আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৮
প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের দৃষ্টিনন্দন সবুজের লীলাভূমির ক্যাম্পাস। দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস সেজেছে প্রজাপতির ডানায়। প্রকৃতিকে একটু বাড়তি রুপ দিতে উড়ছে হরেক রঙের প্রজাপতি। জালের ভিতর উড়ছে নাম না জানা হরেক রকমের প্রজাপতি। এক গাছ থেকে অন্য গাছে তাদের উড়াউড়ি। কোনোটা হলুদ, কোনোটা নীল, কোনটা সাদা প্রজাপতির এসব দৃশ্য দেখে মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠে। বলছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ম বারের মত আয়োজিত ‘প্রজাপতি মেলা-২০১৮’ এর কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আয়োজনে এবছরও মেলায় ৫০ প্রজাতির প্রজাপতি ডানা মেলেছে। ‘প্লেনটাইগার’, ‘কমন ক্রো’, ‘প্লেনমজুডি’, ‘ডিঙ্গি বুশব্রাউন’, ‘কমনডাফার’, ‘এপফ্লাই’, ‘পিবু’সহ নানা প্রজাতির প্রজাপতির বিচরণে ছেঁয়ে গেছে জাবি’র ক্যাম্পাস। ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’-এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ শুক্রবার সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে প্রজাপতি অবমুক্ত করে এবং বেলুন উড়িয়ে এই মেলার উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী ভাষণে উপাচার্য বলেন, ‘প্রজাপতি একটা অসাধারণ পতঙ্গ। প্রজাপতির সৌন্দর্যে আমরা মুগ্ধ এবং প্রজাপতির বাহারি রঙ আমাদের মন আনন্দে ভরিয়ে দেয়।প্রজাপতির ডানা ছুঁতে কেউ ছুটেনি এমন মানুষ খুব কম আছে। প্রজাপতি শুধু মানুষকে আনন্দ দেয় তা নয় বরং প্রজাপতি আমাদের অমূল্য সম্পদ। প্রকৃতির ভরসাম্য রক্ষায় প্রজাপতির অবদান অপরীসিম। আমরা এ রকমএকটি মনোমুগ্ধকর মেলার আয়োজন করতে পেরে সত্যিই আনন্দিত’। মেলার উদ্বোধন শেষে একটি র্যালি বের হয়। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করেন। দিন ব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা (শিশু-কিশোরদের জন্য), আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শন, অরিগামি, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, বিতর্ক (প্রজাপতি ও জলবায়ুপরিবর্তন), প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান। ঢাকার বনশ্রী থেকে আসা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মালবিকা নিপুন প্রজাপতি মেলায় এসেছেন। নিপুনের বাবা সিদ্ধার্থ রায় জানান, মেয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রজাপতি মেলায় এসেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও প্রকৃতি খুব ভালোলাগে। এজন্য প্রতিবারই এ মেলায় ছুটে আসেন। সাভার রেডিও কলোনি এলাকা থেকে এসেছে মনিং গ্লোরিং স্কুলের চতুর্থ শ্রেণী পড়ুয়া আবরার রাইমিমা। বাবার সাথে সে এসেছে মেলায় প্রজাপতি দেখতে। সে বলে, দেখে খুব ভাল লাগছে। প্রজাপতিগুলো অনেক সুন্দর। আমি আবার আসবো।’ ইসলামনগর এলাকা থেকে প্রজাপতি দেখতে আসা ফাহিম-ফারিয়া দম্পতি বলেন, ‘প্রজাপতি দেখে খুব ভাল লাগছে। সত্যি এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে পেরে ছেলে-মেয়েরা আনন্দ পাচ্ছে। তাদের আনন্দে আমরাও আনন্দিত।’ মেলার আহ্বায়ক ও প্রাাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন জানান, দেশে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। গাছকাটা, লতাগুল্ম কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন তথা অতিবৃষ্টি, অতিরিক্ত গরম- এসব কারণে প্রজাপতির সংখ্যা কমছে। তাই এ প্রজাপতি সংরক্ষণে মানুষের সহমর্মিতা ও সচেতনা প্রয়োজন। আর প্রজাপতি সংরক্ষণ করতে পারলে আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষা করতে পারবো। তাই এ প্রজাপতি সংরক্ষণে মানুষের মাঝে সচেতনতা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে এ মেলার আয়োজন। ২০১০ সাল থেকে জাবিতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে দেশেরএকমাত্র প্রজাপতি মেলা। বছর জুড়ে অপেক্ষার পর এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রজাপতিপ্রেমীরা ছুটে আসছে মেলায়। বিভিন্ন বয়সের হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করেছে এ প্রজাপতি মেলায়। প্রজাপতির সৌন্দর্য সবার মনকে উৎফুল্ল করে তুলে। তাইতো ইট পাথরে ঘেরা শহর থেকে একটুখানি হাফ ছেড়ে বাঁচতেপরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে সকাল থেকে আসতে শুরু করেছে প্রজাপতিপ্রেমী দশণার্থী। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে সবুজের এ লীলাভূমি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১