Logo

জাতীয়

খাদ্যে দূষণ রোধে জরুরি উদ্যোগের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৩

খাদ্যে দূষণ রোধে জরুরি উদ্যোগের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

দেশের খাদ্যপণ্যে দূষণ ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, খাদ্যদূষণ এখন জাতীয় সংকটে রূপ নিয়েছে, যা শিশু থেকে প্রবীণ— সবাইকে আক্রান্ত করছে। সংকট মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক ও সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক শনাক্ত ও জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা। 

বৈঠকে কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও প্রাণিসম্পদ খাতের উপদেষ্টা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইউনূস বলেন, ‘খাদ্যে বিভিন্ন দূষণের অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা জানি। আমাদের সন্তান, বাবা-মা, আপনজন সবাই এর ভুক্তভোগী। নিজেদের স্বার্থেই এখনই কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে।’ তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে খাদ্যদূষণ প্রতিরোধে কার্যকর কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে নির্দেশ দেন।

বৈঠকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ উদ্বেগজনক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে জানায়—

  •  বিশ্বে প্রতি বছর খাদ্যবাহিত রোগে ৬০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়, বাংলাদেশে আক্রান্ত হয় ৩ কোটি শিশু।
  •  খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত প্রতি তিন শিশুর একজন মৃত্যুবরণ করে।
  •  পরীক্ষার ফল অনুযায়ী, ১৮০টি নমুনার মধ্যে ২২টিতে অতিরিক্ত মাত্রায় সীসা শনাক্ত হয়েছে।
  •  গবেষণায় পানি ও মাছের নমুনায় ৩০০ ধরনের ওষুধ, ২০০ ধরনের কীটনাশক ও ১৬ ধরনের পিএফএএস পাওয়া গেছে।
  •  ইউনিসেফের জরিপ অনুযায়ী, দেশে সাড়ে তিন কোটি শিশু সীসা সংক্রমণে আক্রান্ত।

খাদ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, ভারী ধাতু, কীটনাশক, তেজস্ক্রিয়তা এবং জৈব দূষক— এই চার ধরনের দূষণ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি তৈরি করছে। শিশুদের হাড় নরম হওয়ায় সীসা দ্রুত মস্তিষ্কে পৌঁছে মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। গর্ভবতী নারীদের পাঁচ শতাংশের শরীরেও সীসার সংক্রমণ পাওয়া গেছে।

পোল্ট্রি ও কৃষিখাতে অনিয়ন্ত্রিত ওষুধ ও রাসায়নিক ব্যবহারের বিষয়টি বৈঠকে বিশেষভাবে উঠে আসে। কর্মকর্তারা জানান, অনেক খামারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পর নির্ধারিত সময় পূর্ণ হওয়ার আগেই মুরগিকে বাজারজাত করা হয়, যা মানবদেহে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশের ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু চোরাগোপ্তা খামার কর্তৃপক্ষের নজরদারি এড়িয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।

খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে গিয়ে আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক সময় উপেক্ষা করছি। জনসচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

বৈঠকে খাদ্যে সীসার পরিমাণ শনাক্তে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব ব্যবহার করে সমন্বিত গবেষণার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি উদ্যোগগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

প্রধান উপদেষ্টা

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর