বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০১৯

মহানবীর (সা.) চোখে কন্যাসন্তানের ভালোবাসা


কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলেই হত্যা, অত্যাচার, অবহেলা ও জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলার মতো ভয়ঙ্কর এক দুঃসময় যখন অতিক্রম করছিল পৃথিবী, তখন মেয়েদের উদ্ধার করে সম্মান ও গৌরবময় জীবনযাপনের অধিকার নিশ্চিত করতে আবির্ভূত হলেন বিশ্ব কল্যাণের নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)। তিনি কন্যাসন্তানকে মানবীয় মর্যাদায় সমাসীন করেছেন এবং তার মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন। তিনি সবসময় ভাবতেন কীভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো যায় বা এই অত্যাচার, হত্যা বন্ধ করা যায়। কোনো পদক্ষেপ নিলে নারীর সন্মান সমাজে বৃদ্ধি পাবে। তার মেহনতি প্রচেষ্টায় বন্ধ হলো কন্যাসন্তান হত্যা। তিনি দিলেন তাদের সন্মান বাড়িয়ে। কন্যাসন্তান যে ঘরে প্রথমে জন্মগ্রহণ করবে সেই ঘরে আল্লাহতায়ালা রহমত নাজিল করবেন। ঘোষণা করে দিলেন, যার একটি কন্যাসন্তান সে একটি জান্নাতের মালিক।

তিনি তার কন্যাসন্তানকে ভালোবেসে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন কীভাবে ভালোবাসতে হয় কন্যাসন্তানকে। কোথাও গেলে মেয়ে ফাতিমাকে বলে যেতেন ফিরে এলে প্রথমে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতেন। মেয়েকে না দেখলে তার মনটা ছটফট করত। তাই আলী (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে নবী (সা.) বললেন, হে আলী ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা, কখনো ফাতিমাকে কষ্ট দিও না। ফাতিমা আমার জান, ফাতিমাই আমার প্রাণ। আর কন্যাসন্তানই বিচার দিবসের জাহান্নামের আগুনের অন্তরায় হবে।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘একবার আমার ঘরে একজন নারী এলেন, তার সঙ্গে দুই কন্যাসন্তান। ওরা তিনজন ক্ষুধার্ত। তারা আমার কাছে সাহায্য চাইলে আমার কাছে থাকা একটি খেজুর তাকে দিলে সেই নারী তার দুই কন্যাকে সমানভাবে ভাগ করে দিয়ে দিলেন। নারী কিছুই নিলেন না। তারা চলে গেলেন। একটু পর রসুল (সা.) এলেন। আমি তাকে ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, যে বাবা-মা কন্যাদের ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে, বিচারের দিবসে এই কন্যারাই তার জন্য জাহান্নামের আগুনের অন্তরায় হবে।’ (মিশকাত-৪৯৪৯)

আজ কন্যাসন্তান জন্ম হলে কাউকে জানানো হয় না, এমনকি নিজ আত্মীয়কেও দেওয়া হয় না কন্যাসন্তান জন্মের খবরটি। অন্যদিকে ছেলেসন্তান জন্ম হলে বাড়িতে শুরু হয় আনন্দের বন্যা। আয়োজন হয় বিশেষ ভোজের। ছেলেসন্তান হলে লেখাপড়া শিখিয়ে চাকরি করবে, টাকা উপার্জন করে আমাদের দেবে। ছেলের বিয়েতে কন্যাপক্ষ থেকে আনা যাবে মোটা অঙ্কের টাকাসহ ঘর সাজাতে ফার্নিচার। কন্যাসন্তান জন্ম হলে সে চাকরি করতে পারবে না, আবার মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে দিতে হবে ছেলেকে যৌতুক। তাই কন্যাসন্তান জন্ম হওয়াটাকে আমাদের সমাজে জরিমানা মনে করা হয়। অযত্নে অবহেলায় রাখা হয় কন্যাসন্তানকে।

খাবারসহ জামাকাপাড়ে দেওয়া হয় তাকে কষ্ট, অথচ কন্যার কারণে আল্লাহতায়ালা জান্নাত দেবে পিতামাতাকে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, এমন স্ত্রী উত্তম ও বরকতময়- যার মোহরের পরিমাণ কম। এমন স্ত্রী উত্তম ও বরকতময়, যার প্রথম সন্তান কন্যা। রসুল (সা.) বলেন, ‘যার গৃহে কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করেছে, অতঃপর সে তাকে কষ্ট দেয়নি, তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়নি এবং পুত্রসন্তানকে প্রাধান্য দেয়নি, তাহলে ওই কন্যার কারণে আল্লাহ তাকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। (মুসনাদে আহমদ-১:২২৩)

প্রিয় পাঠক, আমাদের সচেতন হওয়ার সময় হয়ে গেছে। আর কন্যাসন্তানদের অবহেলা করা যাবে না। যারা করছে তাদের বোঝানোর দায়িত্ব আমাদের। তাদের বলতে হবে, যে ছেলে আল্লাহ দান করেছেন, সেই আল্লাহ কন্যাসন্তান দান করেছেন। তাই কন্যাসন্তান জন্ম হলে আমাদের উচিত আনন্দের সঙ্গে তাকে বরণ করে নিয়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। এই কন্যাসন্তান আল্লাহর বিশেষ রহমত আর আমাদের জন্য তার পক্ষ থেকে এক নিয়ামত। তাই তাকে আদর-যত্নে বড় করে সঠিকভাবে পর্যাপ্ত শিক্ষা দেওয়া উচিত। কয়েকদিন পর বিয়ে দিয়ে দেব কিসের এত লেখাপড়া! এই কুরুচিপূর্ণ মানসিকতা পালন না করে উত্তম শিক্ষা, আদব-কায়দা শিক্ষা দিয়ে সঠিকভাবে লালন-পালন করে বিবাহের বয়স হলে ভালো ইসলামী আদর্শ মোতাবেক যে ছেলে জীবন পরিচালনা করে এমন পাত্র দেখে বিবাহ দিতে পারলে অবশ্যই সেই কন্যার পিতা-মাতা উত্তম প্রতিদান পাবেন।

হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.) বলেছেন, যার তিনটি কন্যাসন্তান হয় আর সে তাদের লালন-পালন করে তাদের প্রতি মমতা দেখায় এবং তাদের ভার বহন করে, তাহলে তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত। প্রশ্ন করা হলো, যদি দুজন হয়? রসুল (সা.) বললেন, দুজন হলেও।’ হজরত জাবের (রা.) বলেন, ধারণা করা হয় কেউ যদি নবীজিকে বলতেন যদি একজন হয়, তাহলে নবীজি (সা.) বলতেন, ‘একজন হলেও।’

আসুন ভালোবাসি কন্যাসন্তানকে; আদর-যত্নে ভরে তুলি কন্যাসন্তানকে। রসুল (সা.) বলেন, ‘যে পিতা-মাতা কন্যাসন্তানকে ভালোভাবে লালন-পালন করবে, সে আর আমি পাশাপাশি জান্নাতে প্রবেশ করব। এরপর তিনি দুটি আঙুল ইশারা করে দেখালেন।’ (তিরমিজি-১৯২০) 

 

লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১