একীভূত ৫ ব্যাংক : প্রতি ৩ মাসে তোলা যাবে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৯
একীভূত হওয়া পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে বিশেষ স্কিমের খসড়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্কিম অনুযায়ী প্রথম ধাপে একজন গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা তুলতে পারবেন। এই অর্থ দেওয়া হবে আমানত বিমা তহবিল থেকে।
এরপর যাদের আমানত দুই লাখ টাকার বেশি, তারা প্রতি তিন মাসে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে তুলতে পারবেন। তবে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের নামে নতুন অ্যকাউন্টে এ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
মূলত শরিয়াহভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক মিলে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে গত ২ ডিসেম্বর। নতুন ব্যাংকটির মূলধন ৩৫ হাজার কোটি টাকা-এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২০ হাজার কোটি, আর বাকি ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে আমানতকারীদের।
এসব ব্যাংকে বর্তমানে ৭৫ লাখ গ্রাহকের আমানত প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে ঋণ রয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা; গড়ে ৭৭ শতাংশই খেলাপি।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজ্যুলিউশন ডিপার্টমেন্টের (বিআরডি) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকদের আমানত ফেরত দিতে নতুন ব্যাংকের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে অর্থ ছাড় করেছে। তবে অর্থ প্রদান প্রক্রিয়ায় তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংকের নিজস্ব ডেটা সফটওয়্যার তৈরি করা; গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে যেন ভুল তথ্যের ভিত্তিতে ভুল গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দেওয়া হয়। এছাড়া, নতুন ব্যাংকের অধীনে আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে ওই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই অর্থ প্রদান নিশ্চিত করা।
এদিকে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়ার বৈঠক হয়। বৈঠকে একীভূতকরণ স্কিমের অগ্রগতি, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত প্রক্রিয়া এবং সংযুক্ত ব্যাংকগুলোর বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকের চেয়ারম্যান একীভূতকরণ স্কিমের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চান। গভর্নর কমিটিকে জানান যে বিভিন্ন টিমের মাধ্যমে কাজ এগিয়ে চলছে। গভর্নর বিশেষত এক্সিম ব্যাংকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বৈঠকে গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, নতুন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ফিন্যান্স ও এফআইডির দুই পরিচালক, বিআরডির নির্বাহী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া বলেন, ইনসুরেন্স ফান্ডের টাকা ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। যেহেতু গ্রাহকদের নতুন ব্যাংকের অধীনেই অর্থ প্রদান হবে, তাই সবার নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। পাঁচ ব্যাংকের পুরোনো অ্যাকাউন্টসমূহও একীভূত করতে হবে এবং ব্রাঞ্চভিত্তিক অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এসব কারণে সময় লাগছে। তবুও ডিসেম্বরের মধ্যেই গ্রাহকরা টাকা পেয়ে যাবেন বলে আশা করি।
টাকা পাওয়ার নিয়ম: গ্রাহকদের টাকা পেতে কিছু শর্ত মানতে হবে। একজন নাগরিকের নামে একই ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলে শুধুমাত্র একটি হিসাবের বিপরীতে টাকা পাওয়া যাবে। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে হিসাব থাকতে হবে। বৈধ এনআইডি দিয়ে খোলা হিসাবধারীরাই টাকা তুলতে পারবেন। একজনের পাঁচ ব্যাংকে পাঁচটি ভিন্ন হিসাব থাকলে প্রতিটি ব্যাংক থেকে আলাদাভাবে টাকা পাওয়া যাবে। তবে কোনো হিসাবের বিপরীতে ঋণ থাকলে আপাতত টাকা পাওয়া যাবে না। ঋণ সমন্বয় শেষে ফেরতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে এবং ওই অংশে সুদের হার নতুন করে ঠিক হবে।
কত টাকা তুলতে পারবেন গ্রাহকরা : কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, যেসব গ্রাহকের হিসাবে ২ লাখ টাকা বা এর কম আছে, স্কিম কার্যকর হওয়ার পর তারা পুরো টাকা একবারেই তুলতে পারবেন। আর যাদের হিসাবে ২ লাখ টাকার বেশি রয়েছে, তারা প্রতি তিন মাস অন্তর সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা করে দুই বছর পর্যন্ত তুলতে পারবেন। তবে ৬০ বছরের বেশি বয়সী গ্রাহক অথবা ক্যানসার বা জটিল রোগে আক্রান্ত আমানতকারীদের জন্য এই সীমা শিথিল রাখা হয়েছে-তারা প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণ টাকা তুলতে পারবেন।
বিকেপি/এমএইচএস

