• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
 পোশাকে লাল-সবুজ

পোশাক : তন্দ্রাবতী, ছবি : পূর্বা

জীবনধারা

পোশাকে লাল-সবুজ

  • প্রকাশিত ২৭ মার্চ ২০২২

লাল-সবুজ রঙের আদলে তৈরি পোশাকে তরুণ-তরুণীরা নিজেদের রাঙিয়ে তোলে দেশপ্রেমের চেতনায়। দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ পোশাকের নকশায় ফুটিয়ে তুলেছেন ডিজাইনাররা। স্বাধীনতা দিবসের পোশাক-অনুষঙ্গ সম্পর্কে জানিয়েছেন ডিজাইনাররা। লিখেছেন—অরণ্য সৌরভ

লাল-সবুজ আমাদের পতাকার রঙ, স্বাধীনতার প্রতীক। বাঙালির আবেগ, ভালোবাসা, হাসি-কান্না ঘিরে যে শব্দগুলো রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম স্বাধীনতা। দেশীয় ফেব্রিকের নিপুণ ছন্দবদ্ধতায় আবেগ, প্রেম ও ভালোবাসার এক বন্ধনের প্রেক্ষাপট হাজির করেছেন দেশিয় ফ্যাশন ডিজাইনাররা। বাঙালির সম্মুখে মেলে ধরেছেন ভিন্নমাত্রার নতুন আঙ্গিকে রূপায়িত বাংলার এক ফ্যাশন, যা বাঙালির মনকে ছুঁয়ে যায় চেতনায় ও দেশপ্রেমে। এভাবেই ফ্যাশনে বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতি আর দেশাত্মবোধের স্ফুরণ হয়ে উঠেছে লক্ষণীয়।

স্বাধীনতার চেতনা বহনের জন্য পোশাক উপযুক্ত মাধ্যম বলে মনে করেন জাদুর বাক্সের মেহবুব জাদু। তিনি বলেন, ‘রঙের মাধ্যমেই আমরা আনন্দ-বেদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারি। এক্ষেত্রে আমরা স্বাধীনতার পোশাকে আমাদের পতাকার রঙ লাল-সবুজের ব্যবহার করেছি। আর সুতার কাজ দিয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরেছি।’

‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে স্বাধীনতার মাসে আমাদের লাল সবুজের আয়োজনে রয়েছে ‘আমিই বাংলাদেশ’ ডিজাইনের পোশাক। মূলত মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের গল্পকে আঁকড়ে ধরেই ডিজাইন করা।’ বলছিলেন তন্দ্রাবতীর স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান।

তন্দ্রাবতীর স্বত্বাধিকারী মাসুদা তাসনীম তরী বলেন, ‘ফ্যাশন হোক গর্বের। আমাদের জাতীয় পতাকার লাল সবুজ ধারণ হোক আমাদের হূদয়ে। সেই ধারণ, চেতনা এবং দেশপ্রেম পোশাকে ধারণ করে আমি আমার ইতিহাস স্মরণ করি, আমাদের ত্যাগ অর্জন সবটা স্মরণ করি।’ বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতার গৌরব এবং সৃজনশীল শিল্পের স্বাধীনতা এ দুয়ের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধাবোধ। বিশ্বরঙের ফ্যাশনের মূল ভাবনা গড়ে উঠেছে দেশীয় আত্মপরিচয়কে ঘিরেই। স্বাধীনতা দিবসের পোশাকগুলো ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, দায়িত্ব ও মূল্যবোধ থেকেই করেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বরঙ দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে পোশাকের নকশায়।’

নকশায় বৈচিত্র্যের বিন্যাস

দেশীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান এসেছে ডিজাইনের অনুষঙ্গ হিসেবে। কাজের মাধ্যম হিসাবে প্রাধান্য পেয়েছে টাই-ডাই, ব্লক, বাটিক, অ্যাপলিক, কাটওয়ার্ক, স্ক্রিন ইত্যাদি। টি-শার্টে রয়েছে বাংলাদেশের পতাকার গ্রাফিক্যাল ফর্মের নান্দনিক উপস্থাপনায় টাইফোগ্রাফি, ক্যালিওগ্রাফির সমন্বয়। স্বাধীনতার পোশাকে বাংলাদেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ছবি, লেখা, কবিতার পিক্ত ফুটিয়ে তুলেছেন ডিজাইনাররা। তন্দ্রাবতীর স্বত্বাধিকারী মাসুদা তাসনীম তরী বলেন, ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি, সুফিয়া কামালের একাত্তরের ডায়েরী আর মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের লেখা বাংলাদেশের তারিখ বইগুলো থেকে তথ্য সাজিয়ে আমাদের আমিই বাংলাদেশ।’

