মায়ের স্বপ্ন সত্যি হলো : হেলিকপ্টারে আসলেন বর-কনে, পালকিতে বরণ
শেখ আবু তালেব, বাগেরহাট
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৪২
ছবি : বাংলাদেশের খবর
মায়ের আজীবনের অপূর্ণ স্বপ্ন ছিল হেলিকপ্টারে করে পালকিতে শ্বশুরবাড়ি আসা। নিজের জীবনে তা না পারলেও বড় মেয়ের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন বাগেরহাটের এক মা। এমনই এক আয়োজনের সাক্ষী হলো বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন।
ফয়েজ স্টেজ মাঠে হেলিকপ্টারে নবদম্পতির আগমন ঘিরে তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। জড়ো হন হাজার হাজার নানা বয়সী মানুষ। ফয়েজ স্টেজের মালিক নাহিদুর জামান রাজুর বড় মেয়ে মেহেনাজ জামান শীথির সঙ্গে পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার বাসিন্দা ও ব্যাংক কর্মকর্তা মেজবা আহমেদের বিবাহোত্তর প্রথম শ্বশুরবাড়ি আগমন ছিল চোখ ধাঁধানো।
ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে নবদম্পতি ফয়েজ স্টেজ মাঠে অবতরণ করলে মুহূর্তেই সেখানে জড়ো হন উৎসুক জনতা। এরপর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী পালকিতে করে নববধূ ও বরকে ঘরে তোলা হয়। চারপাশে মিষ্টি বিতরণ, করতালি আর মোবাইল ক্যামেরার ঝলকানিতে রূপ নেয় এক আনন্দঘন উৎসবের।
নবদম্পতি জানান, বাবা-মায়ের কাছ থেকে এত বড় একটি সারপ্রাইজ পাবো—এটা কখনো বুঝতে পারেননি। তারা পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসীর কাছে দোয়া চান।
মা ইসমাত জাহান জানান, ‘আমার জীবনে একটা স্বপ্ন ছিল হেলিকপ্টারে করে পালকিতে শ্বশুরবাড়িতে আসব। সেই সুযোগ আমার ভাগ্যে হয়নি। কিন্তু আল্লাহ যেন সেই স্বপ্ন মুছে না দেন, তাই আমার বড় মেয়ের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন পূরণ করলাম। আজ মেয়েকে ও জামাইকে হেলিকপ্টারে করে বাড়িতে আনতে পেরেছি, পালকিতে করে ঘরে তুলেছি—এই আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আলহামদুলিল্লাহ।’
বাবা নাহিদুর জামান রাজু বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ও একটি ছেলে। ছেলে ব্যাংকে চাকরি করে। আমার স্বপ্ন ছিল মেয়ের জামাইকে স্বাগত জানাতে পুরো গ্রাম এক হয়ে আনন্দ করুক। আজ যেভাবে মানুষ এসেছে, হাসিমুখে অংশ নিয়েছে, একজন বাবা হিসেবে আমি সত্যিই গর্বিত ও আনন্দিত।’
মেয়ের চাচা শেখ মিনারুজ্জামান বলেন, ‘এ আয়োজন শুধু একটি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের পারিবারিক সম্মান ও ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। একদিকে ঐতিহাসিক পালকি, অন্যদিকে হেলিকপ্টারে নবদম্পতির আগমন—এই দৃশ্য আমাদের খানপুর ইউনিয়নের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
স্থানীয় সোহেল রানা বলেন, ‘টিভি বা ইউটিউবে বড় শহরের বিয়েতে হেলিকপ্টার দেখি। কিন্তু নিজের গ্রামে, নিজের মাঠে হেলিকপ্টার নামতে দেখা আমাদের জন্য গর্বের। এটা প্রমাণ করে গ্রামও এখন পিছিয়ে নেই।’

খানপুর ইউনিয়নের প্রবীণ বাসিন্দা আলী হোসেন (৬৫) বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বহু বিয়ে দেখেছি, কিন্তু এমন ঐতিহাসিক পালকিতে বরণ আর হেলিকপ্টারে আগমন জীবনে এই প্রথম দেখলাম। এটা শুধু একটি পরিবারের আনন্দ নয়, পুরো ইউনিয়নের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
নারী সমাজের প্রতিনিধি রেহেনা বেগম বলেন, ‘পালকিতে বরণ মানে সম্মান, মর্যাদা আর ভালোবাসা। একজন মা তার মেয়েকে সেই সম্মানে ঘরে তুলেছেন—এটা আমাদের চোখে পানি এনে দিয়েছে।’
কলেজছাত্র নাহিদ হাসান বলেন, ‘হেলিকপ্টারের শব্দ, পালকির দোল, মানুষের হাসি আর মায়ের তৃপ্তির চোখ—সব মিলিয়ে এই আয়োজন শুধু একটি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি এক মায়ের স্বপ্ন পূরণের গল্প।’
এআরএস

