Logo

সারাদেশ

কুমিল্লার গোমতীর পাড় এখন পর্যটকদের নজরে

Icon

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২০

কুমিল্লার গোমতীর পাড় এখন পর্যটকদের নজরে

পড়ন্ত বিকেল। ঘড়িতে তখন বেলা ৩টা। কুমিল্লার গোমতী নদীর পাড় ধরে মানুষের আনাগোনা বাড়তে শুরু করে। সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলতে না হেলতেই এই ভিড় জনসমুদ্রে রূপ নেয়। রাত ১০টা পর্যন্ত চলে ভ্রমণপিপাসু মানুষের এই আড্ডা। শান্ত নদী, খোলা আকাশ আর নির্মল বাতাস; সব মিলিয়ে কুমিল্লার গোমতীর পাড় এখন স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের মানুষের কাছে এক প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলার জায়গা। স্থানীয়রা বলছেন, একটু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটিই হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র।

জমে ওঠা বিকেলের আড্ডা ও রসনা বিলাস

নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে গোমতী নদী ধারণ করে এক শান্ত ও মায়াবী রূপ। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় করেন নদীর দুই পাড়ে। পর্যটকদের এই আনাগোনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা গড়ে তুলেছেন জমজমাট ব্যবসা। নদীর পাড় ঘেঁষে বসেছে সারি সারি দোকানপাট, হোটেল ও রেস্তোরাঁ।

সেখানে মিলছে ধোঁয়া ওঠা চা-কফি থেকে শুরু করে নানা পদের ফাস্টফুড। তবে ভোজনরসিকদের মূল আকর্ষণ কক্সবাজারের আদলে তৈরি ‘লাইভ ফিশ বারবিকিউ’। নদীর পাড়ে বসে খোলা হাওয়ায় মাছের বারবিকিউ যেন ভ্রমণপিপাসুদের দিচ্ছে সমুদ্র সৈকতের আমেজ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পর্যটকদের আগমনে তাদের ব্যবসা বেশ ভালো চলছে এবং তারা খুশি মনে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

ঐতিহ্য ও প্রকৃতির মেলবন্ধন

গোমতী নদী শুধু একটি জলাধার নয়, এটি কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যের ডুমুর নামক স্থান থেকে উৎপত্তি হয়ে এই নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ অংশে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীটি কুমিল্লার সদর দক্ষিণ, কোতোয়ালি, ময়নামতি, কোটবাড়ি, বুড়িচং, মুরাদনগর ও দেবীদ্বারসহ বিভিন্ন জনপদকে সজীব করে মেঘনা নদীতে মিশেছে।

কৃষিকাজ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং মানুষের জীবিকায় গোমতীর অবদান অপরিসীম। বর্ষায় কখনো কখনো রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেও শীতের শুরুতে নদীটি হয়ে ওঠে শান্ত ও স্নিগ্ধ। নদীর তীরে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা ও গ্রামীণ জীবনধারার চিত্র, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

পর্যটন কেন্দ্র করার দাবি ও সম্ভাবনা

কুমিল্লা শহরের উত্তর অংশে অবস্থিত এই নদীর পাড় দিন দিন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন যদি গোমতীর পাড়কে ঘিরে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তবে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিতে পারে।

স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, নদীর তীরটিকে ঘিরে একটি আঞ্চলিক শিশুপার্ক বা বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। এছাড়া নদীতে পর্যটকদের জন্য নিরাপদ নৌ-ভ্রমণের ব্যবস্থা এবং শিশুদের জন্য মৌসুমী পার্ক তৈরি করা হলে এটি যেমন বিনোদনের খোরাক জোগাবে, তেমনি সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।

পর্যটন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথ উদ্যোগে গোমতীর পাড়কে পরিকল্পিতভাবে সাজালে তা থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এটিকে একটি পর্যটকবান্ধব জোন হিসেবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

স্থানীয়রা স্বপ্ন দেখছেন, অবহেলায় পড়ে থাকা গোমতীর পাড় খুব শীঘ্রই সরকারি সু-নজরে আসবে এবং কুমিল্লার পর্যটন মানচিত্রে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে স্থান করে নেবে।

আইএইচ/ 


প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর