নড়াইলে বনচারিণী পূজায় প্রদর্শিত হচ্ছে অর্ধশতাধিক মূর্তি
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৭
ভক্তি, মানত আর লোকজ বিশ্বাসে ভর করে নড়াইলের রুখালী গ্রামে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বনচারিণী পূজা। মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে তিন দিনব্যাপী এই বারোয়ারি আয়োজনকে ঘিরে গ্রামজুড়ে শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। এ বছর পূজা মণ্ডপে প্রদর্শিত হচ্ছে অর্ধশতাধিক দেব–দেবীর মূর্তি। পূজা উপলক্ষে নড়াইলসহ আশপাশের জেলা থেকে হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে।
এ অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে বনচারিণী পূজা কেবল ধর্মীয় আচার নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই পূজায় অংশ নিলে মনের আশা পূরণ হয় এবং সংসারে মঙ্গল আসে।
অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক প্রভাষ কুমার সিকদার বলেন, ‘বনচারিণী পূজার ইতিহাস প্রায় সাড়ে তিনশ বছরের পুরোনো। লোককথা অনুযায়ী, এক সময় গ্রামের বৈরাগী পরিবারের কয়েকজন সদস্য সুন্দরবনে কাঠ কাটতে যান। তাদের একজন সাধক প্রকৃতির গভীরে অলৌকিক ঘটনার সম্মুখীন হন। ধ্যানে বসে তিনি নৌকায় স্বয়ং মা কালিকে দর্শন করেন। পরে মায়ের নির্দেশে গ্রামের বটগাছের নিচে ফুল দিয়ে বার্ষিক পূজার সূচনা হয়। সেই সময় থেকেই পূজার আগে কবিগান আয়োজনের রীতি চালু রয়েছে।’
পূজা দিতে আসা পার্বতী সরদার বলেন, ভাইয়ের দুর্ঘটনার পর মানত করেছিলাম। সে এখন সুস্থ। মানত পূরণ করতেই এবার মূর্তি এনে পূজা দিতে এসেছি।
দর্শনার্থীরা বলেন, ‘উপবাস রেখে অনেকে এখানে পূজা দিতে আসে।। প্রতিবছর দূরদূরান্ত থেকেও অনেক মানুষ মানত নিয়ে এখানে আসেন।’
সংগীতা বিশ্বাস বলেন, ‘এটি আমার মামাবাড়ি। ছোটবেলা থেকেই এখানে পূজা দেখতে আসি। এখানকার পরিবেশ আলাদা রকমের ভালো লাগে। বনচারিণী মা জাগ্রত। পূজা ও কবিগান শুরু হলে আত্মীয়স্বজনে পুরো এলাকা ভরে যায়। এটি আমাদের কাছে বার্ষিক পার্বণের মতো ‘
পূজার আয়োজক রুখালী বারোয়ারি মন্দিরের সভাপতি প্রশান্ত বিশ্বাস জানান, ‘বনদেবী বনচারিণী মায়ের এই পূজাকে কেন্দ্র করে এ বছর অর্ধশতাধিক প্রতিমা এসেছে। সারারাত ধরে পূজা চলবে। তিন দিনব্যাপী আয়োজনে প্রথম দিন পূজা এবং পরের দুই দিন কবিগান অনুষ্ঠিত হবে। অগ্রহায়ণ ও মাঘ মাসের যে কোনো মঙ্গলবার পূজার পর কবিগান আয়োজনের দীর্ঘদিনের রীতি রয়েছে। দেশের খ্যাতনামা কবিয়ালরা এখানে গান পরিবেশন করেছেন। চারণ কবি বিজয় সরকারও একসময় এই পূজায় কবিগান পরিবেশন করেন এবং পূজার বেদি নিজ হাতে নির্মাণ করেছিলেন।’
কৃপা বিশ্বাস/এনএ

