• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
বেড়েছে দাফনের চাপ

সংগৃহীত ছবি

মহানগর

বেড়েছে দাফনের চাপ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৪ এপ্রিল ২০২১

‘কী এক রোগ আইলো, খালি মানুষ মরতেছে। ধনী-গরিব কেউই এই মরার রোগ থেকে রেহাই পাইতেছে না। গেল কয়েক মাসে মানুষ মরার সংখ্যা যেন বাইড়া গেছে। তবে এইখানে করোনায় মইরা যাওয়া রোগীদের তেমন একটা কবর দেওয়া হয় না।’ করোনায় মৃত্যু নিয়ে এমন অভিব্যক্তি জানালেন মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে ২৪ বছর ধরে কবর খোঁড়া ও দাফনের কাজ করা মো. দুলাল মিয়া।

দুলাল এই কবরস্থানে পেশা শুরু করেন ১৯৯৭ সালে। তবে তার পরিবার দুই পুরুষ ধরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কাজ করে আসছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারের বেশি মানুষকে দাফন করেছেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে দুলাল বলেন, ‘মানুষ মইরা গেলে এবং এখানে কবর দিতে আসলে আমাদের আয়-ইনকাম হয়। কবর খোঁড়া থেকে শুরু করে দাফন পর্যন্ত আমরা এই কবরস্থানে প্রায় ১০০ জনের মতো কাম করতাসি। কবর খোঁড়া আর দাফন নিয়া আমাদের কোনো চাহিদা নাই। মানুষ খুশি হইয়া যে যা দেয়, দিনশেষে তা লইয়া আমাদের খুশি থাকতে হয়। মানুষ খুশি হইয়া হাজার-পনেরো শ টাকা কবরপ্রতি দিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে বর্তমানে দাফনের সংখ্যা বাইড়্যা যাওয়ায় আমাদের ইনকাম একটু বেড়েছে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় পাঁচটি কবরস্থান রয়েছে। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বুদ্ধিজীবীদের দাফনের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের দাফন করা হয়। বর্তমানে করোনার কারণে তাদের বিভিন্ন কবরস্থানে বেড়েছে দাফনের চাপ। সাধারণত করোনার মৃত কাউকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় না। তবে করোনায় মারা গেছেন এমন কারো আত্মীয়স্বজনের পুরনো কবর থাকলে কেবল সেই কবরে তাকে দাফন করা হয়।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, এই কবরস্থানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দাফন হয়েছে ১৬৭ জনের। ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১৪৯টি। মার্চে এসে সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭৬ জনে। আর এপ্রিলের ১৯ তারিখ পর্যন্ত কবর হয়েছে ১৬৯ জনের।

মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সিনিয়র মহোরার সানোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে বেড়ে গেছে লাশ দাফনের সংখ্যা। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জনকে দাফন করা হতো, বর্তমানে দাফনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিদিন গড়ে ১১ থেকে ১২ জনের মতো। তিনি বলেন, এখানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের তেমন একটা দাফন করা হয় না। তবে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশনা থাকলে এখানে কবর দেওয়া হয়। দাফন করতে হলে প্রয়োজন হয় মৃত্যুসনদ, যাতে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যায় বলে জানান তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে যাদের বাবা-মা কিংবা পরিবারের সদস্যরা সমাহিত রয়েছেন, বর্তমানে তাদের পরিবারের কোনো সদস্য করোনায় মারা গেলে, তাদের ওই সব কবরে দাফন করা হচ্ছে।

তিনি জানান, বর্তমানে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রায়েরবাজার কবরস্থানে ১০০ একর জায়গা কবর দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাদের সেখানে কবর দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী সিটি করপোরেশন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads