বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০১৯

বেঁচে থাকলে ৫৮-তে পা রাখতেন বাচ্চু ভাই


হিসাবটা বড় নির্দয়। মানুষ মারা গেলেই বন্ধ হয়ে যায় জন্মদিনের উৎসব। স্মৃতি এসে ভিড় করে এসব দিনে। দেশের কিংবদন্তি রকস্টার আইয়ুব বাচ্চুর বেলায়ও তাই। মারা গেছন এক বছরও পূর্ণ হয়নি। এখনই তার জন্মদিনে স্মৃতি হাতড়াতে হচ্ছে আমাদের।

গতকাল ১৬ আগস্ট জন্মের ৫৭ বছর পূর্ণ হলো এই মিউজিশিয়ানের। বেঁচে থাকলে আজ ৫৮ বছরে পা দিতেন মানুষটি। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি।

মা-বাবার আদরের ছেলে। তাই বলে যে সংগীতচর্চার জন্য খুব একটা অনুকূল পরিবেশ তিনি পেয়েছিলেন, তা কিন্তু নয়। সেই ছোটবেলা থেকেই সংসারে থেকেও বোহিমিয়ান আইয়ুব বাচ্চু। বাউণ্ডুলে স্বভাবের জন্য সংসারের কিছুই যেন স্পর্শ করতে পারছিল না তাকে। বাবার ব্যবসায় মন বসে না, লেখাপড়ায় মন বসে না। অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ ছিল তার।

মাত্র ৬০০ টাকা নিয়ে ১৯৮৩ সালে ঢাকায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। উঠেছিলেন এলিফ্যান্ট রোডের এক হোটেলে। এরপর বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্ব্বী তারকা হয়ে উঠলেন প্রতিভা আর কঠোর পরিশ্রমে। গিটার হাতে মঞ্চে গাইলে অগুনতি দর্শক কণ্ঠ মেলাতেন তার সঙ্গে। তার গিটারের ঝংকারে বিদ্যুৎ বয়ে যেত তরুণ-তরুণীদের শিরা-উপশিরায়। ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন ‘বস’। কারো কাছে ‘স্যার’। আমাদের কাছে গুরুতুল্য মানুষটি ছিলেন ‘বাচ্চু ভাই’।

বাচ্চু ভাই সোলস ছেড়ে ১৯৯০ সালের ৫ এপ্রিল নিজের ব্যান্ড দল প্রতিষ্ঠা করলেন, যার নাম রাখলেন ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’। পরবর্তী সময়ে এর নাম বদলে রাখা হয় ‘লাভ রান্‌স ব্লাইন্ড’। সেই বছরই এলআরবি তাদের যাত্রা শুরু করে একটি ডাবল অ্যালবাম দিয়ে, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ডাবল অ্যালবাম। এই অ্যালবাম দুটির বেশ কিছু গান খুব জনপ্রিয় হয়, যা আজো আমাদের কানে বাজে।

নিজে যেমন বিভিন্ন সময়ে নানান ব্যান্ডের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন, তেমনি এলআরবি গঠনের পর সেটাকেই একটা পরিবারের মতো গড়ে তুলেছিলেন। বলতেন, এটা আমার আরেকটা পরিবার। কিন্তু এই দল থেকেও বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন সদস্য বেরিয়ে গেছেন। দল থেকে বেরিয়ে কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। কি-বোর্ডিস্ট এস আই টুটুল এলআরবি ছেড়ে চলে গেলে ব্যান্ডে আর কোনো কি-বোর্ডিস্ট নেননি তিনি।

আমার মনে পড়ে, ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট শেষ জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন বাচ্চু ভাই। ভক্তদের সময় দেন ওই দিনটিতে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে আমিও ফোন করেছিলাম। সেদিনও সংগীত নিয়ে নিজের অনেক পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন। তার শতায়ু কামনা করেছিলাম আমরা। কিন্তু হায়, কে জানত আর একটা জন্মদিন পালনের সময়ও পাবেন না তিনি!

বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে অনেক স্মৃতি আছে আমার। আমার সংগীত জীবনটা চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়। সঙ্গত কারণেই বাচ্চু ভাইদের সংগীত প্রেমটা নিজের চোখে দেখেছি। একই মঞ্চে বহুবার বাজিয়েছি। মানুষটার সংগীতের প্রতি প্রেম আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে সংগীতে নিবেদিত হতে।

বাচ্চু ভাই নাই আজ। জন্মদিনের কেক কাটার জন্য তাকে আর ডেকে পাওয়া যাবে না। কিন্তু নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে তিনি বিদায় জানিয়েছেন পৃথিবীকে, তা বহু বছর ধরে মানুষকে আন্দোলিত করবে। ভরে রাখবে সংগীতের নিবিঢ় মাদকতায়।

 

সুমন কল্যাণ

লেখক : মিউজিক ডিরেক্টর


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১