Logo

আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের হামলা নিয়ে হামাসের প্রকাশিত নথিতে যা আছে

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩:২৬

ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের হামলা নিয়ে হামাসের প্রকাশিত নথিতে যা আছে

ইসরায়েলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর চালানো হামলা নিয়ে একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের অনুমতি দিতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হামাস। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি দাবি করেছে, তারা কোনো বেসামরিক মানুষ হত্যা করেনি এবং কোনো নৃশংসতাও চালায়নি।

গত শুক্রবার প্রকাশিত ৪২ পৃষ্ঠার একটি নথিতে হামাস ৭ অক্টোবরের ঘটনার বিষয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে। নথিতে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা এবং উপত্যকাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে হামাসের দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরা হয়েছে।

প্রায় দুই বছর আগে হামাস ও অন্যান্য ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী দক্ষিণ ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালালে প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন। এ ছাড়া ২৫১ জনকে আটক করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।

নথিতে হামাস বলেছে, হামলার ঘটনাকে ঘিরে ‘পশ্চিমা গণমাধ্যম ও জায়নিস্ট লবি গোষ্ঠীগুলো’ একটি ভ্রান্ত তথ্য প্রচারণা চালিয়েছে।

হামাস আরও বলেছে, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ শিশুহত্যা ও নারীদের ধর্ষণ করা নিয়ে একের পর এক মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়েছে। এর মাধ্যমে আগে থেকেই পরিকল্পিত একটি সর্বাত্মক গণহত্যা প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ তৈরি করা হয়েছে; যার লক্ষ্য ছিল গাজাকে অস্তিত্বহীন করে দেওয়া।’

হামাস জানায়, হামলার পরপরই তারা বেসামরিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে শুরুতে ইসরায়েল সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে একটি স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতিকালে প্রায় ১০০ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে ইসরায়েল বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দীকে তাদের কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়।

হামাস আবারও আগের মতো দাবি করেছে, বেসামরিক মানুষ হত্যা করা তাদের ধর্ম, নৈতিকতা ও শিক্ষার পরিপন্থী এবং তারা যতটা সম্ভব এটি এড়িয়ে চলে।

সংগঠনটি বলেছে, তারা কোনো হাসপাতাল, স্কুল বা উপাসনালয়কে লক্ষ্য করে হামলা চালায়নি। তারা একজন সাংবাদিক বা অ্যাম্বুলেন্স কর্মীকেও হত্যা করেনি। ইসরায়েলকে তারা ভিন্ন কোনো প্রমাণ দেখানোর চ্যালেঞ্জ জানায়।

নথিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীই (২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর) দক্ষিণ ইসরায়েলের সেসব এলাকায় বোমা হামলা চালিয়েছিল, যেখানে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে সাধারণ ইসরায়েলি নাগরিকেরা মিশে ছিলেন। হামাস একে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ‘হ্যানিবাল ডিরেক্টিভ’ (নিজ দেশের নাগরিককে বন্দী হওয়া ঠেকাতে তাঁদেরসহ শত্রুকে মেরে ফেলা) নীতির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এ অবস্থায় হামাস ওই দিনের ঘটনায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানায়। পাশাপাশি গাজায় যুদ্ধসহ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে অপরাধ করেছে, সেগুলোরও তদন্ত চায়।

২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ঘোষণা করে, ৭ অক্টোবর শত শত ইসরায়েলি বেসামরিক মানুষ হত্যা এবং অনেককে জিম্মি করার অভিযোগে তারা হামাসের তিন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছে। পরবর্তী সময় এই তিন নেতাকেই ইসরায়েল হত্যা করে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধেও আইসিসি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে গাজায় অনাহারকে ব্যবহার করার মতো যুদ্ধাপরাধ এবং হত্যা, নিপীড়ন ও অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ডের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগ তোলা হয়।

‘বিস্ফোরণ ছিল অনিবার্য’

শুক্রবার প্রকাশিত ওই নথির আরেক অংশে হামাস ৭ অক্টোবরের হামলার পেছনের কারণগুলো তুলে ধরেছে।

হামাস বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূমিতে ৭৭ বছরের ইসরায়েলি দখলদারি, গাজা উপত্যকায় ১৭ বছরের অবরোধ, অসলো চুক্তি বারবার ভঙ্গ করা, দক্ষিণপন্থী উগ্রবাদের উত্থান, অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে হামলা এবং এসব ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতাই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

হামাস বলেছে, ‘আগ্রাসন ও অবরোধ চলতে থাকলে এমন বিস্ফোরণ যে অনিবার্য, সে বিষয়ে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ শক্তি বারবার সতর্ক করেছিল।’

গাজায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলমান গণহত্যায় ইসরায়েল ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করেছে। নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

হামাস ফিলিস্তিনি জাতীয় কাঠামোর সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত এবং একে আলাদা করে ফেলা সম্ভব নয়—বলা হয়েছে নথির উপসংহারে।

আইএইচ/ 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ফিলিস্তিন ইসরায়েল যুদ্ধ হামাস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর