বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৬ মে ২০১৮

ডিসিসিআইয়ের প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলন

লাভজনক প্রকল্প এডিপিতে নয় পিপিপিতে বাস্তবায়নের দাবি

মতিঝিলের ডিসিসিআই ভবনে এক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ছবি- বাংলাদেশের খবর


লাভজনক প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) না করে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) মাধ্যমে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

গতকাল শনিবার মতিঝিলের ডিসিসিআই ভবনে এক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

সংগঠনটি বলেছে, মুনাফা করা সহজ হবে না-এমন প্রকল্পগুলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) রাখতে। আর দ্রুত সময়ে বিনিয়োগ উঠে আসার সম্ভাবনা থাকা অবকাঠামো প্রকল্পগুলো পিপিপিতে বাস্তবায়ন করা উচিত। এর মাধ্যমে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগ আসবে বলে মনে করে ডিসিসিআই।

এ সময় আগামী অর্থবছরের (২০১৮-১৯) বাজেটে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকার পিপিপি বোর্ড গঠন করলেও তাতে বেসরকারি প্রতিনিধি নেই। পিপিপি মডেল কার্যকর করতে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা ও চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রতিনিধিকে পিপিপি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

আবুল কাসেম খান বলেন, অবকাঠামো খাতের দুর্বলতার কারণে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসছে না। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির দুই অঙ্কে নিয়ে যেতে হলে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের বিকল্প নেই। ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে হলে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। কিন্তু সরকারের কিছু নিয়মের কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ব্যবস্থা এবং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে এ বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়াও বেসরকারি খাতে স্বল্প মেয়াদে ঋণ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আসছে না। অবকাঠামো খাতে এ সঙ্কট দূর করতে বিশেষ অবকাঠামো ব্যাংক প্রতিষ্ঠারও দাবি জানিয়েছে ডিসিসিআই।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক করিডোরের উন্নয়ন করতে হবে। বর্তমানে দুই মহানগরীর মধ্যে চার লেনের সড়ক রয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এ মহাসড়ক আট লেনে উন্নীতের কাজ শেষ করতে হবে। এ করিডোরের উন্নয়ন করা গেলে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। পতেঙ্গা, মিরসরাই, মাতারবাড়ি এবং বে-কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি শুরু হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সঙ্গে মিলিয়ে এলএনজির দাম না বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে বাড়ানো উচিত। তা না হলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে এবং শিল্প খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। এলএনজি খাতে আগামী বাজেটে সরকারকে ভর্তুকি দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ঢাকা শহরের যানজট নিরসরে স্বল্প মেয়াদে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে ডিসিসিআই।

এ প্রসঙ্গে আবুল কাসেম খান বলেন, গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য কর আরোপ করলে ঢাকা শহরে গাড়ির চাপ কমবে। এ ছাড়াও কোন নাম্বরের গাড়ি কোন দিন রাস্তায় নামবে তা নির্ধারণ করে দিলেও যানজট কমে যাবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ডিসিসিআই কখনো কালো টাকা সাদা করার পক্ষে নয়। অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে যে টাকা আয় করা হচ্ছে সে বিষয়ে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে অপ্রদর্শিত আয় বেশি জরিমানা দিয়ে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া ভালো।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা করা আর মোট আয় পাঁচ লাখ টাকা হলে ৫ শতাংশ কর ধার্যের প্রস্তাব দেয় ডিসিসিআই। এ ছাড়া ৭ লাখে ১০ শতাংশ, ৯ লাখে ১৫ শতাংশ এবং ১১ লাখ টাকা হলে ২০ শতাংশ হারে কর ধার্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১১ লাখের বেশি আয় থাকলে ২৫ শতাংশ কর ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবনায় ডিসিসিআই আগামী অর্থবছরে করপোরেট কর হার ৫ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়াও পর্যায়ক্রমে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭ শতাংশ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০ শতাংশ করপোরেট কর কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।

নিট সম্পদের পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে শূন্য হারে সারচার্জ আরোপের পাশাপাশি ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ নির্ধারণের আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। সামাজিক, আর্থিক ও অন্যান্য সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ট্যাক্স কার্ডধারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুবিধা প্রদান এবং করদাতাদের কর প্রদানের হারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ছয়টি শ্রেণিতে ট্যাক্স কার্ড প্রবর্তনের আহ্বান জানান তিনি।

এ ছাড়া ভ্যাট আদায়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান প্যাকেজ ভ্যাট বলবৎ রাখা এবং টার্নওভার করের সীমা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য করবান্ধব নীতিমালার কোনো বিকল্প নেই।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১