চট্টগ্রাম বন্দরে স্থগিতাদেশ কাটিয়ে নতুন করে বাড়তি মাশুল আদায় শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ৩০ দিনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ রোববার রাতে বর্ধিত ট্যারিফ কার্যকর করার নোটিশ জারি করেছে। এতে অবিলম্বে ২৩টি খাতে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বৃদ্ধি পেয়েছে।

বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, আপিল বিভাগের নির্দেশ কার্যকর হওয়ায় এখন আর বাড়তি ট্যারিফ আদায়ে কোনো আইনি বাধা নেই। আগে ব্যবসায়ীদের আপত্তি এবং আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে সিদ্ধান্তটি ঝুলে ছিল। বাংলাদেশ মেরিটাইম ল সোসাইটি (বিএমএলএস) ট্যারিফ বৃদ্ধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে হাইকোর্ট আদায় স্থগিত করেছিল, তবে আপিল বিভাগ সেই স্থগিতাদেশই বাতিল করেছে।

নতুন ট্যারিফ কাঠামোর সবচেয়ে বড় চাপ পড়েছে কনটেইনার পরিবহনে। ২০ ফুট কনটেইনারের মাশুল ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকায়। আমদানি–রফতানি কনটেইনারের ওঠানামায়ও কয়েক হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। পণ্য পরিবহণের প্রতি কেজিতেও বাড়তি চার্জ যুক্ত হওয়ায় আমদানি ব্যয় আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

জাহাজের ওয়েটিং চার্জ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ আরও বেশি। নির্ধারিত সময়ে জেটিতে ভিড়তে না পারলে ১২ ঘণ্টার পর চার্জ দ্বিগুণ, ২৪ ঘণ্টায় তিনগুণ, ৩৬ ঘণ্টায় চারগুণ এবং এরপর নয়গুণ পর্যন্ত দিতে হবে। পাইলটেজ চার্জ ৮০০ ডলার এবং টাগ সার্ভিসের খরচও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা মনে করছেন—দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়াবে এবং এর প্রভাব সরাসরি ভোক্তাদের ওপর পড়বে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, “অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এমন বড় সিদ্ধান্ত বাণিজ্যকে আরও চাপে ফেলবে।”

বিএমএলএস সভাপতি অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জানিয়েছেন, মূল রিট মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নতুন ট্যারিফ বহাল থাকবে। ফলে আদালতের রায় আসার আগ পর্যন্ত বন্দর ব্যবহারকারীদের বাড়তি মাশুল দিতে হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর বন্দরে আসা সব জাহাজ, কনটেইনার ও কার্গো নতুন মাশুলের আওতায় পড়বে। ব্যবসায়ীরা নতুন করে আইনি উদ্যোগ নেবেন কি না—এটাই এখন দেখার বিষয়।

এআরএস