• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মহানগর

বইয়ের বোঝা বাড়াচ্ছে দেশের কেজি স্কুলগুলো

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ জানুয়ারি ২০২২

রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাঙেরছাতার মতো গড়ে উঠছে শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ছোট-বড় সব শহর এমনকি মফস্বলেও আজকাল কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কোচিং সেন্টারের দেখা মিলছে অহরহ। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রি-প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলছে। অথচ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই নেই প্রাথমিক (ডিপিই) কিংবা মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অনুমোদন। অনেকাংশে নেই মানসম্মত শিক্ষার অনুকূল পরিবেশও।

এই স্কুলগুলোতেই পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বাইরে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে বাড়তি বই। এতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের কাঁধে বাড়ছে বইয়ের বোঝা। বাড়তি বইয়ের জন্য অভিভাবকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে কাড়ি কাড়ি অর্থ। আবার নিজেদের অনুমোদন না থাকায় অন্য কোনো স্কুল থেকে জেএসসি ও এসএসসির রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। করোনাকালীন এ ধরনের অনেক স্কুল নানা সংকটে বন্ধ হলেও এখনো চালু আছে, সারাদেশে এমন স্কুলের সংখ্যা অর্ধলাখ।

রাজধানীর বকশিবাজার মোড়ে তেমনই একটি স্কুলের নাম অগ্রগামী শিশু নিকেতন। প্রতিষ্ঠানটির নার্সারিতে মোট আটটি বই পড়ানো হয়। এগুলোর মধ্যে একটি সরকারি; বাকি সব স্কুল কর্তৃপক্ষ পাঠ্য হিসেবে নির্বাচন করেছে। এসব বই বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে এক হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি বছর বছর পোশাক পরিবর্তন করে, যেন একই পোশাক কোনো শিক্ষার্থী এক বছরের বেশি পরতে না পারে। এ বছর নতুন পোশাক বাবদ ৯৫০ টাকা আর ভর্তি ও জানুয়ারি মাসের বেতন বাবদ নেওয়া হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ছয় হাজার টাকার কোনো রসিদ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

শুধু এ প্রতিষ্ঠানটিই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুলগুলোতে শিশুদের কাঁধে তুলে দেওয়া হচ্ছে বইয়ের বোঝা। করোনার দিনগুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। গত সেপ্টেম্বরে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও কেজি স্কুলের দিকেই ঝোঁক অভিভাবকদের। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ভেবে অভিভাবকরা তাদের শিশুসন্তানদের হাতেখড়ি দিতে মূলধারার স্কুলে যাওয়ার আগে ভর্তি করাচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানে। এ সুযোগে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের বইয়ের বোঝা বাড়িয়ে কেজি স্কুলগুলো নানা উপায়ে আদায় করছে কাড়ি কাড়ি টাকা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফজলে রাব্বি হলের সামনে অবস্থিত অগ্রগামী শিশু নিকেতন প্রতিষ্ঠানের সামনে কথা হয় এক অভিভাবকের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করে এ অভিভাবক বলেন, ‘বুঝেনই তো, বাচ্চা (সন্তানকে) ভর্তি করেছি। তাই জিম্মি। কিছু বলতে পারছি না। চার বছরের বাচ্চার আটটি বই পাঠ্য করেছে। এর মধ্যে সাতটিই স্কুল থেকে বিক্রি করা হচ্ছে।’

এসময় হাতে থাকা ব্যাগ থেকে এসব বই বের করে দেখান তিনি। সেখানে নার্সারির শিশুদের জন্য ‘সোনামণিরা লেখা শেখো, প্রথমভাগ’, ‘অগ্রগামী শিশু নিকেতন: ম্যাথ প্রাকটিস’, ‘লার্নিং বেসিক ইংলিশ’, ‘ছড়ায় ছন্দে প্রথম পাঠ’, ‘লেটস স্টার্ট ইংলিশ রাইটিং’, ‘ফান অ্যান্ড লার্ন নার্সারি’, ‘অগ্রগামী শিশু নিকেতন: লেটস কালার নার্সারি’ নামের বইগুলো দেখা যায়। সঙ্গে কিছু খাতাও রয়েছে। এসব বই-খাতা কিনতে প্রত্যেক অভিভাবককে গুনতে হচ্ছে এক হাজার ৭০০ টাকা। এ অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলার সময় আরও কয়েকজন অভিভাবক এগিয়ে এসে স্কুলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াসার জমি দখল করে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে। সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানটি স্বাভাবিকভাবেই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নিয়ম মেনে চলার কথা। অথচ প্রতিষ্ঠানটির কোনো ধরনের অনুমোদনই নেই। নেই মাউশির নিয়ন্ত্রণও। এ প্রসঙ্গে স্কুলের অধ্যক্ষ রোমেল বলেন, শিশু শ্রেণিতে আটটি বই দেওয়া হলেও তা একদিনে পড়ানো হয় না, এগুলো বছরজুড়ে পড়ানো হয়। এটি শুধু আমাদের স্কুলেই নয়, অন্যান্য কেজি স্কুলেও এসব বই দেওয়া হয়। ফলে আমরা অন্যায় কিছু দেখছি না। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন লেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো আমাদের অধীনে নয়। সেগুলোর ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণও নেই। সেসব প্রতিষ্ঠানে কি করে কীভাবে চলে তা আমরা জানতে পারি না। ফলে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও থাকে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads