বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

এনআরসি থেকে বাদ পড়ারা কী করবেন


গতকাল শনিবার প্রকাশ করা হয়েছে ভারতের আসামের নতুন নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি। ভারত সরকার বিদেশিদের চিহ্নিত করতে ১৯৫১ সালে প্রথমবার আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি করেছিল। কয়েক বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট ফের সেই তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেন। সেইমতো চার বছর ধরে তালিকা প্রস্তুত হয়। গত বছর জুলাইতে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। শনিবার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হলো। তাতে মোট ১৯ লাখ লোকের নাম বাদ পড়েছে। খসড়া তালিকায় বাদ পড়া তিন কোটি ১১ লাখ লোকের নাম চূড়ান্ত তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ার পরে যে প্রশ্নটি সবার মনে জেগে উঠেছে তা হলো, যারা বাদ পড়েছেন তারা এবার কী করবেন? যদিও ইতোমধ্যে কেন্দ্র ও আসাম সরকার মানুষকে আশ্বাস দিয়ে বলেছে, যারা এনআরসি থেকে বাদ পড়েছেন তাদেরকে এখনই বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হবে না। এখনই তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের বাংলাদেশেও পাঠানো হবে না।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যাদের নাম এনআরসিতে নেই, তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন। প্রথমে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল পরে দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে নাম অন্তর্ভুক্তির আবেদন করতে পারবেন। তবে ট্রাইব্যুনালে হেরে গেলেও সব আশা শেষ হয়ে যাচ্ছে না। কারণ তারপর হাইকোর্ট এবং সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগ থাকছে। কিন্তু ভারতের বিচারব্যবস্থা এমনিতেই দীর্ঘমেয়াদি। তার ওপর প্রতিটি আদালতেই সাধ্যের অতিরিক্ত মামলার বোঝা রয়েছে। এ অবস্থায় নাগরিকত্ব প্রমাণের সম্ভাব্য দীর্ঘ এবং জটিল আপিল আবেদন প্রক্রিয়া দেশটির আদালতকে আরো ভারাক্রান্ত করবে।

এদিকে নাগরিকপঞ্জি থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে, তারা মূলত অতি দরিদ্র এবং বেশির ভাগই মুসলমান। যদিও কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের আশঙ্কা, বাঙালি অনেক হিন্দুর নামও তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। সে ক্ষেত্রেও দেখা যাবে গরিব লোকজনই আসলে বাদ পড়েছেন। দরিদ্র এ মানুষগুলো আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘোরার এবং মামলা লড়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কোথা থেকে পাবে সেটাও বড় প্রশ্ন।

এ প্রসঙ্গে আসামের লেখিকা সংগীতা বড়ুয়া পিশারতি বিবিসিকে বলেন, যাদের নাম তালিকায় নেই তারা এরই মধ্যে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত। তার অন্যতম প্রধান কারণ ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের অসহযোগিতাপূর্ণ আচরণ। অনেকেই এটা নিয়ে অভিযোগ করছেন। ফলে তাদের ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে এটা ভেবেই অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া শেষে যারা বিদেশি বলে ঘোষিত হবেন, তাদের নিয়ে কী করবে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এর আগে বেশ জোর দিয়েই ‘অবৈধ মুসলমান অভিবাসীদের’ বাংলাদেশে বিতাড়নের কথা বলেছিল। কিন্তু প্রতিবেশী বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই তাদের গ্রহণ করবে না। যদিও বাংলাদেশ সরকার চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।

নাগরিকপঞ্জিতে বাদ পড়াদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে বলে যে আলোচনা তা নিয়ে বাংলাদেশের ভেতরেও উদ্বেগ রয়েছে। কারণ ইতোমধ্যেই প্রতিবেশী আরেক দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। নতুন আরো শরণার্থীর বোঝা তারা নিতে চাইছে না।

তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি ঢাকা সফরে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেন, এটা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

বিদেশি ঘোষিত হওয়া লোকজনকে যদি বিতাড়ন করা না-ও করা হয়, সে ক্ষেত্রে তারা নিজেদের সম্পত্তির দখল পাবে কি না বা একজন নাগরিক যেসব সামাজিক সুবিধা পান, সেগুলো পাবেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।  হতে পারে বন্দিশিবির থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তাদের মৌলিক কিছু সুযোগ-সুবিধাসহ কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু তারা আর ভোট দিতে পারবেন না।

উল্লেখ্য, আসামে মোট ১০০টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল আছে। তার মধ্যে ৫৬টি ট্রাইব্যুনালে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানানো যাবে। সরকার শিগগিরই আরো ২০০টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তৈরি করবে। তার জন্য ২২১ জনকে ইতোমধ্যে নির্বাচন করা হয়েছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১