বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৭ মার্চ ২০১৮

মুনাফার তুলনায় অতিরিক্ত লভ্যাংশ

ধারাবাহিকভাবে কমছে ডিএসইর নিট সম্পদমূল্য


প্রকৃত মুনাফার তুলনায় শেয়ারহোল্ডাররা বেশি লভ্যাংশ নেওয়ায় ধারাবাহিকভাবে কমছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নিট সম্পদমূল্য। গত তিন বছরে ডিএসই কর্তৃপক্ষ তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। এ সময় নিট মুনাফার তুলনায় গড়ে ৪৩ শতাংশ বেশি অর্থ লভ্যাংশ হিসেবে নিয়েছেন শেয়ারহোল্ডারা। ফলে আয়ের তুলনায় লভ্যাংশ বেশি নেওয়ায় গত তিন বছরে ডিএসইর নিট সম্পদমূল্য কমেছে ২৯৭ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে।

২০১৫ সালে ডিএসইর নিট সম্পদমূল্য ছিল ২ হাজার ১০৬ কোটি টাকা, যা সবশেষ হিসাব বছরের লভ্যাংশ বিতরণ শেষে ১ হাজার ৮০৯ কোটি টাকায় নেমে আসবে। মুনাফার তুলনায় লভ্যাংশের হার বেশি হওয়ায় ২০১৭ সালের ৩০ জুন শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) নেমে এসেছে ১০ টাকা ৩ পয়সায়, যা ২০১৫ সালে ছিল ১১ টাকা ৬৮ পয়সা। এ হিসাবে গত তিন বছরে ডিএসইর প্রতিশেয়ারে এনএভি কমেছে সাড়ে ৮ শতাংশ।

মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা বিন্যস্তকরণের (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) অলাভজনক প্রতিষ্ঠান থেকে মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় ডিএসই। এরপর মোট তিনবার লভ্যাংশ নিলেন ডিএসইর শেয়ারহোল্ডাররা। বর্তমানে ডিএসইর পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ১ হাজার ৮০৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের হিসাবে ডিএসইর মোট শেয়ার সংখ্যা হচ্ছে ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০।

২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময়ে ডিএসইর নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ সময় ডিএসইর নিট মুনাফা হয়েছে ৩৭৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর এ সময় প্রতিবছর শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ায় ব্যয় হয়েছে ৫৪১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর ফলে পুঞ্জীভূত মুনাফা (রিটেইন্ড আর্নিংস) থেকে ১৬২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা মুনাফা হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে। এতে পুঞ্জীভূত মুনাফার তহবিল ধারাবাহিকভাবে কমে ৫ কোটি টাকায় নেমে আসবে। অবশ্য ২০১৭ সালের লভ্যাংশ অনুমোদন হলেও তা এখনি বিতরণ হয়নি।

পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে লভ্যাংশ নেওয়া আইনবহির্ভূত নয়। কোনো বছরে যদি কোম্পানির নিট মুনাফার পরিমাণ কমে যায়, তাহলে লভ্যাংশের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অনেক কোম্পানিই পুঞ্জীভূত মুনাফার তহবিল ব্যবহার করে থাকে। তবে ধারাবাহিকভাবে এ তহবিল থেকে মুনাফা দেওয়ায় কোম্পানির সম্পদমূল্য কমে আসে, যা ডিএসইর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। আর সম্পদমূল্য কমে যাওয়ায় ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী অংশের শেয়ারের দরও কমবে।

২০১৭ সালের ৩০ জুন হিসাব বছরের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে দেওয়া সম্পদমূল্যের ওপর ভিত্তি করে সাংহাই ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত চীনা জোট ডিএসইর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের দর ২২ টাকায় কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সম্পদমূল্যে পরিবর্তন হলে শেয়ারদরেও পরিবর্তন হবে- এমন শর্ত রাখা হয়েছে। ২০১৭ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ অনুমোদন হওয়ায় ডিএসইর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য এক টাকা কমে যাবে। ফলে ডিএসইর শেয়ারদর এক টাকা কমে ২১ টাকায় প্রস্তাব দিতে পারে চীনা জোট। এ হিসাবে ডিএসইতে চীনা জোটের বিনিয়োগ অন্তত ৪৫ কোটি টাকা কমে যেতে পারে বলে ডিএসই সূত্রে জানা গেছে।

২০১৫ সালে ডিএসইর নিট মুনাফা হয় ১৩৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর এ সময় শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ হিসেবে নিয়েছেন ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বেশি। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ লভ্যাংশ তারা বেশি নিয়েছেন। একইভাবে ২০১৬ সালে ডিএসইর নিট মুনাফা হয় ১১৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর এ সময় লভ্যাংশ হিসেবেও ১৮০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা নেন শেয়ারহোল্ডাররা। এ সময় আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত ৬০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে নেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে ১২৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়। এ বছরও ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের অনুমোদন হয়েছে বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম)। এ লভ্যাংশ বিতরণ করতে হলে পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে ৫৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা নিতে হবে। এতে ডিএসইর পুঞ্জীভূত মুনাফা নেমে আসবে ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকায়, যা ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ছিল ২৪৮ কোটি টাকা।

২০১৭ সালের ৩০ জুন হিসাব বছরে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডিএসইর আয়ের বড় অংশই এসেছে ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত থেকে। এ সময় ডিএসইর মোট রেভিনিউ ছিল ২০৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যার মধ্যে ৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকার আয় আসে বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত থেকে প্রাপ্ত সুদ ও সিডিবিএল থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ থেকে। ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন ব্যাংকে ডিএসইর ৮৯১ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রয়েছে। আর বন্ডে বিনিয়োগ রয়েছে ৭০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে ডিএসইর স্থায়ী আমানত ছিল ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।

২০১৭ সালে ডিএসইর শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয় ৬৯ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৬৬ পয়সা। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে লেনদেন থেকে ডিএসইর আয় আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে বিভিন্ন ফি বাবদ আয়ও বেড়েছে। তবে এ সময় সুদ ও লভ্যাংশ আয় ২০১৬ সালের তুলনায় ১৮ শতাংশ কমেছে। সব মিলিয়ে ২০১৭ সালে ডিএসইর আয় হয় ২০৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। তবে এ সময় ডিএসইর পরিচালন ব্যয়ও বেড়েছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১