বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০১৮

জাতিসংঘ দিবস

বাংলাদেশ ও আজকের বাস্তবতা

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সংগৃহীত ছবি


মো. জোবায়ের আলী জুয়েল

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা, সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান, যুদ্ধ প্রতিরোধ এবং যুদ্ধনীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৮৯৯ সালে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিশ্ব শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। হেগ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে যে কনভেনশন প্রণীত হয়, তার ওপর ভিত্তি করে স্থায়ী সালিশি আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৯০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু হয়। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে যে হেগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে ২৬টি ইউরোপীয় রাষ্ট্র অংশগ্রহণ করে এবং এ সম্মেলনেই প্রথমবারের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন গঠনের আকাঙ্ক্ষা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অনুভূত হয়।

১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। ১৯১৯ সালের ২৫ জানুয়ারি প্যারিস সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন তার চৌদ্দ দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন, যেখানে বিশ্ব শান্তি মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, যৌথ নিরাপত্তা, সাধারণ নিরস্ত্রীকরণের বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয় এবং নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় শান্তি এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি বিশ্ব সংগঠন গড়ে তোলার ইচ্ছা প্রকাশ পায়।

জাতিসংঘ নামের সূচনা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের দ্বারা এবং এর প্রথম ব্যবহার হয় ১৯৪৫ সালের ১ জানুয়ারি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সম্পাদিত ‘সম্মিলিত জাতিসমূহের ঘোষণা’র মাধ্যমে, যেখানে ২৬টি দেশের প্রতিনিধিরা প্রথমবারের মতো অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ করার ঘোষণা দেন। ১৯৪৫ সালে ২৫ এপ্রিল থেকে ২৬ জুন সানফ্রানসিস্কোতে আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রশ্নে ‘জাতিসমূহের সম্মেলনে’ ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ সনদ রচনা করেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা ১৯৪৫ সালের ২৬ জুন সনদটি অনুমোদন ও স্বাক্ষর করেন। পোল্যান্ড সম্মেলনে উপস্থিত না থাকলেও পরে এতে স্বাক্ষর দেয়। ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর চীন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও স্বাক্ষরকারী অন্য অধিকাংশ দেশের সনদ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ১৩৬তম সদস্য হিসেবে জাতিসংঘে যোগ দেয়। যোগদানের এক সপ্তাহ পর ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ দেন।

বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৫৪তম অধিবেশনে ‘অ্যাকশন ফর কালচার অব পিস কর্মসূচি’ ঘোষণার সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে জাতিসংঘের এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতময় এলাকায় চলমান বিশ্ব শান্তি রক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, যার সঙ্গে বাংলাদেশ গভীরভাবে জড়িত। জাতিসংঘের বিশ্ব শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী শীর্ষস্থানে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। জাতিসংঘ পরিচালিত ৪৫ শান্তি রক্ষা মিশন কার্যক্রমের মধ্যে ২৫টিতে ৮৩ হাজার শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে বাংলাদেশ দায়িত্ব পালন করে চলেছে।

২০১০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর ১০ হাজার ৫৭৪ সদস্যকে বিশ্ব শান্তি রক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। বর্তমানে শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ এবং ১২টি মিশনের ১১টি রাষ্ট্রে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কর্মরত রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা দেশের জন্য অন্যতম শীর্ষ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী শক্তি। বাংলাদেশের জনগণের উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে ১০টিরও বেশি জাতিসংঘ সংস্থা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার ও জনগণের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলো, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ন্যায়বিচার নীতির ওপর ভিত্তি করে বিশ্ব শান্তি, উন্নয়ন, মানবাধিকার এবং সব মানুষের কল্যাণের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। শান্তি রক্ষা, শান্তি সৃষ্টি, সঙ্কট প্রতিরোধ এবং মানবিক সাহায্যের জন্য জাতিসংঘ বেশি পরিচিত হলেও এই দিকগুলোর বাইরেও বিভিন্ন উপায়ে জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গ সংস্থাগুলো বিশ্বকে প্রভাবিত করে চলেছে।

এই সংগঠন বৃহত্তর পরিসরে বিভিন্ন মৌলিক ইস্যু, যেমন— টেকসই উন্নয়ন ধারণা থেকে শুরু করে পরিবেশ এবং শরণার্থীদের রক্ষা, দুর্যোগ সহায়তা, সন্ত্রাসবাদ দমন, নিরস্ত্রীকরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্রবিস্তার রোধ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য, ভূমি মাইন অপসারণ, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তির পৃথিবী গড়ার লক্ষ্য পূরণে জাতিসংঘ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১