আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০১৮
বাউলসম্রাট ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাউল ও ভক্ত-শিষ্য অনুরাগীসহ জনতার ঢল নেমেছে। কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন আখড়া চত্বর উৎসবমুখর ও মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বাউল-বাউলানি, দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ বিপুলসংখ্যক জনতার পদভারে লালন আখড়ায় এখন নেই তিল ধারণের ঠাঁয় নেই। গত মঙ্গলবার বাউলের চারণভূমিতে আসা হাজার হাজার লালন-ভক্ত, সাধু-গুরুদের কর্তৃপক্ষের দেওয়া সকালের অধিবাসে পায়েস ও মুড়ির বাল্যসেবা গ্রহণ করেন। গতকাল বুধবার তারা মরা কালীগঙ্গায় গোসল সেরে মাছ-ভাত ও ত্রিব্যঞ্জন দিয়ে (তিন ধরনের সবজি দিয়ে তৈরি তরকারি) দুপুরের খাবার পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। গতকাল সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনের সংসদ সদস্য আবদুুর রউফ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত, কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আলী প্রমুখ। মূল গেট থেকে ভেতরে ঢুকে অডিটোরিয়ামের নিচে বসে আছে প্রবীণ বাউল নহির শাহ। বয়স প্রায় ৭৯ বছর। শিষ্যদের নিয়ে গানে মজেছিলেন তিনি। এখনো আঁটা স্বাস্থ্য। দেখে বোঝা যায় না বয়স। গান থামালে কথা হয় এ বাউলের সঙ্গে। গান দিয়েই শুরু করেন কথা। খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়...। গানের মর্মকথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুঝে নিতে হবে। এদিকে ফ্রান্স থেকে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আসেন দেবোরা জান্নাত। লালন শাহ’র জীবনদর্শন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে লালন দর্শনের প্রেমে পড়ে যান তিনি। আত্মিক শান্তির উদ্দেশ্যে এ দেশে এসে গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছেন। বাউলদের এই জীবনাচারে প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন তিনি। দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুরে ফকির নহির শাহ’র আস্তানায় জান্নাত বসবাস করছেন। কিছুদিন আগে এই আস্তানায় বসবাসকারী নহির শাহ’র আরেক শিষ্য রাজনকে বিয়ে করেছেন তিনি। পেতেছেন সংসার। কারণ হিসেবে দেবোরা বলেন, সংসার হলো সমাজ, সংসার হলো ঘর। এই চিন্তা-চেতনা থেকে ঘর-সংসার করতেই গুরুজির শিষ্যকে বিয়ে করেছি। ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’ উল্লেখ করে দেবোরা জান্নাত বলেন, লালন সাঁইজির দর্শন যারা মানেন, সাধনা করেন, তাদের সঙ্গে মিশতে হবে, জানতে হবে, বুঝতে হবে। তবেই সৃষ্টির এই বিস্ময় জানা সম্ভব হবে। তিরোধান দিবসে প্রতিবছরের মতো এবারো সাধক লালনের আধ্যাত্মিক দর্শন লাভের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রাণের টানে ছুটে আসেন। একতারা, দোতারা, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখরিত হয়ে উঠেছে লালনভূমি ছেঁউড়িয়া।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১