
বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি ছিলেন এক সময়ের পরিচিত মুখ— ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন খলনায়ক ডন। পর্দায় তিনি ছিলেন ভয়ংকর, কঠোর এবং নির্মম এক চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এবার প্রশ্ন উঠছে— সিনেমার ভিলেন কি বাস্তব জীবনেও ভিলেন হয়ে উঠলেন?
চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর প্রায় ২৯ বছর পর আদালতের নির্দেশে অবশেষে দায়ের হয়েছে একটি হত্যা মামলা, আর সেই মামলার আসামির তালিকায় উঠে এসেছে ডনের নামও।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মাজহারুল ইসলাম। তিনি জানান, মামলাটি এজাহার মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে।
মামলার আসামিদের তালিকায় রয়েছেন— সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হক, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, খলনায়ক ডন, এবং আরও কয়েকজন। মোট ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও দায়ী করা হয়েছে।
এ মামলার সূত্রপাত আদালতের আদেশ থেকে। সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে ছেলের মৃত্যুকে ‘হত্যা’ দাবি করে আসছেন। তার রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে আদালত মামলাটিকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক।
সালমান শাহ ও ডনের সম্পর্ক
৯০– এর দশকের বাংলা চলচ্চিত্রে সালমান শাহ ছিলেন রোমান্স ও স্টাইলের প্রতীক, আর ডন ছিলেন তার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দুজনই একাধিক ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন। পর্দায় ডন ছিলেন সালমানের প্রতিপক্ষ, কিন্তু বাস্তব জীবনে তাদের মধ্যে ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
সালমানের ঘনিষ্ঠদের বরাত অনুযায়ী, শুটিং সেটে প্রায়ই একসঙ্গে সময় কাটাতেন তারা। এমনকি সালমান শাহর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু কঠিন সময়ে পাশে ছিলেন ডন। তাই তার নাম মামলার আসামির তালিকায় আসায় অনেকেই অবাক। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এখনই কেউ দোষী নয়— তদন্তের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসবে কে প্রকৃত অপরাধী, কে নয়।
নতুন করে জাগছে পুরনো প্রশ্ন
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালবেলায় ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় সালমান শাহর মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শুরুতে ঘটনাটি আত্মহত্যা হিসেবে দেখানো হলেও, পরিবার শুরু থেকেই এটি ‘পরিকল্পিত হত্যা’ দাবি করে আসছে।
এরপর একে একে বহু তদন্ত, প্রতিবেদন ও আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। এখন আদালতের নতুন নির্দেশনায় আবারও খোলা হচ্ছে সেই পুরোনো ফাইল।
ডন কি সত্যিই ভিলেন?
দীর্ঘ সময় ধরে সিনেমায় ‘ভিলেন’ চরিত্রে অভিনয় করলেও বাস্তব জীবনে তিনি ছিলেন শান্ত স্বভাবের মানুষ— এমনটাই বলছেন তার সহকর্মীরা। কিন্তু মামলার এজাহারে নাম উঠে আসার পর এখন প্রশ্ন উঠেছে, ‘সিনেমার পর্দায় যে ভিলেন, বাস্তবেও কি তিনি তেমনই ছিলেন?’ এই প্রশ্নের উত্তর এখন লুকিয়ে আছে তদন্তের অগ্রগতিতে।
বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সালমান শাহ শুধু একজন অভিনেতা নন— একটি যুগের প্রতীক। তার মৃত্যু রহস্য আজও পুরোপুরি উন্মোচিত হয়নি। নতুন করে মামলা দায়েরের মাধ্যমে হয়তো আবারও সামনে আসবে অনেক অজানা তথ্য, অনেক চাপা সত্য।
এখন সকলের চোখ আদালতের দিকে— সত্যিই কি সিনেমার ভিলেন বাস্তবেও ভিলেন প্রমাণিত হবেন, নাকি গল্পের মোড় ঘুরবে অন্যদিকে?
ডিআর/এসএসকে