Logo

সারাদেশ

অনন্য স্থাপত্যের ‘চাবি বাড়ি’

Icon

নির্মাণ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১০

অনন্য স্থাপত্যের ‘চাবি বাড়ি’

রাজধানী ঢাকার অদূরেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাশ নির্মিত একটি দোতলা বাড়ি। কংক্রিট, কাচ ও কাঠের সমন্বয়ে তৈরি বাড়িটির নাম ‘চাবি’; বাংলায় যার অর্থ ‘কিছু চাওয়া’। চার বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই বাড়ি। চাবি বাড়ির নকশা করে মর্যাদাপূর্ণ আর্ক এশিয়া স্থাপত্য পুরস্কার ২০২৫-এ ‘সিঙ্গেল ফ্যামিলি রেসিডেনশিয়াল প্রজেক্টস’ শাখায় স্বর্ণপদক জিতেছেন স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। 

মূলত একটি বসতবাড়ির আদলেই বানানো হয়েছে ‘চাবি’। প্রায় চার বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত এ জায়গাটি ছিল মূলত সমতল কৃষিজমি। গোটা জায়গাটি আশপাশের ভূমির তুলনায় একটু উঁচু করে স্থাপনাটি করা হয়েছে। এতে যেমন জমি কেটে কৃত্রিম সুইমিংপুল বানানো হয়েছে, তেমনি কৃত্রিম পাহাড়, পুকুরও বানানো হয়েছে। বাড়িটির একটি অংশ দাঁড়ানো পাহাড়ের ওপর। ভিতর থেকে মাটি উঁচু করে এই কৃত্রিম পাহাড়টি বানানো হয়েছে। সে পাহাড়ের ওপরে রাখা হয়েছে একটি শয়নকক্ষ বা বেডরুম।

এছাড়া বাড়িতে মোট পাঁচটি বেডরুম। নিচতলায় বেডরুম, একটি হোম থিয়েটার, একটি খাবারঘর, একটি সুইমিং পুল, একটি ব্যায়ামাগার বা জিমনেশিয়াম, একটি অতিথি রুম, রান্নাঘর ও কর্মচারীদের জন্য একটি আলাদা ঘর রয়েছে। পুরো জায়গাটির সবকিছুই প্রকৃতিকে ভেঙে মানুষের হাতে গড়া। তবু স্থপতি এখানে প্রকৃতি, মানব আবেগ এবং অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে পেরেছেন। 

বসার ঘরের পাশেই রয়েছে ছোট্ট একটি জলধারা। উপরে তার উন্মুক্ত আকাশ, যাতে শুকনো আবহাওয়ায় জলের ওপর রোদের আলো পড়ে। আবার বর্ষার দিনে আকাশ থেকে বৃষ্টিরা নেমে যোগ দেয় সেই জলধারায়। কৃত্রিম আর প্রাকৃতিকের এক অনন্য মেলবন্ধনে সূর্য বা বৃষ্টি কোনোটাকেই দূরের বলে মনে হবে না।   

দিনের আলো ঢোকার জন্য পুরো বাড়িতেই সূর্যের আলো প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বাড়িতে পাঁচটি স্নানঘর রয়েছে এবং স্নানঘরেও যেন আলো না জ্বালাতে হয়, সেজন্য একটি পাশ রাখা হয়েছে খোলা ছাদের নিচে। কেউ চাইলে স্নানঘরে দাঁড়িয়েই বৃষ্টিতে গোসল করতে পারবে। আবার চাইলে সে অংশের দরজা বন্ধ করেও রাখতে পারবে, বিশেষ করে রাতের বেলা পোকামাকড়ের ভয় যখন থাকে। বৃষ্টিতে ছাদে খোলা আকাশের নিচে যেন ভিজতে অসুবিধা না হয় তাই মেয়েদের জন্য আলাদা ভেজার জায়গা করা আছে। আকাশ আর সূর্যকে তিনি যতটা সম্ভব যুক্ত করতে চেয়েছেন। সে কারণে প্রকৃতির রূপ পাল্টানোর সাথে সাথে বাড়িটিরও রূপ পালটায়।

এছাড়াও বাড়ির পেছনে আছে একটি পুকুর। পুকুরটির পাশ দিয়ে একটি সরু অপ্রশস্ত হাঁটার পথ। ছোট এই জায়গাটি ধরে হাঁটতে থাকলে একসময় একটি বড় খোলা জায়গা চলে আসে, যা একটি সংকীর্ণ, আটকে থাকার পরিবেশ থেকে একটি খোলামেলা উন্মুক্ত পরিবেশে ঢোকার অনুভূতি দেয়। 

বাড়ির চারদিকে কংক্রিটের উঁচু দেয়াল। কিন্তু সেই দেয়াল যেন চিন্তার সূত্রে বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায় তাই পুরো বাড়িতেই দেয়ালে দেয়ালে আছে পঙক্তি। একে দেয়াল লিখনও বলা যেতে পারে। যেমন, সুখ-দুঃখের মাঝখানে ফাঁদ, বাস্তবতার নিয়মিত স্বাদ। ধনাঢ্য ও আভিজাত্যকে না ছুঁয়ে জড়বস্তুগুলোর মধ্যে কীভাবে প্রাণ নিয়ে আসা যায়, সে চেষ্টাই করে গেছেন স্থপতি।  আবার বাড়িটিতে রাখা হয়েছে দুধরনের সিঁড়ি। টানা সিঁড়ি ও জানা সিঁড়ি। যে সিঁড়ি একবারে গন্তব্যে নিয়ে গেল সেটি টানা সিঁড়ি। আর যেটি থেমে থেমে বা নিয়মিত সিঁড়িগুলোর মতো, সেগুলো জানা সিঁড়ি। সিড়িগুলো কংক্রিট আর কাঠের তৈরি। পাশে কাচের দেয়াল, যেখানে দিনে আলো আছড়ে পড়ছে। এভাবে কংক্রিট আর কাচের এক দাম্পত্য তৈরি করেছেন, যেখানে অদৃশ্য বন্ধন হিসেবে কাজ করছে কাচের দেয়াল।  আবার বাড়ির দোতলায় বেডরুমগুলো সাজানো হয়েছে মাঝে সরু লম্বা করিডোর দিয়ে। দু পাশে বেডরুম আর মাঝ দিয়ে চলে গেছে লম্বা সরু করিডোর। এ নকশাটিও তিনি করেছেন মানুষে মানুষে যোগাযোগ বা সম্পর্কের চর্চা হিসেবে।

চাবি বাড়ির আরেকটি দর্শনীয় জায়গা হলো মেমরি টেমপ্লেট বা স্মৃতি প্রতœতত্ত্ব। মাটির নিচে রাখা আছে রেডিও, ক্যাসেট প্লেয়ারের মতো বিভিন্ন পুরোনো সামগ্রী। আর উপরে প্রতিটির ওপর স্পট আলোর ব্যবস্থা আছে, সেই সাথে এক এক জায়গায় পা দিলেই বেজে উঠবে মিউজিক। অনেকটা জাদুঘরের মতো। মূলত পুরো ঘরের মেঝেতে ব্যবহার করা হয়েছে ম্যাট টাইলস। আর প্রাচীন এসব সামগ্রী দেখার সুবিধার্থে সে অংশের মেঝেতে ব্যবহৃত হয়েছে গøাস। 

আইএইচ/ 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

নির্মাণ কথা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর