• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মহানগর

চট্টগ্রামের জশনে জুলুসে লাখো মুসল্লির ঢল, বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দাবি

  • রাহাত মামুন, চট্টগ্রাম সংবাদদাতা
  • প্রকাশিত ২১ অক্টোবর ২০২১

চট্টগ্রামের জশনে জুলুসে লাখো মানুষের অংশগ্রহণ, হামদ-নাত আর দরুদে মুখর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী জশনে জুলুস। এবার প্রথমবারের মতো জুলুসে নেতৃত্ব দিয়েছেন হজরতুল আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মজিআ)।

গতকাল বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল পৌনে ৯টায় নগরের মুরাদপুর আলমগীর খানকাহ্-এ-কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে বের হয় পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবীর (স.) জশনে জুলুস।

জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন সড়ক হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট ঘুরে পুনরায় মুরাদপুর বিবিরহাট প্রদক্ষিণ করে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন জুলুস ময়দানে ফিরে আসে জুলুসটি। এরপর মাহফিল শুরু হয়। সব শেষে করোনামুক্তি ও বিশ্বশান্তির জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হবে। জুলুসকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে নগরজুড়ে। জুলুসের পতাকা, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, তোরণে সেজেছে নগরের মোড়, সড়কদ্বীপ ও সড়ক বিভাজক।

প্রতিবছরের মতো এবারও জুলুসের শৃঙ্খলা রক্ষায় ভোর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি আনজুমান সিকিউরিটি ফোর্স, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এসি (বায়েজিদ) মো. শাহ আলম বলেন, জুলুসকে ঘিরে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত আছেন। আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন জুলুস শুরুর আগে সাংবাদিকদের বলেন, আল্লামা তৈয়ব শাহ (র.) ৭৪ সালে এ জুলুসের প্রবর্তন করেন। আমরা এ জুলুস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের এবারের বার্তা হচ্ছে মানুষের প্রতি ভালোবাসা। করোনাকালে আপনারা দেখেছেন গাউসিয়া কমিটি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে করোনায় মারা যাওয়া রোগীদের দাফন কাফন ও সৎকারে সহযোগিতা করে আসছে।

আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন বলেন, দেশ, জাতির উন্নতি, বিশ্ব শান্তি ও করোনামুক্তির জন্য দোয়া করা হবে জুলুসের মোনাজাতে। গাউসিয়া কমিটির অ্যাডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতেয়ার বলেন, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও জুলুস সফল করার জন্য আমরা পীরভাই, সুন্নি জনতা, প্রশাসন, আইনশৃংখলা বাহিনীসহ সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

১৯৭৬ সালে আল্লামা তৈয়ব শাহ (র.) বাংলাদেশে আসেন এবং জুলুছের নেতৃত্ব দেন। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ বছর তাঁর নেতৃত্বেই জুলুছ চলে। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩২ বছর আল্লামা তৈয়ব শাহ’র (র.) বড় সাহেবজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ’র নেতৃত্বে জুলুছ চলমান থাকে। এ জুলুছে নেতৃত্ব দেবেন আল্লামা তাহের শাহ’র ছোটভাই আল্লামা সাবির শাহ (ম.জি.আ)। তিনি গত শনিবার আরব আমিরাত হয়ে সিরিকোট দরবার থেকে বাংলাদেশে আসেন। গত রবিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত জসনে জুলুছে নেতৃত্ব দেন।

গাউসিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এড. মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার জানান, সুদীর্ঘ সময়ে জুলুছের ব্যাপ্তি বেড়েছে। লোক সমাগমও বেড়েছে। ১৯৭৪ সালে মাত্র হাজারখানেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান নিয়ে শুরু হওয়া জুলুছ ৪৯ বছরের ইতিহাসে এখন চট্টগ্রামেই শুধু ৪০ লাখের অধিক মানুষের সমাবেশ ঘটে।
তিনি এ জুলুছকে বিশ্বের সবৃবৃহত্তম ধর্মীয় র‌্যালি তথা জসনে জুলুস হিসেবে বিবেচনা করে, একে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্ব ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ)’ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করেন।

এ জুলুস সম্প্রীতির বার্তা বয়ে আনবে দেশে। জুলুস ও মাহফিলকে ঘিরে মুরাদপুর থেকে জামেয়া পর্যন্ত বই, টুপি, তসবিহ, মেসওয়াক, পাঞ্জাবি, স্যান্ডেল, মোবাইল ফোনের সরঞ্জাম, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads