বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মোংলা-বুড়িমারীতে টাকা ছাড়া সেবা মেলে না : টিআইবি

লোগো টিআইবি


মোংলা বন্দর ও কাস্টম হাউজ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে প্রতিবছর ৩১ কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন হয় বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, মোংলা-বুড়িমারীতে প্রতিটি সেবা নিতে হয় ঘুষের মাধ্যমে। ঘুষ ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায় না। গতকাল রোববার টিআইবির কার্যালয়ে ‘মোংলা বন্দর ও কাস্টম হাউজ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন : আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

টিআইবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমপক্ষে ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা অবৈধ লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শুল্ক স্টেশনে আমদানির ক্ষেত্রে ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা ও রফতানির ক্ষেত্রে ৩৪ লাখ টাকা। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানির ক্ষেত্রে অবৈধভাবে ৪৩ লাখ টাকা ও রফতানির ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা আদায় করেছে। এছাড়া ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা মোটর শ্রমিকদের পকেটে গেছে।

একইভাবে মোংলা কাস্টম হাউজ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গাড়ি থেকে ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, কন্টেইনার থেকে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং বাল্ক থেকে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা অবৈধভাবে নেওয়া হয়েছে। মোংলা বন্দরের মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়েছে ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে গাড়ি থেকে ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, কন্টেইনার থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং বাল্ক থেকে ৫৮ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।

টিআইবির গবেষণা অনুযায়ী, মোংলা বন্দর দিয়ে যেকোনো পণ্য আমদানি-রফতানিতে অবৈধভাবে টাকা দিতে হয় ব্যবসায়ী বা তাদের প্রতিনিধিদের। আমদানি পণ্যের প্রতিটি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে শুল্কায়নের জন্য কাস্টমসে ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। আবার একই পণ্য বিকাল ৫টার মধ্যে ছাড় করাতে লাগে ৬ হাজার টাকা। এরপর ছাড় করাতে লাগে অতিরিক্ত ১ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়ায় কাস্টম হাউজে ৮ হাজার ৩৫০ টাকা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ২১ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।

এদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আমদানি পণ্যের প্রতিটি বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে শুল্ক স্টেশনে ১ হাজার ৭৫০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রফতানির বেলায় ১ হাজার ৫০০ টাকা গুনতে হয়। আবার আমদানি করা পণ্য ছাড় করাতে স্থলবন্দরের কর্মকর্তাদের ৩০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রফতানিতে এই ঘুষ ২০০ টাকা।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোংলা কাস্টম হাউজ থেকে ৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা এবং বন্দর থেকে ২২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এদিকে বুড়িমারী কাস্টম হাউজ থেকে ৪৫ কোটি এবং বন্দর থেকে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসা নিয়মবহির্ভূত লেনদেন বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যারা প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতির শিকার হয়ে নিজেরাও দুর্নীতির অংশীদার হয়ে যাচ্ছে, তাদের তথ্য ও অন্যান্য অংশীজন থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। আমাদের গবেষণা পদ্ধতি অনুযায়ী এটি প্রমাণিত হওয়ায় আমরা এটিকে (অবৈধ লেনদেন) দুর্নীতি বলছি।’

দুই বন্দরে অটোমেশন ও ওয়ান স্টপ সেবা চালু হলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও সার্বিক তথ্য উদ্বেগজনক। উভয় প্রতিষ্ঠানেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় কাঠামো ব্যবস্থা উপস্থিত থাকলেও তার প্রায়োগিক পর্যায়ে নেই। এজন্য সব পর্যায়ে ওয়ান স্টপ ও অটোমেশন ব্যবস্থা চালু নিশ্চিত করতে হবে।’


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১