১৭ মাস ধরে বন্ধ দেশের একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর, নষ্ট হচ্ছে দুষ্প্রাপ্য নিদর্শন
ডিজিটাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:২৭
ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার দুর্লভ সংগ্রহ নিয়ে খুলনা নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র গণহত্যা জাদুঘরটি ১৭ মাস ধরে বন্ধ পড়ে আছে। ২০২৪ সালে প্রায় ৩২ কোটি টাকায় নির্মিত আধুনিক ভবনটি উদ্বোধনের মাত্র এক মাস পরই সংস্কারকাজ ও কারফিউর কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আন্দোলন-অস্থিরতায় জাদুঘরের প্রধান ফটক ভাঙচুরের পর নিরাপত্তার জন্য টিন–বাঁশ দিয়ে মুখ বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সেই তালা আর খোলা হয়নি।
জাদুঘরের ভেতরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ১৯২ ধরনের নিদর্শন— শহীদদের চিঠি, পোশাক, ডায়েরি, রাজাকার ক্যাম্পের নির্যাতনের সরঞ্জাম, ব্যবহৃত অস্ত্র এবং সাড়ে তিন শতাধিক ঐতিহাসিক ছবি। আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে ১০ হাজারের বেশি ছবি ও দুই হাজারের মতো ভিডিওসহ বহু দুষ্প্রাপ্য নথি। দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকায় এসব নিদর্শনের অনেকটাই নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে।
জাদুঘর–সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাঙা ফটক মেরামতের জন্য গণপূর্ত বিভাগে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুদানও বন্ধ থাকায় পরিচালনাগত সংকট দেখা দিয়েছে। শুরুতে আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা ও আর্থিক সংকট মিলিয়ে পুরো জাদুঘর কার্যত অচল হয়ে আছে।
২০১৪ সালে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের উদ্যোগে ‘১৯৭১ : গণহত্যা–নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ গড়ে ওঠে খুলনায়। শেরেবাংলা রোডের একটি ভাড়া বাড়িতে শুরু হলেও ২০১৫ সালে সরকার সাউথ সেন্ট্রাল রোডে জমিসহ বাড়ি বরাদ্দ দেয়। পরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গণপূর্ত অধিদপ্তর ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে। দেশে এবং এশিয়ায় এ ধরনের জাদুঘর এটিই প্রথম।
গত বছর জাদুঘরটি খোলা থাকাকালে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের সবচেয়ে আকৃষ্ট করত প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের লেখা দুই লাইনের চিঠি— যেখানে স্ত্রীর উদ্দেশে লেখা ছিল, ‘জোহুরা, পারলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সাথে মিশে যেয়ো।’ একই সঙ্গে জাদুঘরের প্রবেশমুখে রাখা প্লাটিনাম জুট মিলের বয়লারটি মুক্তিযুদ্ধের বর্বরতার সাক্ষ্য বহন করে, যেখানে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। এখন বয়লারটির সামনেও জমেছে আগাছা, গ্যালারির পাশে রাখা টেরাকোটা পড়ে আছে অযত্নে।
আর্কাইভ ও ট্রাস্টি সম্পাদক ডা. বাহারুল আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে অনুদান বন্ধ। জাদুঘর চালুর বিষয়ে আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলেছি, কিন্তু তেমন সাড়া পাইনি।’ তিনি জানান, বছরে ৬০–৬৫ লাখ টাকা পরিচালন ব্যয় হলেও এখন কোনো উৎস থেকে অনুদান মিলছে না।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের খুলনা মহানগর কমান্ডার মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘জাদুঘরটি জাতীয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে সরকারিভাবে পরিচালনা করা উচিত। কিছু বিতর্ক থাকলেও জনস্বার্থে এটি দ্রুত খুলে দেওয়া জরুরি।’
খুলনার জেলা প্রশাসক আ স ম জামশেদ খোন্দকার জানান, ‘আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
দেশের একমাত্র গণহত্যা জাদুঘরটি কবে আবার খুলবে— এমন প্রশ্নে উদ্বেগ বাড়ছে মুক্তিযুদ্ধপ্রেমী মানুষদের মধ্যে।
এমএইচএস