‘শাড়িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন উক্তি বুকের ওপর ধারণ করে বজ্রমুষ্ঠির সঙ্গে স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলনের ছবিটি আঁচলে এঁকেছি।’ যোগ করেন তন্দ্রাবতীর স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান।

বিশ্বরঙের আয়োজনে ‘বাংলাদেশ’ লেখা সংবলিত টি-শার্ট থাকছে। যা স্বাধীনতার মাস ছাড়াও সারা বছরই লাল সবুজ ফ্যাশন সচেতনের ফ্যাশন ভাবনা, দেশপ্রেমী মনের পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে পারে। এভাবেই বলছিলেন বিশ্বরঙের ডিজাইনার বিপ্লব সাহা।

পোশাকের মূল রং

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশ্বরঙের লাল-সবুজের উৎসব আয়োজনে দেশীয় রং, দেশীয় কাপড়কে মূল উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। পোশাকগুলোতেও সুতি ও খাদি কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। পোশাকে মূল রং হিসেবে সাদা, লাল, সবুজ ও টিয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নকশায় সবুজের বিভিন্ন শেড, সাদা, টিয়া, গোল্ডেন হলুদ সহযোগী রং হিসেবে বেছে নিয়েছে। অনেকেই লাল-সবুজের পাশাপাশি সাদা, কালো, হলুদ, নীল, কমলা ইত্যাদি রঙের সংমিশ্রণের পোশাকও স্বাধীনতা উৎসবে নিয়ে এসেছেন।

সংগ্রহে যা থাকছে

স্বাধীনতা দিবসের লাল-সবুজের পোশাক সংগ্রহে তাঁতের শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ-দোপাট্টা, সিঙ্গেল কামিজ, সিঙ্গল ওড়না, কাপল ড্রেস, কুর্তা, টপস, শার্ট ব্যান্ডানা, স্কার্ফ লেডিস ফতুয়া, লেডিস পাঞ্জাবি, লেডিস প্যান্ট, শার্ট, ফতুয়া, শিশুদের শার্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও ক্যাপ থাকছে। এছাড়া স্বাধীনতার উৎসবে রয়েছে জুয়েলারি, মেয়েদের ব্যাগ, পার্স ও উপহার সামগ্রী হিসাবে নানা ডিজাইনের মগ।

অনুসঙ্গ

পোশাকের সঙ্গে ওড়না, ব্যান্ড, ব্যাগ বা অলঙ্কারেও থাকা চাই লাল-সবুজের ছোঁয়া। বিপ্লব সাহা বলেন, শাড়ির সঙ্গে বাহারি ডিজাইনের ব্লাউজ পরতে পারেন। হাতায় গলায় লেস বসানো বা ভিন্ন রঙের পাইপিন বেশ মানিয়ে যাবে। লাল-সবুজ শাড়ি পরতে না চাইলেও একরঙা শাড়ির সঙ্গে লাল-সবুজের সংমিশ্রণে ব্লাউজ বেশ মানাবে। এক্ষেত্রে সাদা, ঘিয়া কিংবা কালো শাড়ির সঙ্গে মানানসই লাল কিংবা সবুজ ব্লাউজের হাতায় লেস বসানো হলে দেখতে আরো সুন্দর লাগবে।

রঙ বাংলাদেশের সৌমিক দাস বলেন, লাল-সবুজের আরামদায়ক সালোয়ার-কামিজ বা লম্বা কুর্তিও বেছে নিতে পারেন। এক্ষেত্রেও উঁচু গলা ও লম্বা হাতা মানানসই হবে। সঙ্গে গাঢ় সবুজ রঙের সালোয়ার, ওড়না থাকতে পারে। পোশাকে লাল-সবুজ রাখতে না চাইলেও রাখুন ওড়না, স্কার্ফ ও গহনায়।

দরদাম

তন্দ্রাবতীর শাড়ি ২৬৭১ টাকা, পাঞ্জাবি ১৩৭১ টাকা এবং কুর্তি ১০৭১ টাকা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে সংঘটিত হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের সেই সালের কথা স্মরণ করেই দামে ৭১ কোডটা ব্যবহার করেছেন। মহিলাদের পোশাক ৫০০-২৫০০ টাকা, পুরুষদের পোশাক ৮০০-২০০০ টাকা আর শিশুদের পোশাক ৩০০-১২০০ টাকার মধ্যে কেনা যাবে।

 

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads