• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
সব করোনা রিকশায়!

সংগৃহীত ছবি

মহানগর

সব করোনা রিকশায়!

  • গাজী শরীফ মাহমুদ
  • প্রকাশিত ২৫ এপ্রিল ২০২১

‘রাস্তায় নামলে প্রাইভেটকারের জন্য রিকশা চালানো যায় না। কই তাদের তো পুলিশ ধরে না? সব দোষ রিকশাওয়ালাদের? আমরা কি করোনা ছড়াই? সব করোনা রিকশায়?’ ক্ষোভের সাথেই এসব কথা বলছিলেন রাজধানীর মিরপুর এলাকার রিকশাচালক আব্দুল মালেক।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ঘোষিত লকডাউনে আব্দুল মালেকের মতো দেশে আরো অনেক রিকশাচালক পড়েছেন বিপাকে। পথে বের হলেই পুলিশের তোপের মুখে পড়ছেন। আবার দুয়েকদিন রিকশা না চালালে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রিকশা গ্যারেজে শত শত রিকশা সারিবদ্ধ হয়ে গ্যারেজে পড়ে থাকতে দেখা যায়। গ্যারেজ মালিকরা জানান, যাদের পাঁচশ রিকশা আছে তারা প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টির বেশি রিকশা রাস্তায় বের করতে পারছে না। বাকিগুলো গ্যারেজে পড়ে থাকছে। এতে চালকরা যেমন আর্থিক অনটনে আছেন তেমনি রিকশাগুলো যন্ত্রাংশেরও ক্ষতি হচ্ছে।

গ্যারেজ মালিক মোখলেসুর রহমান বলেন, এখানে পাঁচটি গ্যারেজ আছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ রিকশা আছে। আমার গ্যারেজে রিকশা আছে ৩৫টি এবং চালক আছে ৭০ জন। লকডাউনে রিকশা না চালাতে পেরে বেশিরভাগ চালক বাড়িতে চলে গেছে আর যারা আছে তারা খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করছে। বর্তমানে আমার দুইটি রিকশা রাস্তায় বের হচ্ছে। যাত্রী নেই কোনো।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, রাস্তায় গেলে পুলিশে ধরে রিকশাগুলোকে উল্টিয়ে রাখে। রেকারের বিল বাবদ দুই থেকে তিনটি রিকশা কাছ থেকে একসাথে আদায় করছে বারোশো টাকা। রিকশা ধরলে ছাড়াতে লাগছে ৪০০ টাকা অথচ ১০০ টাকাও আয় করতে পারছে না চালকেরা।

মোখলেসুর রহমান বলেন, যেখানে চালকদের গ্যারেজ মালিকদের প্রতিটা রিকশা বাবদ ১০০ টাকা দেওয়ার কথা সেখানে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে দিচ্ছে। তারপরও নিজেদের খরচও তুলতে পারছে না এরা।

এই গ্যারেজ মালিক জানান, প্রতিদিন একটি গ্যারেজের নিয়মিত কিছু খরচ আছে। ম্যানেজারের বেতন, কারেন্ট বিল, জায়গা ভাড়া, পানির বিল, মিস্ত্রি খরচ সবমিলিয়ে প্রতিমাসে কম করে হলেও ৫২ থেকে ৫৫ হাজার টাকা খরচ। অথচ আয় নেই। আয় না থাকলেও ব্যয় বন্ধ নেই। তাদের অভিযোগ, কেউ তাদের দুঃখ-কষ্ট দেখতে আসে না।

আরেকটি গ্যারেজ মালিক রশিদ আলী বলেন, আমাদের হিসেবে ঢাকা শহরে পাঁচ লাখের ওপরে রিকশা আছে। একটা রিকশার জন্য দুইজন করে চালক। সে হিসেবে অনন্ত ১০ লাখ লোক ঢাকায় রিকশা চালায়। এদের মধ্যে এখন পেটের দায়ে অল্পকিছু লোক রিকশা চালাচ্ছেন। যারা রিকশা চালাচ্ছেন তারও ঠিকমতো ভাড়া পাচ্ছে না। ফলে জমার টাকাও দিতে পারছেন না অনেকে। তবে বেশিরভাগ চালক বাড়ি চলে গেছেন।

