• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

মহানগর

পানির নিচে সড়ক দুর্ভোগে নগরবাসী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৫ জুলাই ২০২১

রাজধানীতে গতকাল সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে নগরীর অলিগলি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বেশিরভাগ সড়ক তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর পানি জমেছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির পানির সঙ্গে ডাস্টবিন ও সুয়ারেজের পানি মিশে একাকার হয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। পানিতে আটকা পড়ে অনেক বাহন বিকল হয়ে পড়েছে।  নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

দুই সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, মেট্রেরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন এলাকায় পানি জমেছে। আর ভারি বর্ষণ হলে তিন ঘণ্টার বেশি সময় পানি জমে থাকে। তারা একে সহনীয় মাত্রা নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এ সমস্যা সমাধানে তিন মেয়াদে তিনটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

বৃষ্টিতে যেসব এলাকা তলিয়ে গেছে সেসব এলাকার নগরাসীকে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেনেজ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ডিএসসিসি। এছাড়া নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে বলে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. খায়রুল বাকের গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের এলাকায় ৫৩টির মতো স্থান চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা কমানো হয়েছে। বাকিগুলোতে কাজ চলছে। এ জন্য নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা তিন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রথম স্বল্পমেয়াদি, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করে জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সফলতাও দেখা যাচ্ছে। আর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আশা করি জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবেন।’

টিকা নিতে বিএসএমএমইউ কনভেনশন সেন্টারে যাচ্ছিলেন গুলশানের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আফজাল হোসেন। পথ ভুল করে মিন্টু রোড হয়ে বিএসএমএমইউতে যাচ্ছিলেন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে জলাবদ্ধতা দেখে গাড়ি থেকে ছাতা মাথায় নেমে যান। জানতে চান কনভেনশন সেন্টারটি কোথায়। এ সময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত উন্নয়নের কথা শুনি অথচ ফাইভস্টার হোটেলের সামনের রাস্তায় সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে যায়। এগুলো কি সরকারের চোখে পড়ে না?’

ধানমন্ডির বাসিন্দা সামছুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে ওষুধ কেনার জন্য বের হয়েছি। কিন্তু বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমেছে। বৃষ্টি চলে যাওয়ার পরও পানি কমছে না।’

লকডাউনের সঙ্গে মৃষলধারে বৃষ্টি যেন ব্যবসায়ীদের জন্য ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। গত কদিন টুকটাক বেচাকেনা হলেও গতকাল ছিল ব্যবসায়ীদের সর্বনাশের দিন। ভোর থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে কারওয়ানবাজারে জমেছে হাঁটু পানি। তাতে ক্রেতা না আসায় কষ্টের মাত্রা বেড়েছে ব্যবসায়ীদের।

কারওয়ানবাজারে সরেজমিন দেখা যায়, পানি জমে যাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে শতাধিক ব্যবসায়ীকে দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। আবার যে কজন দোকান খোলা রেখেছেন, তাদের অনেকের মালামাল ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। সকালে ক্রেতার আশায় বসে থাকলেও বাজারমুখী হননি কেউ। ব্যবসায়ীরা অনেকেই গল্প করছেন, কেউবা মোবাইলে গেমস খেলে, গান গেয়ে সময় কাটাচ্ছেন। দু-একটি দোকানে এক-দুজন ক্রেতা থাকলেও তাদের দামাদামিতে সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা গেছে। ক্রেতার পানে চেয়ে ব্যবসায়ীরা সময় গুনছেন।

মুরগির ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, বেলা ১১টা পর্যন্ত দোকান বসাতে পারিনি। ১২টার দিকে পানির মধ্যেই দোকান সাজিয়েছি। কিন্তু এখনো কোনো বিক্রি হয়নি।

মসলা ব্যবসায়ী নিলয় বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বিক্রি হলেও আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত ৪০০ টাকাও বিক্রি হয়নি। সকালের নাস্তাটাও পর্যন্ত করতে পারিনি। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। আজ তো ভারি বৃষ্টি হয়েছে, হাঁটু পানি জমেছে।

কম্বল বিক্রেতা মিনহাজ বলেন, বৃষ্টিতে আমাদের কয়েকটি কম্বল ভিজে গেছে। বৃষ্টির কারণে দোকান সাজাতেই পারিনি। এক টাকাও বিক্রি হয়নি।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই এই এলাকার পানি জমে থাকে। আমরা অনেকবার বলেছি কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আমাদের সর্বনাশ হচ্ছে। যেদিন বৃষ্টি হয় সেদিন ব্যবসা হয় না। কোনো আয় হয় না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads