বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৯

সক্রিয় হওয়ার চেষ্টায় হিযবুত তাহ্রীর

# নিষিদ্ধ হলেও অনলাইনে সচল # সুযোগ পেলেই করে ঝটিকা মিছিল

হিযবুত তাহ্রীর বাংলাদেশ ছবি : সংগৃহীত


আবারো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর। দুই দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে খেলাফত রাষ্ট্রের দাবিতে পোস্টার লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি এ সংগঠনটির ওয়েবসাইটও সচল রয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যরা আবারো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। সংগঠনটির সমন্বয়ক মওলানা মুহিউদ্দিন ২০১০ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর ঝিমিয়ে পড়ে সংগঠনের কার্যক্রম। জাকারিয়া নামে একজন বর্তমানের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি র্যাবের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর জিগাতলা থেকে হিযবুতের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে মোহাম্মদপুর থানার ইকবাল রোড থেকে গ্রেফতার করেছিল মাহমুদুল হাসান রবিন নামে হিযবুত তাহ্রীরের এক সক্রিয় কর্মীকে। তার কাছ থেকেই র্যাব সদস্যরা জানতে পারে হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যরা আত্মগোপনে থেকে সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। একটি ইসলামী এনজিওর মাধ্যমে তাদের কাছে নগদ অর্থ আসে।

এ ব্যাপারে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ গতকাল বাংলাদেশের খবরকে জানান, তাদের অর্থের উৎস সম্পর্কে আমরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সংগঠনের বড় ভাই ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জাকারিয়ার নির্দেশে সদস্যরা রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন কাজে লিপ্ত রয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হিযবুত তাহ্রীরের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জাকারিয়া ফোনে মাহমুদুল হাসান রবিনকে ঢাকায় আসতে বলে। সে অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রবিন ঢাকায় আসে এবং একটি মসজিদে রাত্রি যাপন করে। সংগঠনের পরিকল্পনা ও জাকারিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী ৮ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর থানাধীন বায়তুস সালাম জামে মসজিদের সামনে লিফলেট বিতরণের সময় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।

গত বছরের ১৩ মার্চ রাজধানীর হাজারীবাগ থানার বসিলার একটি বাসা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তারা হচ্ছে মো. রিয়াদ হোসেন (২৪), মো. জিহাদুল ইসলাম (১৯) ও শরীফ হোসেন (২৩)। তাদের কাছ থেকে একটি জিহাদি বই, ৪০টি লিফলেট, একটি ল্যাপটপ ও চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এই তিনজনই সমন্বয়কারী হিসেবে জাকারিয়ার নাম বলেছে। আরো বলেছে, জাকারিয়া সংগঠনের সদস্য সংগ্রহ করার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তারা জাকারিয়ার অবস্থান সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি র্যাবকে। বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার লক্ষ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর উলাইয়া বাংলাদেশ-এর সমর্থন, সদস্যপদ গ্রহণ, অন্যকে এই সংগঠনে যোগদানের জন্য আহ্বান এবং রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য প্রচারের মিশন নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নেওয়ার প্রাক্কালে তাদের গ্রেফতার করে র্যাব।

সূত্র জানায়, জাকারিয়ার নেতৃত্বে কমপক্ষে ১০ জনের একটি দল গোপনে সক্রিয় রয়েছে। এরা আত্মগোপনে থেকে হিযবুত তাহ্রীরকে পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছে বলে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়ারা পুলিশ ও র্যাবকে তথ্য দিয়েছে। র্যাব ও র্যাবের বিশেষায়িত ইউনিটসহ একাধিক টিম জাকারিয়াকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে চেষ্টা চালাচ্ছে।

গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে বিদেশি অর্থায়নে বাংলাদেশে পরিচালিত একটি এনজিওর উত্তরা অফিসে হিযবুত তাহ্রীরের ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদকে প্রধান সমন্বয়কারী করা হয়। ২০০৩ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশে দলটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। এক মাস পর মার্চ থেকেই দলটির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। কাজের সুবিধার্থে দলটি রাজধানীতে ১৩টি গোপন আস্তানা গড়ে তোলে। দলটির আদি আস্তানা গড়ে তুলতে সহায়তা করে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ সংগঠন ছাত্রশিবির। শুরু হয় সদস্য সংগ্রহ ও দাওয়াতি কাজ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি তারা।

নাশকতামূলক তৎপরতা ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৪ অক্টোবর সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা মুহিউদ্দিনকে ৫ সহযোগীসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা হচ্ছে সাইদুর রহমান ওরফে রাজীব, কাজী মোরশেদুল হক ওরফে প্লাবন, এমএ ইউসুফ, তানভীর আহমেদ ও তৌহিদুল আলম চঞ্চল। এর মধ্যে তৌহিদুল আলম জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। এরপর শুরু হয় পুলিশি অভিযান। অভিযানে বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই, উগ্র ভাষায় লেখা লিফলেট, ট্রেনিং বেল্ট, বিভিন্ন দেশের জঙ্গি প্রশিক্ষণের ভিডিও ফুটেজসহ নানা ধরনের আলামত জব্দ করা হয়। একে একে হিযবুত তাহ্রীরের মুখপাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, দলটির প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গোলাম মাওলা ও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ প্রায় ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারপরও থেমে নেই সংগঠনটির কার্যক্রম। দিন দিন তারা আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, হিযবুতের কার্যক্রম নজরদারিতে রয়েছে। এরপর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাঝেমধ্যে পোস্টার লাগানো ও লিফলেট বিতরণ চলছে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি হিযবুত তাহ্রীরের কার্যক্রম দেখলেই পুলিশকে জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর সুযোগ পেলেই ঝটিকা মিছিল করার চেষ্টা করে। তার মানে ওরা আছে, ঘাপটি মেরে আছে। গোয়েন্দারা কাজ করছেন, যেখানেই থাক তারা ধরা পড়ে যাবে। কাউকে এ ধরনের লিফলেট লাগাতে দেখলে পুলিশকে খবর দেওয়ার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১