বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০১৯

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের আদর্শ


ইসলামের শিক্ষা হলো সমাজের মানুষের যে কোনো বিপদ-আপদে সাহায্য-সহযোগিতা করা। আর মুসলমানের জীবনই হচ্ছে মানবকল্যাণের জন্য। আমাদের দেশে পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল। হাড়কাঁপানো শীতে নাকাল দেশের দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। প্রতি বছর এ সময়ে আসে শীত-শৈত্যপ্রবাহ। দিনের বেলায় সূর্যের মুখ প্রায়ই দেখা যায় না। হিম বায়ু আর ভারী কুয়াশার সঙ্গে কমে যাচ্ছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধানও। প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও এর বিরূপ প্রভাব মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। শীতের এ সময় আমরা ভালো কিছু করতে পারি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তোমরা তাদের দান করো আল্লাহর সেই সম্পদ থেকে, যে সম্পদ আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন (সুরা নূর, আয়াত : ৩৩)। অসহায়, দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষ আছে, যারা ঠিকমতো দুই বেলা খেতে পায় না, এই হাড়কাঁপানো শীতে যাদের গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই, আমরা ইচ্ছা করলেই পারি এই অসহায় মানুষদের কষ্ট লাঘব করতে। আমাদের অনেকের তিন চারটি শীতের জামা-কাপড় রয়েছে। আমরা যদি ইচ্ছা করি সেখান থেকে একটি পোশাক তাদের দিতে পারি। যার ফলে তারা যতটা না খুশি হবে, তার চেয়ে বেশি খুশি হবেন আমার দয়াময় আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ঈমানের ৭৭টি শাখা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে একটি হলো রাস্তা থেকে কোনো কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া (মুসলিম শরিফ), যাকে আমরা মানবসেবা বলি। আর মানবসেবাই তো পরম ধর্ম। দয়াল নবী (সা.) আরো বলেন, যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না (মুসলিম শরিফ-২৩১৯)। আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, তারা তাদের খাবারের প্রতি ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও সে খাবার অসহায়, এতিম এবং বন্দিদের খাওয়ায় (সুরা দোহা, আয়াত : ৮)। এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা অসহায়, মিসকিন ও বন্দিদের খাবার দান করাকে মুমিনদের বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করেছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি পরিপূর্ণ মুমিন নয়, যে তৃপ্তি সহকারে আহার করে আর তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে। মানবসেবার গুরুত্ব প্রসঙ্গে রসুল (সা.) বলেন, ‘কওমের নেতা সফরের অবস্থায় তাদের খাদেম থাকবে। যে ব্যক্তি খেদমতের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অগ্রগামী হবে। কেউ তাকে আমলের মাধ্যমে পেছনে ফেলতে পারবে না। অবশ্য শহীদ ব্যক্তি পারবে।

মানবসেবা ও খেদমতের উজ্জ্বল ও মূর্ত প্রতীক ছিলেন দয়াল নবী (সা.)। সেবার এই মহৎ গুণটি তাঁর মধ্যে নবুয়ত প্রাপ্তির আগেও বিদ্যমান ছিল। নবী করিম (সা.)-কে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর শপথ! আল্লাহপাক কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। কেননা আপনি আত্মীয়ের প্রতি সদাচার করেন, অসহায় ব্যক্তির বোঝা বহন করেন, নিঃস্ব ব্যক্তির অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা করে দেন। মেহমানদের আপ্যায়ন এবং বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করেন (বুখারি শরিফ)। শীতার্ত ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলাম ও নবীর আদর্শ। এ মুহূর্তে সব সামর্থ্যবান ব্যক্তির একান্ত কর্তব্য শীতার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি! তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য (আল-কোরআন)। এ কাজটি ইবাদততুল্য। সামান্য কিছু শীতবস্ত্র, কিছু কম্বল, কিছু গরম খাবার অথবা প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ চলামন তীব্র শীতে অসহায় এসব মানুষের শীত নিবারণের জন্য সহায়ক।

এ মুহূর্তে প্রয়োজন দেশজুড়ে সরকার তথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি শীতবস্ত্র বিতরণ করা। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে বিশেষ করে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বড় বড় শিল্প গ্রুপ ও বিত্তশালীদের শীতার্ত মানুষের পাশে সহায়তার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তাহলেই শীতার্ত মানুষের শীতের কষ্ট লাঘব হবে এবং আল্লাহর দেওয়া সম্পদ, বিদ্যা, শ্রম দিয়ে শীতার্ত ও দুর্গত মানুষদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা মুসলমান বা মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

 

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির

লেখক : কলামিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১