মোসাদ সদর দপ্তরে ইরানি হামলায় নিহত ৩৬ : তেহরান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৭
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী জানিয়েছে, গত জুন মাসে ১২ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েলি হামলার দ্রুত ও নিখুঁত পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইহুদিবাদী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ৩৬ জন প্রাণ হারিয়েছিল। এছাড়া হাইফার তেলশোধনাগারও ইরানি বোমা হামলায় দু’বার অচল হয়ে পড়ে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) ইরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘পার্সটুডে’র এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
হাইফার ইসরায়েলি তেলশোধনাগার এখনও অচল হয়ে আছে বলে ইসরায়েলি কর্মকর্তারাই স্বীকার করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার (৭ ডিসেম্বর) ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী মোহাম্মাদ নায়িনি ১২ দিনের ওই যুদ্ধে ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরেন।
মোহাম্মাদ নায়িনি বলেন, ইসরায়েল তেহরানের একটি তেল ডিপোতে হামলা চালানোর পাঁচ ঘণ্টা পরই হাইফার তেলশোধনাগারে দুই দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইসরায়েল আমাদের একটি গোয়েন্দা দপ্তরে হামলা চালানোর পর আমরা মোসাদের সদর দপ্তরে হামলা চালাই। এতে ৩৬ ইহুদিবাদী দখলদার নিহত হয়।
ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষাব্যূহ ও প্রতিরক্ষা স্তরগুলো অত্যাধুনিক মার্কিন প্রযুক্তিসজ্জিত হওয়া সত্ত্বেও ইরানের লক্ষ্যভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাগুলো ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। প্রথমদিকে ইসরায়েল এসব খবর গোপন রাখার নির্দেশ দিলেও এখন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই তা স্বীকার করছেন।
জেনারেল নায়িনি বলেন, ইসরায়েলের ২০০ থেকে ২৫০টি জঙ্গিবিমান, রাডার সাইট, যুদ্ধজাহাজ ও সমন্বিত বিমান প্রতিরক্ষার স্তরগুলো— এ সবকিছুর ওপর একাধিক টার্গেটের বিরুদ্ধে নিখুঁত হামলার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ছোঁড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একটিকেও ঠেকাতে পারেনি ইসরায়েল। প্রথম দিকে তারা দাবি করেছিল যে ইরান কার্যকর পাল্টা হামলা চালাতে সক্ষম নয়; অথচ ইরানের প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রই আনুপাতিক মাত্রার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে।
তিনি ১২ দিনের যুদ্ধ চলাকালে ইরানের ‘সত্য-প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার-৩’ শীর্ষক অভিযানের প্রকৃতি তুলে ধরে বলেন, এ অভিযানটি ছিল অত্যন্ত জটিল ও সমন্বিত। এখানে ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও ড্রোন, ইলেকট্রনিক সমরাস্ত্র ও সাইবার সক্ষমতাকে বহু-ধাপ বা সিরিজ আকারে ব্যবহার করা হয়েছে সম্পূর্ণ পরিস্থিতিগত সচেতনতা নিয়ে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কার্যকর প্রয়োগের ভিত্তিতে।
জেনারেল নায়িনি আরও বলেন, এসব নিখুঁত কাজে জড়িত ছিলেন ইরানের মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চমানের প্রশিক্ষিত প্রকৌশলীরা, যাদের অনেকের বয়স ত্রিশের মধ্যে। ১২ দিনের যুদ্ধে তারা অপ্রচলিত ও বহুমুখী সংগ্রামের কৌশল প্রয়োগ করে ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
১২ দিনের ওই যুদ্ধে ইরানের অপারেশনাল, প্রযুক্তিগত ও তথ্যগত শ্রেষ্ঠত্বের দিকগুলো দৃষ্টান্তসহ তুলে ধরে জেনারেল নায়িনি বলেন, আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অবকাঠামোয় নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। যেমন, ৩২-তলা ইসরায়েলি স্টক এক্সচেঞ্জের ডাটা সেন্টার ভবনকে আমরা নিশানা করেছিলাম। দেখা গেছে, লক্ষ্যভেদী ক্ষেপণাস্ত্রগুলো হুবহু ঠিক নির্ধারিত স্থানে আঘাত হেনেছে। অর্থাৎ ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ছিল ব্যাপক। আর এটি সম্ভব হয়েছে ইরানের তরুণ সামরিক প্রকৌশলী ও ড্রোন অপারেটরদের সাহস, ত্যাগ ও নিষ্ঠার কারণে।
জেনারেল নায়িনি আরও বলেন, আমরা দেখিয়েছি- ইরানের বিরুদ্ধে যে কোনো আগ্রাসন তাৎক্ষণিক, সমানুপাতিক ও অত্যন্ত কার্যকর পাল্টা প্রতিশোধের মুখোমুখি হবে। আমাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে রয়েছে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, অসমমাত্রিক অভিযান ও জনগণের সম্পৃক্ততাকেন্দ্রিক অভিযোজনের সমন্বয়। শত্রুপক্ষের বিমান বাহিনীর অনেক বেশি পরিমাণগত শ্রেষ্ঠত্ব থাকা সত্ত্বেও ইরান মূলত ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও সাইবার সক্ষমতার ওপর নির্ভর করেই ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চাইতে বাধ্য করতে সক্ষম হয়েছে।
এমবি

