কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত লাখ লাখ রোহিঙ্গা এই বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যায় ঝুঁকিতে দিনাতিপাত করছেন। ভারী বৃষ্টি শুরু হলে জলাবদ্ধতার কারণে বন্যা এবং পাহাড়ি ঢালের মাটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর।

অবাধে বন কেটে ও পাহাড়ের খাড়া ঢালে ঘর তৈরি না থামায় এ ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে বলেও জানানো হয় আবহাওয়া দপ্তরের পক্ষ থেকে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, উখিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে পাহাড় কেটে কেটে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে বসবাস করছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বছর দেড়েক আগেও যেখানে পর্যটন এলাকা কক্সবাজার ও টেকনাফের আঁকাবাঁকা রাস্তাগুলোর দুই পাশে গাঢ় সবুজ ঘন জঙ্গলসহ পাহাড় ছিল। অবাধে সেসব পাহাড় ও বনের গাছপালা কেটে ঘর তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে ঝুপড়ি ঘরের সংখ্যাও।

উখিয়া রোহিঙ্গা শিবিরের মাঝি আবদুল হক জানান, এবার এখনো সেই রকম ভারী ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়নি। মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। অপেক্ষায় আছি ঘরগুলো যদি এর আগেই আরো শক্ত করে বেঁধে দেয়। বর্ষায় দিনের চেয়ে রাতটা বেশি ভয়ে কাটে। ভারী বর্ষণ হলে নির্ঘুম রাত কাটে। আমাদের ঘরগুলো খুবই দুর্বল। বাতাস হলেই নড়াচড়া করে। তখন ছেলেমেয়েরা খুব ভয় পায়। সামান্য বৃষ্টিতেও আশ্রয় শিবিরে ভয়াবহ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। আবার রোদেও কষ্ট কম না। গরমে কুঁড়ে ঘরে হাঁসফাঁস করতে হয়।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা গেছে, ১৯৭৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় বছরে গড়ে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুনে তা বেড়ে ৮০০ এবং জুলাই মাসে তা ১০০০ মিলিমিটার হয়। এপ্রিল ও মে মাস থেকে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও থাকে।

অন্যদিকে জেলা বন বিভাগ জানিয়েছে, উখিয়া রেঞ্জে কুতুপালং, থাইংখালী, বালুখালী-১, বালুখালী-২, মধুরছড়া, তাজমিনার ঘোনা, নকরার বিল, সফিউল্লাহঘাটা, বাঘঘোনা, জামতলী, টেকনাফের চাকমারকুল, পুটিনবনিয়া, শামলাপুর, লেদা, নয়াপাড়া, জাদিমুড়া, শালাবাগানসহ আশপাশের পাহাড় কেটে রোহিঙ্গারা বসতি গড়ে তুলেছে। মোট ৮ হাজার একর জায়গায় পাহাড়ি বন কেটে রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। টানা বৃষ্টি হলে এসব জায়গা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হয়।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশবিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস)-এর প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন জানান, পাহাড়গুলো কেটে যে হারে ঘর নির্মাণ করেছে, তাতে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আবার বনের গাছপালা কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। এ অবস্থায় সামনের বর্ষা মৌসুমে যে কোনো সময় বড় ধরনের পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, বর্ষায় দুর্ঘটনা এড়াতে এপ্রিল থেকেই রোহিঙ্গা শিবিরে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কী পরিমাণ রোহিঙ্গা ঝুঁকিতে রয়েছে এটা তালিকা শেষে বলা যাবে। তবে কোনো মানুষ যাতে ভূমিধস ও বন্যার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ না করে সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, ভূমিধসে রোহিঙ্গারা যদি প্রাণ হারায় তবে বাংলাদেশ দায়ী থাকবে না। তার মতে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে বিরোধিতাকারীরাই এ জন্য দায়ী থাকবে।