বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

খাবারে নতুন বিপদ হাইড্রোজ

# মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ক্যানসারের কারণ # সুনির্দিষ্ট মাত্রা জানে না কেউ

দেশে এ প্রিজারভেটিভ ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট মাত্রা নেই সংরক্ষিত ছবি


প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও হাইড্রোজ বা এটি মিশ্রিত খাদ্যদ্রব্য জব্দের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সংরক্ষণকারী দ্রব্য (প্রিজারভেটিভ) সোডিয়াম হাইড্রোজেন সালফাইট বা হাইড্রোজ খাবারে মিশ্রণ নিষিদ্ধ নয়। তবে এর বিপদ অন্যখানে। দেশে এ প্রিজারভেটিভ ব্যবহারের নেই কোনো সুনির্দিষ্ট মাত্রা। সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও জানে না কোন খাবারে কতটুকু হাইড্রোজ গ্রহণযোগ্য। অথচ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্রাতিরিক্ত হাইড্রোজ মানবদেহের জন্য চরম ঝুঁকির কারণ। সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় বর্তমানে অন্যান্য সব প্রিজারভেটিভের চেয়ে বেশি ব্যবহূত হচ্ছে হাইড্রোজ। কেউ কেউ এর ব্যবহার করছে অধিক সময় খাদ্য সতেজ ও মচমচে রাখার জন্য, আবার কেউ ব্যবহার করছে খাবারের অবাঞ্ছিত কালচে ভাব দূর করতে। আরো সস্তা হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে টেক্সটাইলে ব্যবহূত হাইড্রোজও খাদ্যে ব্যবহার হচ্ছে- এমন তথ্যও মিলেছে। দেশে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন, প্রায় সব ধরনের বেকারি পণ্যসহ মুড়ি, গুড়, জিলাপি, আচার, দুধ এমনকি সবজি ও সুপারির মধ্যে হাইড্রোজ মিশ্রণের প্রমাণ পেয়েছেন। জরিমানা করা হয়েছে এ পর্যন্ত শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্ডেড সুবিধায় বিনা শুল্কে আমদানির সুযোগ থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে হাইড্রোজের ব্যবহার। আবার টেক্সটাইল, ওষুধ শিল্প ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ- তিন খাতে হাইড্রোজের প্রয়োজন থাকায় অন্য শিল্পের জন্য আমদানি করা নন-ফুডগ্রেডেড হাইড্রোজ খাদ্য প্রক্রিয়ায়করণে ব্যবহার হচ্ছে। রাজধানীর মিটফোর্ড, চকবাজার, মৌলভীবাজার থেকে শুরু করে সারা দেশেই চলছে এ কেমিক্যালের রমরমা ব্যবসা।

হাইড্রোজ নিয়ে জাতীয় জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের (আইপিএইচএন) সাবেক পরিচালক ও ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফাতিমা পারভিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে অ্যাসিডিটি থেকে শুরু করে এটি দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের কারণ। যখন হাইড্রোজ আমাদের পাকস্থলিতে প্রবেশ করে, তখন সেটা অনেক উপকারী সেলকে (কোষ) বিনষ্ট করে ফেলে, যা পরবর্তীতে পরিপাকতন্ত্রের নানা রোগ সৃষ্টি করে। সেটাই দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’

হাইড্রোজ ব্যবহার করা হচ্ছে প্যাকেটজাত বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যেও। তবে সেটা নির্ধারণে দেশে নেই কোনো প্রযুক্তি। ফলে মাত্রাতিরিক্ত হাইড্রোজ ব্যবহার হচ্ছে কি না সেটাও জানা নেই কারো। প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্যের তদারককারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষাগারও হাইড্রোজ পরীক্ষার জন্য স্বীকৃত নয়। ফলে বিএসটিআই খাদ্যের মানের সনদ দিচ্ছে এর ঝুঁকি নিরূপণ ছাড়ায়।

এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) এসএম ইসাহাক আলী বলেন, ‘হাইড্রোজের বিষয়টি আমদের স্ট্যান্ডার্ডের শর্তের মধ্যে না থাকায় এর উপস্থিতি নিয়ে আমরা কিছু করতে পারি না।’ তবে জনস্বাস্থ্যের বিষয় বিবেচনায় দ্রুত এটি তদারকির আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন এ পরিচালক।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ‘খাদ্য সংযোজন দ্রব্য ব্যবহার প্রবিধানমালা-২০১৭’ অনুসারে হাইড্রোজ একটি প্রিজারভেটিভ। তবে এই আইনে বলা হয়েছে, এর ব্যবহারের মাত্রা ‘কোডেক্স এলিমেন্টারিয়াস’ অর্থাৎ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বিশ্ব স্বাস্ব্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রায় হবে। এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল রউফ মামুন বলেন, ‘প্রিজারভেটিভ হিসেবে এর ব্যবহার করা যাবে, তবে সেটা সুনির্দিষ্ট মাত্রায়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় এ সুনির্দিষ্ট মাত্রা কত?- সেটা আমাদের কারো জানা নেই।’ তিনি বলেন, ‘কোন কোন খাবারে এটি ব্যবহার হচ্ছে- সেটা জানার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, লোকবল দক্ষতা কোনোটিই আমাদের নেই। খাদ্যে এসব অহরহ ব্যবহার হচ্ছে। সেটা বড় হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’

এই বিশেষজ্ঞ আরো জানান, উন্নত অনেক দেশ প্রিজারভেটিভ হিসেবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে হাইড্রোজ ব্যবহার করছে। তবে সরাসরি খাদ্যে হাইড্রোজের ব্যবহার নিষিদ্ধ সেসব দেশে। সরাসরি হাইড্রোজের সালফাইড গ্যাস শরীরে প্রবেশ করলে সেটা অন্যান্য রোগের পাশাপাশি হূদরোগ ও স্নায়ুরোগ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ শুধু ভোক্তা নয়, যারা হাইড্রোজ মিশ্রিত খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত তারাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১