২০১৩ সালে বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯২ ম্যাচ খেলেছেন জামাল ভূঁইয়া। এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে খেলেছেন ৬ ম্যাচ। কিন্তু এই ৬ ম্যাচের কোনোটিতেই জেতেনি বাংলাদেশ। এবার অন্তত সেই গেরো খুলতে চাইছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। জামালের চোখে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্কোয়াড। তাই এবার ভারতকে হারানোর সুযোগও দেখছেন তিনি, ‘আমরা যে অবস্থায় আছি এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্কোয়াড। তাই অবশ্যই আমাদের একটা বড় সুযোগ আছে।’
আজকের ম্যাচ জন্য অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরুর ৬ মিনিটেই শেষ হওয়া ম্যাচটির গ্যালারির চিত্রটা কেমন হতে পারে, তা অনুমেয়। ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ-ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের দর্শকভরা গ্যালারি জয়ের প্রতীক্ষায় থাকবে। হামজা-শামিতদের পায়ে বল গেলে গ্যালারিতে আওয়াজ উঠবে। বল হারালে ভিন্ন চিত্রও দেখবেন ফুটবলাররা। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সেটা ভালো করেই জানেন।
গতকাল ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জামাল ভূঁইয়া পরিষ্কারই বলেছেন, ‘এটা একটা ইমোশনাল ম্যাচ। এই ম্যাচের পর জাতীয় দলের লম্বা একটা গ্যাপ আছে। আমরা যদি বছরটা জয় দিয়ে শেষ করতে পারি, তা শুধু আমাদের খেলোয়াড়দের জন্য নয়, সমর্থক ও আপনাদের সবার জন্যই ইতিবাচক হবে। তাই আমার জন্য ম্যাচটি আবেগের, একই সঙ্গে মস্তিষ্ক ব্যবহার করে খেলতে হবে। আমি জানি এ ম্যাচে অনেক ফ্রিকিক হবে, ফাউল হবে, হলুদ কার্ড হবে। এমনকি গালাগালও হবে। সবই আমি স্বভাবিকভাবে নেবো। কারণ, এই ম্যাচের তাৎপর্য আমি জানি।’
জামাল ভূঁইয়া বাংলাদেশের জার্সিতে লাল-সবুজ জার্সিতে খেলছেন ১২ বছর ধরে। তারও ১০ বছর আগে সর্বশেষ ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এই ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল ভারত। ফুটবল অঙ্গনে এখন ২২ বছর ধরে ভারতকে হারাতে না পারার আফসোস। হামজা, শামিতদের নিয়ে কি দীর্ঘ প্রতীক্ষার জয়টি আসবে? জামাল ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আমাদের এই দলটি বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী। তাই অবশ্যই আমাদের একটা বড় সুযোগ আছে।’
হামজার ৬ ম্যাচের চার গোলের দুটিই জামালের অ্যাসিস্ট থেকে। এটাকে অধিনায়ক সৌভাগ্য হিসেবেই দেখছেন। আর হামজার চার গোলের মধ্যে বাইসাইকেল কিকে করা গোলটিকে আলাদা করেই রাখছেন অধিনায়ক, ‘এটা আমার দেখা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা গোল।’
জামাল এখন একাদশে নিয়মিত নন। যখনই মাঠে নামেন, হামজার সাথে ভালো একটা বোঝাপড়া তৈরি হয় তার। সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জামাল বলেছেন, ‘হামজা বিদেশ থেকে এসেছেন আমার মতো। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া খুব ভালো। হামজার যখনই কোনো সমস্যা হয়, আমাকে টেক্সট করেন বা কল করেন। ফুটবল নিয়ে কোনো জানার থাকলে আমি হামজাকে জিজ্ঞেস করি। সো এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা মাঠের বাইরে থেকেই শুরু হয়েছে।’
*দুই দলই করেছে ক্লোজডোর অনুশীলন। গত রোববার অনুশীলন করা ভারতীয় ফুটবল দলের জন্য ছিল নিরাপত্তাবলয়। ক্লোজডোর হওয়ায় বাংলাদেশ কিংবা ভারতের মিডিয়া সেশন ছিল না। তাতে অবশ্য সংবাদ মাধ্যমের আগ্রহের কমতি ছিল না। বিশেষ করে খালিদ জামিলের দলকে অনুসরণ করতে দেখা গেছে অনেক সংবাদ মাধ্যমকে। জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের আগে অনুশীলন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই গোপনীয়তা করছে ভারতীয় ফুটবল দল।
প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে ম্যাচটি যেমন আবেগের, তেমনি করে আছে প্রতিদ্ব›িদ্বতার ঝাঁজ। দুই দলই এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে। তাতে কমেনি বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের উত্তাপ। সবুজ গালিচায় হামজা চৌধুরী-শমিত সোমদের বিপক্ষে খেলতে মুখিয়ে আছেন গুরপ্রিত সিংহ-সন্দেশ জিংগানরা। তাই তো দুই দলের কাছে এই ম্যাচটি শুধুই একটি ম্যাচ নয়।
শিলংয়ে গত মার্চে অনুশীলন মাঠ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যে খেলা খেলেছিল ভারতীয়রা, হোমগ্রাউন্ডে বাংলাদেশ তা করেনি। ফিফা-এএফসির নিয়মের মধ্যেই সবকিছু করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। নিয়ম অনুযায়ী অতিথি দল ম্যাচ ভেন্যুতে অনুশীলন করবে খেলার আগের দিন। সেই হিসেবে ম্যাচ ভেন্যু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ শেষ প্রস্তুতি সারবে ভারত। খালিদ জামিল অবশ্য তাঁর দলের সবকিছুই ক্লোজডোরে করছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য ১৩ নভেম্বর ভুটানের বিপক্ষে যে ম্যাচ খেলেছিল, তা ছিল ক্লোজডোরে। সেই খেলায় ভারত জিতেছিল ৬-১ গোলে। একই দিন ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ২-২ গোলে ড্র করে নেপালের সঙ্গে।
বিকেপি/এমবি

