আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০১৯
ফরিদপুরের নগরকান্দায় জামাল ও কামাল বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিন দিন বেড়েই চলেছে। হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেও বহাল তবিয়তে রয়েছে দুই ভাইয়ের সন্ত্রাসী বাহিনী। ইতোমধ্যে একাধিক হত্যাকাণ্ড বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এ বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হয় স্কুলছাত্র আলাউদ্দিন মাতুব্বর অন্তর। তারা অন্তরকে অপহরণ করে একটি বাগানে নিয়ে হত্যা করে লাশ মাটিতে পুঁতে রাখে। অন্তর হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এছাড়া জামাল-কামাল বাহিনীর সদস্যরা এর আগে নৃশংসভাবে হত্যা করে নগরকান্দা উপজেলার রামনগর এলাকার মাইক্রোবাসচালক শাহজাহানকে। শুধু তাই নয়, এরা গত ৩১ মার্চ সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর গাড়ি বহরে হামলা চালায়। এই বাহিনীর নৈরাজ্যের সর্বশেষ সংযোজন বয়োবৃদ্ধ সোবহান মাতুব্বর হত্যা। স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ এলাকাবাসী ইতোমধ্যে এদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। প্রভাবশালী ক্ষমতাসীন দলনেতা জামাল ও কামাল বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রতিদিন সেখানে চলছে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ। জামাল-কামাল বাহিনী ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরকান্দা ও সালথা থানার বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মেতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সেখানে বিবদমান দুইটি গ্রুপ রয়েছে। মূলত আধিপত্য বিস্তারের জেরে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ওপর হামলে পড়ে। সোবহান মাতুব্বর হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। স্থানীয় সূত্রগুলোর মতে, ফরিদপুরের নগরকান্দা-সালথা নির্বাচনী এলাকায় ভয়ংকর হিসেবে পরিচিত জামাল-কামাল বাহিনী। নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কোনাগ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কোন্দল চলে আসছিল। স্থানীয় সাহাবুদ্দিন মেম্বার গ্রুপ ও বাবুল মোল্লা গ্রুপের দ্বন্দ্বে এলাকায় বেশ কয়েক দফা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সাহাবুদ্দিন মেম্বার সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সমর্থক। অন্যদিকে বাবুল মোল্লা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জামাল হোসেন মিয়া ও জেলা পরিষদের সদস্য কামাল হোসেন মিয়ার সমর্থক। জামাল-কামাল বাহিনী এলাকায় শক্তিশালী হওয়ায় তারা সাহাবুদ্দিন মেম্বারের সমর্থকদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায়। গত তিন মাসে কয়েক দফা হামলা চালিয়ে জামাল-কামাল বাহিনীর সদস্যরা অর্ধশতাধিক বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে কয়েকজনকে। শুধু তাই নয়, অতিসম্প্রতি সন্ত্রাসীরা ফরিদপুরের নগরকান্দায় সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর গাড়িবহরে হামলা চালায়। হামলার প্রতিবাদে ও আওয়ামী লীগ নেতা জামাল মিয়াকে গ্রেপ্তারের দাবিতে সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। এ সময় গাড়িবহরে হামলাকারীদেরও গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। ওই মানববন্ধনে বক্তব্য দেন নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব ফকির, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য কাজী শাহ জামান বাবুল, সালথা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর, চরযশোরদী ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান তালুকদার, ডাঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান কালাম কাজী, ফুলসূতি ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন প্রমুখ। বক্তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী জামাল হোসেন মিয়া ও তার ভাই জেলা পরিষদ সদস্য কামাল হোসেন মিয়া গোটা নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। জামাল-কামাল বাহিনী নগরকান্দা-সালথায় একের পর এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। ওই দুই ভাই পরিচালিত বাহিনীর সদস্যরা