বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৮

জাতীয় চরিত্র জনচরিত্র ও নেতৃত্ব

জাতীয় চরিত্র কোনো অপরিবর্তনীয় ব্যাপার নয় আর্ট : রাকিব


তুলনামূলক বিচারে বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাস গৌরবজনক নয়। বিদেশি এবং দেশি অনেক পর্যবেক্ষকই বাঙালিকে বিশেষিত করেছেন ঈর্ষাপরায়ণ, পরশ্রীকাতর, আত্মকলহ পরায়ণ, ভাবালু, কর্মকুণ্ঠ, ইন্দ্রিয়পরবশ, কোপন স্বভাব, চক্রান্তকারী, অদূরদর্শী, সাহসহীন, আবেগপ্রবণ, হুজুগে, ভীরু ইত্যাদি বলে। বাঙালি সম্পর্কে এসব মন্তব্য সর্বাংশে সত্য না হলেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। দরিদ্র বাঙালিকে চিরকাল কঠোর পরিশ্রম করে জীবন রক্ষা করতে হয়েছে। উচ্চশ্রেণির বাঙালির সঙ্গে নিম্নশ্রেণির বাঙালির চরিত্রগত পার্থক্য আছে। পূর্বোক্ত বিশেষণসমূহ হয়তো প্রয়োগ করা হয়েছে প্রধানত উচ্চশ্রেণির, অভিজাত শ্রেণির বাঙালির আচরণ লক্ষ করেই।

নীহাররঞ্জন রায় ‘বাঙালির ইতিহাস’ গ্রন্থে বাংলাভাষী ভূভাগের জনসাধারণের প্রাচীনকালের ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে তাদের হূদয়াবেগ ও ইন্দ্রিয়ালুতার কথা উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায় :

‘প্রাচীন বাঙালীর হূদয়াবেগ ও ইন্দ্রিয়ালুতার ইঙ্গিত তাহার প্রতিমাশিল্পে এবং দেব-দেবীর রূপ-কল্পনায় ধরা পড়িয়াছে...। মধ্যযুগের গৌরীয় বৈষ্ণবধর্মে, সহজিয়া সাধনায়, বাউলের সাধনায় যে বিশুদ্ধ ভক্তিরস ও হূদয়াবেগের প্রসার, তাহার সূচনা দেখা গিয়েছিল আদি পর্বেই, এবং তাহা শুধু বৌদ্ধ বজ্রযানী সহজযানীদের মধ্যেই নয়, তান্ত্রিক শক্তিসাধনার মধ্যেই নয়, বৈষ্ণব সাধনায়ও বটে। এই হূদয়াবেগ যে বহুলাংশে আদিম নরগোষ্ঠীর দান, তাহা আজিকার সাঁওতাল, শাবর প্রভৃতির জীবনযাত্রা, পূজানুষ্ঠান, সামাজিক আচার, স্বপ্ন-কল্পনা ও ভয়-ভাবনার দিকে তাকাইলে আর সন্দেহ থাকে না।... মধ্যযুগে দেখিতেছি, দেবই হউন আর দেবীই হউন, বাঙালি যথাসম্ভব চেষ্টা করিয়াছে তাহাদের মর্তের ধূলায় নামাইয়া পরিবার-বন্ধনের মধ্যে বাঁধিতে এবং ইহগত সংসার-কল্পনার মধ্যে জড়াইতে, হূদয়াবেগের মধ্যে তাহাদের পাইতে ও ভোগ করিতে, দূরে রাখিয়া শুধু পূজা নিবেদন করিতে নয়। ষষ্ঠী, মনসা, হারীতী, বিষ্ণু-যশোদা প্রভৃতির রূপ কল্পনায়ই যে এই ভাবনা অভিব্যক্ত, তাহাই নহে; কার্তিকের শিশুলীলা বর্ণনা, পিতা শিবের বেশভূষা অনুকরণ করিয়া শিশু কার্তিকের কৌতুক, শিবের গৃহস্থালীর বর্ণনা, নেশাগ্রস্ত শিবের সংসারে উমার দুঃখ এবং জামাতা ও কন্যা রূপে শিব ও গৌরীকে সমস্ত হূদয়াবেগ দিয়া আপন করিয়া বাঁধা, সপরিবারে বিষ্ণু ও শিবকে প্রত্যক্ষ করা- প্রভৃতির মধ্যেও একই ভাবনা।’

জাতীয় চরিত্র কোনো অপরিবর্তনীয় ব্যাপার নয়। তা ছাড়া জাতির ভেতরকার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। কোনো জাতির এককালের বৈশিষ্ট্য ও অন্যকালের বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য দেখা যায়। ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জাতীয় চরিত্র গড়ে ওঠে, আবার জাতির আত্মসচেতনতা, নতুন অভিজ্ঞতা, বৈদেশিক প্রভাব এবং জাতীয় সাধনা ও জাতীয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতীয় চরিত্র পরিবর্তিত হয়। অনুন্নত জাতির উন্নতির এবং উন্নত জাতির পতনের দৃষ্টান্ত আমরা ইতিহাসে পাই।

বাঙালির জাতীয় জীবনে ধর্মান্তরের ঘটনা, নতুন মতাদর্শ উদ্ভাবনের ঘটনা, নানাভাবে বাইরের প্রভাবকে গ্রহণ করে পরিবর্তিত হওয়ার ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে। প্রাচীন যুগে বাঙালি বহিরাগত আর্য-ব্রাহ্মণ্য, জৈন ও বৌদ্ধ প্রভাবে এসেছে, মধ্যযুগে বাঙালি বহিরাগত ইসলামের প্রভাবে এসেছে, আধুনিক যুগে বাঙালি ইাউরোপীয় প্রভাবে এসেছে এবং নানাভাবে এসব প্রভাবকে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে গ্রহণ করেছে। ঔপনিবেশিক শাসনের চাপে অনেক কিছু গ্রহণে বাধ্য হয়েছে। নীহাররঞ্জন রায় উল্লেখ করেছেন :

‘আর্য-ব্রাহ্মাণ্য এবং বৌদ্ধ ও জৈন সাধনাদর্শে এই ঐকান্তিক হূদয়াবেগ ও ইন্দ্রিয়ালুতার স্থান নাই। সেখানে ইন্দ্রিয়-ভাবনা বস্তু-সম্পর্ক-বিচ্যুত নয়; ভক্তি, জ্ঞানানুরাগ, হূদয়াবেগ বুদ্ধির অধীন। বস্তুত বাঙলার অধ্যাত্মসাধনার তীব্র আবেগ, প্রাণবন্ত গতি সনাতন আর্যধর্মে অনুপস্থিত।

আর্য-ব্রাহ্মণ্য, জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের আশ্রয়ে বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য কিছুটা বিকশিত হয়েছে, তবে তা উল্লেখযোগ্য মাত্র; তার বেশি হয়তো নয়।

মধ্যযুগে বাঙালির ইসলামে ধর্মান্তর বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা। অবশ্য সেকালের বাঙালি সমাজের একাংশ ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। সেকালে বিদেশ থেকে এদেশে শুধু ইসলাম আসেনি, ইসলামের পাশাপাশি এসেছে তুর্কি-মোগল, আফগান, ইরানি, ভাগ্যান্বেষী ও রাজত্ব-অভিলাষী লোকেরা। সম্পত্তি অর্জনের উদ্দেশ্যে আগত ভাগ্যান্বেষীরা বাংলার তুর্কি-মোগল-আফগান শাসকদের দরবারে ও আমলাতন্ত্রে চাকরি নিয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করেছে। মোগল আমলে ফারসি রাজভাষা ছিল। মধ্যযুগে ভারতবর্ষে আগত বিদেশি শাসক-আমলা-ব্যবসায়ী-সেনাপতিদের ভাষার সঙ্গে হিন্দুস্তানি ভাষার মিশ্রণ ও সংশ্লেষণের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে উর্দু ভাষা। বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য সেকালে বিকশিত হয়েছে প্রধানত সংস্কৃত ভাষার আশ্রয়ে, কিছুটা বাংলা ভাষায়। তাতে আরবি-ফারসির, প্রধানত ফারসির প্রভাব আছে।

ব্রিটিশ-শাসিত বাংলায় বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য বিকশিত হয়েছে বাংলা ও ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমরা অপেক্ষাকৃত বেশি পরিচিত।

প্রশ্ন হলো, নীহাররঞ্জন রায় বাঙালির যে বৈশিষ্ট্য লক্ষ করেছেন আজকের বাংলাদেশে বাঙালির বৈশিষ্ট্য তা থেকে কতটা উন্নত হয়েছে? আদৌ উন্নত হয়েছে কি? জাতীয় চরিত্র উন্নত না হলে, জাতির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ না হলে, জাতীয় রাজনীতিতে বিচার-বুদ্ধি ও জ্ঞান ক্রিয়াশীল না থাকলে জাতীয় রাজনীতি কি গৌরবোজ্জ্বল হতে পারে?

বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাস দীর্ঘ পরাধীনতার ইতিহাস। কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও সমাজবিজ্ঞানী দেখিয়েছেন যে, বাঙালির সমাজে রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়েছে বহিরারোপিত আর্য প্রভাবের ও কর্তৃত্বের ফলে। বাঙালি সমাজে আধুনিকতার ও গণতন্ত্রের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয় পরাধীনতার ফলে, ব্রিটিশের উপনিবেশ হওয়ার ফলে। আত্মবিকাশের জন্য বিচার-বিবেচনা করে বাইরের প্রভাব গ্রহণ করা, বাধ্য হয়ে বাইরের প্রভাব গ্রহণ করা আর লোভের বশবর্তী হয়ে বাইরের প্রভাব গ্রহণ করা- একরকম ব্যাপার নয়। বর্তমান ঐতিহাসিক যুগেও, আধিপত্য ও নির্ভরশীলতা ভিত্তিক আন্তঃরাষ্ট্রিক সম্পর্কের মধ্যে পড়ে আমাদের জাতি ও রাষ্ট্রের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। সমতাভিত্তিক সম্পর্কের কোনো প্রচেষ্টাই দেখা যাচ্ছে না। জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনীতি না হলে তা হবে না।

ইতিহাসে দেখা যায়, পাল ও সেন রাজবংশ বাইরে থেকে এসে বাংলার ভূভাগে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। পালদের নিয়ে অবশ্য ভিন্ন মতও আছে। পাল সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল উত্তর-ভারতের বিশাল অংশব্যাপী। তাতে উত্তরবঙ্গের কিছু অংশ ছিল, পূর্ববঙ্গ ছিল না। তুর্কি-মোগল-আফগান-ইরানিরা মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশ থেকে এসে বাংলার ভূভাগে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেছিল। ইংরেজরা নিতান্তই বাণিজ্য করতে এসে এদেশে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। বাঙালি স্বশাসনের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়নি।

পাশ্চাত্য প্রভাবে গত একশ বছর ধরে পরাধীনতার ছাপ গায়ে নিয়ে, বাংলার ভূভাগে আধুনিক রাজনীতির যে বিকাশ, তাতে ক্রমে কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। ইতিহাস গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে তা বোঝা যায়। অবশ্য এ কথা ঠিক যে, অতীতে পরাধীনতাকে মানতে সে বাধ্য হয়েছে বটে, কিন্তু স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তার নিঃশেষ হয়নি। চিরকাল সে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। বাঙালির এই স্বাধীনতা সংগ্রাম না থাকলে সে টিকে থাকতে পারত না। আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের মতো, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মতো অবস্থা হতো তার। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের সে ইতিহাস কেউ রচনা করেননি। এটা বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্যের দারিদ্র্যেরই পরিচায়ক।

বাঙালির বৌদ্ধিক ঐতিহ্য দুর্বল এবং সে দুর্বলতার পরিচয় তার রাজনীতিতেই সবচেয়ে প্রকট। বাঙালিকে উঠতে হলে যেসব কাজ অপরিহার্যভাবে করতে হবে, তার অন্যতম হলো জাতীয় ইতিহাসের চর্চা- যেটা স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭০-এর দশকে একটু দেখা দিয়ে স্তিমিত হয়ে গেছে। কেবল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই যথেষ্ট নয়, মুক্তিযুদ্ধের ও তার পরবর্তী প্রায় অর্ধশতাব্দীর ইতিহাস থেকেও শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। বস্তুত, ১৯৬০-এর দশকের ছয় দফা আন্দোলন থেকে আরম্ভ করে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মার্চের জাতীয় অভ্যুত্থান, নয় মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও যুদ্ধকালীন সরকার, হানাদারমুক্ত বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা এবং পরবর্তী প্রায় অর্ধশতাব্দীর ইতিহাস পক্ষপাতমুক্ত, সমাচ্ছন্ন, স্বাধীন, সন্ধিৎসু সত্যনিষ্ঠ মন নিয়ে, কারণ-করণীয়-করণ ও ফলাফলের সূত্র ধরে বিচার করতে হবে। ইতিহাস থেকে ভবিষ্যতের পাথেয় বা অভিজ্ঞতার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাভাষী ভূভাগে শতাব্দীব্যাপী গণজাগরণের ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রথমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পাকিস্তান, তারপর পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ। এর মধ্যে গিয়েছে হিন্দু-মুসলমান বিরোধের অপঘাত। রাষ্ট্রীয় ভাঙা-গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছাড়াও উন্নত জীবন প্রতিষ্ঠার বহুমুখী আশা-আকাঙ্ক্ষা গণজাগরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। গণজাগরণের ধারায় প্রতিটি আন্দোলনের সময়ে গড়ে উঠেছে নেতৃত্ব- আত্মপ্রকাশ করেছেন নেতা। এই নেতাদের রাজনৈতিক চরিত্রে তাদের নিজেদের মেধার ও প্রতিভার বৈশিষ্ট্য যতটা রূপায়িত হয়েছে, ততটাই প্রতিফলিত হয়েছে তাদের নিজ নিজ কালের গণমানস। মনে রাখতে হবে, যে জনগণ যখন যেমন নেতৃত্বের যোগ্য হয় সেই জনগণ নিজেদের জন্য, নিজেদের থেকে তখন ঠিক সেই রকম নেতৃত্বই তৈরি করে। লোকায়ত পত্রিকায় প্রকাশিত একটি লেখায় পাচ্ছি (আফজালুল বাসার- বাংলাদেশে নেতৃত্বের সমস্যা, লোকায়ত ৬ষ্ঠ বর্ষ প্রথম সংখ্যা, জুন ১৯৮৮) :

‘যে বিশাল-ব্যাপক জনভূমিতে আমরা কোনো প্রতিভাকে জন্ম নিতে দেখি, তার প্রকৃতি ও প্রবণতাকে ওই প্রতিভার মধ্যে প্রতিফলিত দেখি। তাই হীনবীর্য নীচ জনসাধারণের নেতাকেও আমরা দেখতে পাই হীনবীর্য নীচ হিসেবে, আর উদার কর্মোদ্যমে ভরপুর সৎ নাগরিকদের নেতাকে পাই মহান রূপে। লালনক্ষেত্র হিসেবে সাধারণ মানুষের সাধারণ জীবন তাই অসাধারণ মানুষের জন্য অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপক জনসাধারণ যদি না থাকত এবং যদি তারা প্রতিভাবানের সৃষ্টিতে অনুভূত, প্রতিফলিত এবং সৃষ্ট না হতো, তাহলে প্রতিভাবান হিসেবে কেউ কোনো দিন স্বীকৃতি পেত না।’

বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এবং জনজীবনে সমাধানযোগ্য অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু সেগুলোর সমাধান করা হচ্ছে না। ফলে সমস্যা বাড়ছে। যে রকম সরকার, যে রকম রাজনৈতিক দল, যে রকম জনচরিত্র ও গণজাগরণ থাকলে এসব সমস্যার সমাধান হতে পারে, সেসবের কোনোটাই বাংলাদেশে নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। বাংলাদেশে জনজীবনের উন্নতি সম্ভব। সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে হবে। তার জন্য জাতীয় ইতিহাস, জাতীয় চরিত্র, জনচরিত্র, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও রাজনীতি নিয়ে গভীর ও ব্যাপক চিন্তা-ভাবনা এবং কার্যক্রম দরকার। কেবল চিন্তা দিয়ে হবে না, চিন্তার সঙ্গে কাজ লাগবে। আর সব কিছুর জন্যই প্রস্তুতি দরকার হয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিন্তা এখন প্রায় সম্পূর্ণ রূপে নির্বাচনে সীমাবদ্ধ। সমাজের স্তরে স্তরে বিরাজ করছে জুলুম-জবরদস্তি ও অন্যায়-অবিচার। দেখা যাচ্ছে কেবল পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, আইন-আদালত, জেলখানা ও ফাঁসিকাষ্ঠ দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা। অন্য কোনো চিন্তাই গুরুত্ব পায় না। চালু করা হয়েছে ক্লিনহার্ট অপারেশন, এনকাউন্টার, ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ। চালু করা হয়েছে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি। এসবই আমাদের জাতির বৌদ্ধিক দৈন্যের এবং রাজনৈতিক দৈন্যের পরিচায়ক। দৈন্য কাটিয়ে উঠতে হবে।

লেখক : বিশিষ্ট চিন্তাবিদ
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১