বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০১৮

ক্যানসার শনাক্তে লাগবে দশ মিনিট


ক্যানসারকে এখনো বলা হয় মরণব্যাধি। সঠিক সময়ে এ রোগ নির্ণয় করতে না পারায় বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন বাড়ছে ক্যানসারে মৃত্যু। চিকিৎসাশাস্ত্রে যে কয় ধরনের ক্যানসার শনাক্তের পদ্ধতি চালু আছে, তা বেশ সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।

সময় ও টাকার সাশ্রয়ে বড় ধরনের অগ্রগতির খবর দিয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, নতুন পদ্ধতিতে সব ধরনের ক্যানসারের উপস্থিতি জানা যাবে। এই পদ্ধতির উদ্ভাবক কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ন্যানো টেকনোলজির একদল বিজ্ঞানী। তাদের মতে, সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় শনাক্ত হবে ক্যানসার। একটি দুটি নয়, বরং সব ধরনের ক্যানসারের উপস্থিতি জানা যাবে। তাও আবার মাত্র দশ মিনিটে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০১৫ সালে ক্যানসারে বিশ্বব্যাপী মারা গেছে ৮৮ লাখ রোগী। প্রতি ছয়জনে মারা গেছেন একজন। হূদরোগের পরেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়।

বিজ্ঞানী দলের প্রধান তিন সদস্যের একজন প্রবাসী বাংলাদেশি ড. আবু সিনা, যিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন গবেষক হিসেবে কর্মরত। আবু সিনা বলেন, মানবদেহের গ্লুকোজ বা কোলেস্টেরলের পরিমাণ নির্ণয়ের মতোই সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় মিলবে ক্যানসার উপস্থিতির তথ্য।

আমরা ডিএনএ’র বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করতে পেরেছি, যাকে বলছি ইউনিভার্সেল ক্যানসার বায়ো মার্কার, যা সব ধরনের ক্যানসারে আছে। পাশাপাশি এই বৈশিষ্ট্য ধরে এমন পদ্ধতি বের করেছি যা দিয়ে সবধরনের ক্যানসার শনাক্ত সম্ভব। পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়া আসেন আবু সিনা। দেশটিতে স্থায়ী বসবাস শুরুর আগে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। আবু সিনা ও তার দলের আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে দুভাবে শনাক্ত করা যাবে ক্যানসার।

তিনি বলেন, একটি হচ্ছে খালি চোখে। এ পদ্ধতিতে রক্ত  থেকে ডিএনএকে আলাদা করে সোনার দ্রবণে (গোল্ড ন্যানো পার্টিকেল সলিউশন) মেশানো হবে। সঙ্গে যোগ করা হবে লবণ। যদি ক্যানসার থাকে তবে দ্রবণের রঙ পরিবর্তন হবে না। আর যদি রক্তে ক্যানসার না থাকে, তাহলে দ্রবণের রঙ গোলাপি থেকে নীল হবে।

আরেকটি হচ্ছে ইলেকট্রোকেমিক্যাল পদ্ধতি। ডায়াবেটিস শনাক্তের জন্য প্রচলিত যেসব ছোট ছোট মোবাইল ডিভাইস আছে, হয়তো ঠিক তেমনি মেশিন আসবে বাজারে, যা দিয়ে সহজে শনাক্ত করা যাবে ক্যানসার, জানিয়েছেন আবু সিনা।

অধ্যাপক সিনা বলেন, এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাট ট্রাউ, আবু সিনা এবং পোস্টডক্টোরাল রিসার্চ ফেলো ডক্টর লরা কারাসকোসা। গবেষণাগারে দুইশরও অধিক রক্ত এবং টিস্যুর নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেছেন তারা। বছরখানেক সময় লাগবে এ আবিষ্কারের সুফল পেতে।

এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাবে গবেষণাগারের এ আবিষ্কার। প্রায় সব ধরনের ক্যানসারের কয়েক হাজার নমুনা নিয়ে কাজ করতে লেগে যাবে আরো কয়েক বছর। তবে এ আবিষ্কারে উপকৃত হবে সাধারণ মানুষ।

চাঁদপুরের ছেলে আবু সিনার বাবা-মা দুজনই শিক্ষক। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন ব্রিসবেনে। ‘একজন বাংলাদেশি হিসেবে এ আবিষ্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পেরে গর্ববোধ করছি। আশা করি আমাদের তরুণ প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে। সুযোগ পেলে দেশের জন্যও অবদান রাখতে চাই’- বলেছেন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আবু সিনা।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১