বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

‘সরকার বেড়িবাঁধটা দিলে আমার বাড়িটা ভাঙত না’

নড়িয়ায় হাহাকার

পদ্মায় সর্বস্ব হারানো এক বৃদ্ধ সংগৃহীত ছবি


‘খেয়ে না খেয়ে শখ করে একটা ঘর বানিয়েছিলাম। আজ পদ্মা আমাদের সে ঘরখানা নিয়ে গেল। সরকার আমাদের বেড়িবাঁধটা দিল না। বেড়িবাঁধটা দিলে আমার বাড়িটা ভাঙত না।’ গতকাল শুক্রবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন প্রমত্তা পদ্মার ভাঙনে ভিটেমাটি হারানো শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বাঁশতলা এলাকার গৃহবধূ পান্না বেগম।

কয়েক দিন থেমে থাকার পর নতুন করে ফের ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে পদ্মাতীরের বাঁশতলা এলাকায়। গত ২৪ ঘণ্টায় বাঁশতলা এলাকার কমপক্ষে ৩০টি বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে গাছপালা ও ফসলি জমিও। মাথাগোঁজার ঠাঁইসহ সর্বস্ব হারিয়ে এখন দিশাহারা ওই এলাকার হাজারো মানুষ। মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। দিন কাটছে অর্ধাহার-অনাহারে। সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে সেটাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। উপজেলা প্রশাসন বলছে, পর্যাপ্ত ত্রাণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া নতুন করে ভাঙন শুরু হওয়ায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে ধনী-গরিব নির্বিশেষে নদীতীরবর্তী অন্য বাসিন্দাদের মধ্যে। পদ্মার করাল গ্রাস থেকে রেহাই পেতে দিনরাত পরিশ্রম করে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে কাজ করছে ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ। রাস্তার পাশে উঁচুস্থানে বা অন্যের জায়গা ভাড়া নিয়ে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নিচ্ছে তারা। তাদের দাবি, সরকার জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের কাজটা শুরু করে বাকি এলাকা রক্ষা করুক।

বাঁশতলা এলাকার আলী আকবর দেওয়ান বলেন, আমাদের আর কিছুই রইল না। সুখে-শান্তিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকার জন্য অনেক কষ্ট করে পাকা বাড়িঘর বানিয়েছিলাম। এ বাড়িটি পদ্মা নিয়ে গেল। এখন আমাদের মাথাগোঁজার জায়গাটুকুও নেই। কী করব, ভেবে পাচ্ছি না।

নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দুলাল বেপারি বলেন, দুই মাস যাবৎ ভাঙন চলছে পদ্মায়। পাঁচ হাজারের বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে গেছে এরই মধ্যে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ৩০টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। কখন যে আমাদের বাড়িঘর নিয়ে যায়! আমরা এখন সেই আতঙ্কে আছি। বাঁধটি দ্রুত হলে আমরা রক্ষা পেতাম।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াসমীন বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীর জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। ত্রাণসামগ্রী আসামাত্র ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর পানি না কমা পর্যন্ত তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। তবে এ মুহূর্তে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনের তীব্রতা কমানোর চেষ্টা চলছে।

ভাঙনকবলিতদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ভাঙনকবলিত সব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। পুনর্বাসনের জন্য টিন ও নগদ টাকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১