রিকশাচালক সাইদুল বলেন, ‘টিভির খবরে দেখি সরকার কত জায়গায় সাহায্য-সহযোগিতা করতেছে। ত্রাণ দিচ্ছে। আমরা কী দোষ করেছি? আমাদের জন্য তো কেউ এককেজি চালও নিয়ে আসে না।’

চালক টিটুল বলেন, ‘রাস্তায় যাত্রী কম, রিকশা নিয়ে বের হলে যাত্রীরাও এখন কম ভাড়া দেয়। যে কয় টাকা আয় করি সারাদিনে তা নাস্তা করতেই শেষ হয়ে যায়। মালিককেও ঠিকমতন টাকা দিতে পারি না। এরপর অনেক সময় পুলিশ আমাদের রিকশা আটকে রাখে। টাকা দিতে পারি না রিকশাও ছাড়ে না। অনেক সময় রিকশা না নিয়ে ফিরে আসতে হয় মালিকের কাছে।’

এদিকে চলমান সর্বাত্মক লকডাউনে বিপাকে পড়েছেন গোপালগঞ্জের শ্রমজীবী মানুষেরা। কাজের খোঁজে বাইরে বের হলেও পুলিশি বাধায় কাজ করতে পারছেন না তারা। ফলে এক প্রকার কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবারের ভরণপোষণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের।

কথা হয় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চাপাইল গ্রামের রিকশাচালক মফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানালেন, তার সংসারে রয়েছেন বয়স্ক মা, স্ত্রী আর ১০ বছর বয়সি এক ছেলে ও ৬ মাস বয়সি এক মেয়ে। সরকার ঘোষিত প্রথম দফায় লকডাউন রিকশা নিয়ে বের হননি তিনি। কিন্তু সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় ৫ জনের সংসার চালাতে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন তিনি। রাস্তায় লোকজন না থাকায় ভাড়া কম হওয়ায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের।

গোপালগঞ্জ জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউনের কারণে গোপালগঞ্জে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। পেটের তাগিদে বাইরে বের হলেও পুলিশি বাধার মুখে পড়ছেন তারা। জেলা শহরের পুলিশ লাইন থেকে পাচুরিয়া পযর্ন্ত অন্তত ৬টি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে পুলিশ। এসময় তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

তাদের মতো একই অবস্থা দোকান কর্মচারীদের। দোকানপাট বন্ধ থাকায় কাজ করতে পারছেন না তারা। এতে দোকান মালিকদের কাছ থেকে বেতন তো দূরের কথা আর্থিক সহযোগিতাও পাচ্ছেন না। ফলে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে তাদের।

সদর উপজেলার চর সোনাকুড় গ্রামের রিকশাচালক ইবাদুল মোল্যা বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে বাইরে বের হলে এখন আর ভাড়া পাচ্ছি না। আগে যেখানে ৮’শ টাকা রোজগার করতাম সেখানে এখন দু’শ টাকাও রোজগার করতে পারছি না। এতে সাংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’

সদর উপজেলার কংশুর গ্রামের মিরাজ ফ‌কির বলেন, ‘আমার সংসারে ৮ জন লোক। রিকশা নিয়ে বাইরে বের হলে পুলিশ বাধা দিচ্ছে। এতে রিকশা চালাতে পারছি না। ফলে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়।’

দোকান কর্মচারী সুশান্ত সাহা বলেন, ‘সংসারে তিনজন রয়েছে। দোকান মালিক দোকান খুলতে না পারায় দোকানে যেতে পারছি না। এতে বেতনও পাচ্ছি না। এখন পযর্ন্ত কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি। লকডাউন তুলে দোকান খুলে দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানাই।’

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জানান, লকডাউন ঘোষণার পর এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলায় ৬ হাজার ৬৬২টি পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জিআর পেয়েছি ৩৫ হাজার পরিবারের জন্য ৫’শ টাকা করে এবং ভিজিএফ এসেছে ৮৯ হাজার ৩৬৩ পরিবারের জন্য ৪৫০ টাকা করে। আজ থেকে এ বরাদ্দগুলো যেন মানুষের কাছে পৌঁছে যায় তার কাজ শুরু করা হয়েছে।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads