আপডেট : ২৮ জুলাই ২০১৮
কর্ণফুলী নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রধান নদী। এটি ভারতের মিজোরামের লুসাই পাহাড়ে শুরু হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার কাছে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই নদীর মোহনাতে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর অবস্থিত। এই নদীর দৈর্ঘ্য ৩২০ কিলোমিটার। কর্ণফুলী নামের উৎস : কর্ণফুলী নদীর নামের উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত আছে। কথিত আছে যে, আরাকানের এক রাজকন্যা চট্টগ্রামের এক আদিবাসী রাজপুত্রের প্রেমে পড়েন। এক জ্যোৎস্না রাতে তারা দুজন এই নদীতে নৌভ্রমণ উপভোগ করছিলেন। নদীর পানিতে চাঁদের প্রতিফলন দেখার সময় রাজকন্যার কানে গোঁজা একটি ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি হারিয়ে কাতর রাজকন্যা সেটা উদ্ধারের জন্য পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু প্রবল স্রোতে রাজকন্যা ভেসে যান, তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাজপুত্রও রাজকন্যাকে বাঁচাতে পানিতে লাফ দেন, কিন্তু সফল হননি। রাজকন্যার শোকে রাজপুত্র পানিতে ডুবে আত্মাহুতি দেন। এই করুণ কাহিনী থেকেই নদীটির নাম হয় ‘কর্ণফুলী’। কর্ণফুলী নদীর চর : ১৮৮৩ সালে কর্ণফুলীর মোহনায় সৃষ্টি হয় লুকিয়া চর। ১৮৭৭ সালে জুলদিয়া চ্যানেল। জুলদিয়া চ্যানেলটি আড়াই মাইল দীর্ঘ এবং দেড় মাইল প্রশস্ত। ১৯০১ সাল থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে পতেঙ্গা চ্যানেলটি জুলদিয়া চ্যানেল থেকে প্রায় দেড় হাজার ফুট পশ্চিমে সরে যায়। হালদা নদীর সঙ্গে কর্ণফুলীর সংযোগস্থলে আছে বিশাল চর। যা হালদা চর হিসেবে পরিচিত। নদীর প্রবাহের কিছু অংশ নাজিরচর ঘেঁষে, কিছু অংশ বালু চ্যানেলের মধ্য দিয়ে এবং কিছু মূল স্রোত হিসেবে প্রবাহিত হচ্ছে। ১৯৩০ সালে কালুরঘাট রেলওয়ে সেতু নির্মাণের আগে নদীর মূল প্রবাহ প্রধানত কুলাগাঁও অভিমুখে বাম তীর ঘেঁষেই প্রবাহিত হতো। কালুরঘাট সেতু হওয়ার পর সেতুর ডান দিকে আরো একটি প্রবাহের মুখ তৈরি হয়। ফলে নদীর মাঝপথে সৃষ্টি হয় বিশাল একটি চর, যা কুলাগাঁও চর নামে পরিচিত। জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে প্রভাব : কবি ওহীদুল আলম ১৯৪৬ সালে কর্ণফুলীর মাঝি নামে একটি কাহিনী-কাব্য রচনা করেন। ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ ১৯৬২ সালে রচনা করেন তার উপন্যাস কর্ণফুলী। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় লিখেছেন, ওগো ও কর্ণফুলী। ‘তোমার সলিলে পড়েছিল কবে কার কানফুল খুলি তোমার স্রোতের উজান ঠেলিয়া কোন তরুণী, কে জানে সাম্পান নায়ে ফিরেছিল তার দয়িতের সন্ধানে।’ এ ছাড়াও চট্টগ্রামী ভাষার গানে এবং লোকসংস্কৃতিতে এই নদীর প্রভাব অনেক। যে কর্ণফুলীকে নিয়ে এত গর্ববোধ করি আমরা, আজ সে কর্ণফুলীকে গিলে খাচ্ছে কিছু ভূমি দখলদার। আজ কর্ণফুলী তার নিজস্ব রূপ হারাতে বসেছে। তারই নিরিখে শত মানববন্ধন ও শত আন্দোলনের ফলে কর্ণফুলী রক্ষার জন্য কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে চূড়ান্ত নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। হাইকোর্টের নির্দেশনার দুই বছর পর এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নোটিশের পরও নদী দখল থামছে না। এভাবে আমাদের প্রাণের কর্ণফুলী নদীর তীর অবৈধভাবে দখল হতে থাকলে বিলীন হবে এই নদী। কর্ণফুলী বাঁচলে, বাঁচবে চট্টগ্রাম। তাই কর্তৃপক্ষের নিকট আমাদের প্রাণের দাবি কর্ণফুলী নদীকে রক্ষা করে, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যকে আরো সঞ্চারিত করুন। আলতাফ হোসেন সমাজকর্মী
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১