বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৯

প্রতিবন্ধীদের কোটা বহাল

মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সংরক্ষিত ছবি


সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হলেও প্রতিবন্ধীদের কোটা বহাল আছে। গতকাল সোমবার তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে এই নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি যে ভাষণ দেবেন, তার খসড়া অনুমোদনসহ কয়েকটি আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানোর কথা বলেছেন। মন্ত্রীদের বলেছেন, কাজ ফেলে রাখা যাবে না, দ্রুত করতে হবে। এ ছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ আইন)-২০১৮-এর খসড়া, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ আইন, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্র আইন, চিটাগং হিলট্র্যাকস (ল্যান্ড অ্যাকুইজেশন, রেগুলেশন) অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের খসড়া বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালার আলোকে প্রতিবন্ধীবিষয়ক জাতীয় কর্ম পরিকল্পনার খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সংবাদপত্র ও বার্তা সংস্থার কর্মীদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ড ২০১৮ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ইতঃপূর্বে যে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়েছিল, বৈঠকে সেই কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। আগের মন্ত্রিসভার সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি করা হয়েছিল। যেহেতু নতুন মন্ত্রিসভায় আগের অনেকেই নেই, ফলে কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। সাত সদস্যের নতুন কমিটির প্রধান করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে। কমিটির বাকি ছয় সদস্য হলেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এ কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে যে সুপারিশ করবে তার আলোকেই মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রতিবন্ধী কোটা : মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হলেও প্রতিবন্ধীদের কোটা বহাল আছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলছেন, প্রশাসনিক আদেশ দিয়ে আইন কখনো অতিক্রম করা যায় না, প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কোটা ছিল, তা সেভাবেই আছে। তবে প্রতিবন্ধীদের কোটা কীভাবে কার্যকর হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা তার কথায় পাওয়া যায়নি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩’ এবং ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিধিমালা, ২০১৫’-এর আলোকে প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় কর্ম-পরিকল্পনার খসড়া গতকালের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এসব বিষয় অনুমোদন দেওয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত জানানোর সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে একজন সাংবাদিক জানতে চান কর্ম-পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধীদের জন্য চাকরির কোটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না? জবাবে শফিউল বলেন, এটা আলোচনা হয়নি। তবে আইনে যে কোটা আছে সেটা বাদ দেওয়া হয় নাই। আমাদের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অর্ডার দিয়ে আইন কখনো সুপারসিড হয় না।

প্রতিবন্ধীদের জন্য কত শতাংশ কোটা আছে- জানতে চাইলে শফিউল বলেন, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কোটা ছিল। গত বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। ওই পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেয় সরকার। কমিটি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করলে গত বছরের ৩ অক্টোবর মন্ত্রিসভা তাতে সম্মতি দেয়। পরদিন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর ৪০তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও কোটা না রাখার সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। তাহলে প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা কীভাবে থাকছে- এই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘(কোটা) যা ছিল তাই আছে। সরকার কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করার পর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫ শতাংশ কোটার দাবিতে গত নভেম্বরে শাহবাগ মোড়ে সমাবেশ করে প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীরা। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্টোবরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, কোটা বাতিল করা হলেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীরা সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় অগ্রাধিকার পাবেন। অবশ্য জোরালো আন্দোলন হলে নতুন করে কোটার ব্যবস্থা হতে পারে বলেও সে সময় ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভায় শোক : সংসদ সদস্য ও সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতা গ্রহণের পর গঠিত মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকের শুরুতেই এই শোক জানানো হয়। গত ৩ জানুয়ারি রাত ৯টা ৪০ মিনিটে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যু হয়। মন্ত্রিসভায় সৈয়দ আশরাফ স্মরণে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন। এরপর তার জীবনকর্ম ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তার অবদান তুলে ধরেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আজ আমাদের মাঝে নেই, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আশরাফকে ছোটবেলা থেকেই আমি চিনি, কামালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। সে ছাত্রলীগ করত। আমাদের মধ্যে একটা পারিবারিক সম্পর্কের মতোই ছিল। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১