফেজ মারুফ হাসান মাদারীপুর জেলার শিবচরের প্রবাসী বেলাল মোল্লার ছোট ছেলে অন্যদিকে হাফেজ আব্দুর রহমান নাটোর সদর উপজেলার জাঠিয়ান গ্রামের সেন্টু মিয়ার ছেলে। মারুফ নাটোরের নূরে মদিনা মডেল মাদ্রাসায় আবাসিকভাবে পড়াশোনা করে।
সহপাঠী ও সহকর্মী শিশুরাও তাদের দুই বন্ধুর এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত। তারা বলছে-অতি অল্প সময়ে মারুফ ও আব্দুর রহমানের ৩০ পারা কুরআন মুখস্থ করা তাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তারাও চেষ্টা করছে দ্রুত কুরআন হিফজ করে হাফেজ হওয়ার।
হাফেজ হওয়ার পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে ছোট্ট মারুফ বলে, এটা তার জীবনের বড় অর্জন, বিশ্বজয়ী হাফেজ হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই এগিয়ে যেতে চায় সে। নিজের ও সহপাঠীদের জন্যও সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
আব্দুর রহমানও জানায়, আল্লাহর কৃপার সঙ্গে শিক্ষক ও পরিবারের অনুপ্রেরণাই তাকে এই শক্তি দিয়েছে।
শিক্ষকরা বলছেন, মারুফ ও আব্দুর রহমান তাদের মেধাবী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ শিক্ষার্থী। এমন অসাধারণ সাফল্য তাদের গর্বিত করে। তারা জানান, দক্ষ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত অনুশীলন ও মনোযোগী চর্চার কারণেই এত কম সময়ে হিফজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষকদের আশা, মাদ্রাসার অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও দ্রুত সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করবে এবং কুরআন হিফজে নতুন উদাহরণ গড়ে তুলবে।
নাটোর নুরে মদিনা মডেল মাদরাসার প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মুফতি নূরনবী সিরাজী বলেন, ‘এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত। আর মারুফের ভেতরের ভালোবাসা, শৃঙ্খলা ও মেধার ফল। কোরআনের প্রতি তাদের অনুরাগ, নিষ্ঠা আর শৃঙ্খলাই এত কম সময়ে হিফজ সম্পন্নের প্রধান কারণ।’
মারুফ ও আব্দুর রহমান দুজনেই তাদের নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের ফলে মাত্র অল্প সময়ে ৩০ পারা কুরআন হিফজ সম্পন্ন করেছে। তাদের সাফল্য মাদ্রাসা, পরিবার ও নাটোরের মানুষের জন্য গর্বের বিষয় এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
- নাজমুল হাসান/এমআই