প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। জামাল-কামাল বাহিনী খুন, চাঁদাবাজি, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট অব্যাহত রেখেছে। এই বাহিনী সংসদ উপনেতাকে হত্যার জন্য তার গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছিল। অস্ত্রধারী থেকে নেতা: জামাল-কামাল দুই ভাই সালথা ও নগরকান্দা এলকার ত্রাস। তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতা। একজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা অপরজন জেলা পরিষদের সদস্য। বড় ভাই জামাল পুলিশের খাতায় অস্ত্রধারী হিসেবে চিহ্নিত। সূত্রমতে, এর আগে জামাল রাজধানীর বাড্ডা থানায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধরা পড়েছিল। কিন্তু স্বল্পসময়ের ব্যবধানে জামিনে মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসে। স্থানীয় অধিবাসীরা অভিযোগ করেছে, নগরকান্দা ও সালথায় জামাল-কামাল বাহিনীর সন্ত্রাসীরা এতোটাই বেপরোয়া যে তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ টু শব্দ করতে সাহস পায় না। জামাল-কামাল বাহিনীর অত্যাচারে নগরকান্দা-সালথার অনেকেই এলাকা ছেড়ে বর্তমানে ফরিদপুর ও ঢাকায় বসবাস করছে। এ বাহিনীর সদস্যরা সুযোগ পেলেই প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর হামলে পড়ে। সোবহান মাতুব্বর হত্যা গত ২৫ মার্চ জামাল ও কামাল বাহিনীর ২৫-২৬ জন সদস্য হাতুড়ি, লোহার রড, কাঠের বাটাম দিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে সোবহান মাতুব্বরকে। সন্ত্রাসীদের হাতুড়ির আঘাতে তার সারা শরীর থেঁতলে যায়। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটালেও কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। সোবহান মাতুব্বরকে মেরে চলে যাওয়ার সময় তারা অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দেয় কেউ এই ঘটনা নিয়ে কোনো কথা বললে তার পরিণতি হবে সোবাহান মাতুব্বরের মতো। ওই দিন সংজ্ঞাহীন অবস্থায় সোবহানকে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর অবস্থা অবনতি হলে তাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ১২ দিন পর ৫ এপ্রিল মারা যান তিনি। এই ঘটনায় থানায় বেলায়েত, সৈয়দ আলী, সামাদ মাতুব্বর, শাহজাহান শেখ, বাবুল মোল্লা, সাদি মোল্লা, লাবুন মোল্লা, জাফর, সুজাত, ইউনুস, হাকিম, মোসলেম, রেজওয়ান, আলী মোল্লা, আজিজুল মাতুব্বর, সিরাজ শেখ, শাহ আলম, শহিদুল ইসলাম, আপান শেখসহ আরো কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। জামালের নির্দেশেই সোবহানকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সোবহান মাতুব্বর হত্যার ঘটনায় বাবুল মোল্লা ও লাবুন মোল্লা নামের দুজনকে আটক করা হয়েছে। ফুঁসে উঠছে নগরকান্দাবাসী জামাল-কামাল বাহিনীর অব্যাহত উৎপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ফরিদপুরের নগরকান্দার মানুষ। প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা না পেয়ে তারা হত্যাকারীচক্রের সদস্যদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে একাট্টা। শুধু সোবহান মাতুব্বর হত্যা নয়, এর আগে রামনগর ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় জামাল-কামাল বাহিনীর সদস্যরা রাতের বেলা বাড়ি থেকে ডেকে শাহজাহানকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ গমক্ষেতে ফেলে রাখে। ওই ঘটনার পর এলাকার মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে জামাল-কামালসহ ইউপি চেয়ারম্যানের ফাঁসি চেয়ে মিছিল-সমাবেশ করে। সোবহান মাতুব্বর হত্যার ঘটনায়ও নগরকান্দার কোনাগ্রাম ও আশপাশ এলাকার মানুষ ফুঁসে উঠেছে। তারা জামাল ও কামালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তোপের মুখে জামাল-কামাল বাহিনী সদস্যরা আত্মগোপনে চলে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন মেম্বার জানান, ওরা একেকটি ঘটনা ঘটিয়ে মাত্র কয়দনের জন্য গা ঢাকা দেয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার এলাকায় ফিরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তিনি আরো বলেন, এলাকবাসী ওদের কৌশল বুঝতে পেরেছে। এখন ওই দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করে মানুষ ঘরে ফিরে যাবে না।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১