বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০১৯

৬০ বছর ধরে দুর্গাপূজার মূল উদ্যোক্তা মুসলমানরা


ভারতের কলকাতা শহরেই ৬০ বছর ধরে হয়ে আসছে একটি দুর্গাপূজার আয়োজন, যেটির মূল উদ্যোগটাই নেন মুসলমানরা। কলকাতা বন্দরের কাছাকাছি মুসলমানপ্রধান খিদিরপুরের মুন্সীগঞ্জ এলাকায় সেই পূজার খোঁজ বাইরের মানুষ খুব একটা রাখেন না হয়তো।

বিবিসি বাংলা এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে গতকাল শনিবার। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাড়ার মানুষের কাছে ঈদের মতোই উৎসবের সময় দুর্গাপূজা বা কালী পূজা। দুর্গাপূজার আদতে হিন্দু বাঙালিদের সব থেকে বড় উৎসব হলেও কালে কালে তা অন্যান্য ধর্মের মানুষের কাছেও হয়ে উঠেছে উৎসবের সময়।

পূজার সময়ে হিন্দুদের মতোই মুসলমান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন-সবাই মেতে ওঠেন উৎসবে। অনেক জায়গায় পূজার উদ্যোগেও জড়িয়ে থাকেন নানা ধর্মের মানুষ, যেমনটি মুন্সীগঞ্জের এই আয়োজন। তিন রাস্তার মোড়ে বেশ সাদামাটা প্যান্ডেল হয়। বাহুল্য খুব একটা নেই। বিবিসি বাংলা জানায়, পূজার কদিন আগে প্যান্ডেল তৈরি করে তার পাশেই চলে দুর্গা প্রতিমা গড়ার শেষ মুহূর্তের কাজ। সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ছোট্ট সলমান সর্দার। উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করেন বিরাট হাঁ করে থাকা দুর্গার বাহন সিংহের মুখের মধ্য দিয়ে ভেতরে কিছু দেখা যায় কি না। সলমন বলেন, দুর্গাপূজায় খুব মজা হয়। ঠাকুর দেখতে যাই। ফুচকা আর আইসক্রিমের দোকান বসে, খাই- দোলনায় চাপি। আবার আমাদের পুজোয় চলে আসি।

পূজাটিকে সলমান যেমন ছোটবেলা থেকেই ‘আমাদের পূজা’ বলে ভাবতে শিখেছেন, তেমনই নিজেদের পূজা বলেই মনে করেন পাড়ার সবাই। পূজা কমিটির প্রধান প্রেমনাথ সাহা বলেন, ‘৬০ বছর ধরে এভাবেই পূজা হয়ে আসছে। আমাদের মামা, দাদাদের দেখেছি সবাই মিলে দুর্গাপূজা-কালী পূজা-ঈদ-মহররম পালন করতে, আমরাও সেভাবেই করি। আবার আমাদের জুনিয়ার যারা বড় হয়েছে, তারাও পূজার কাজে এগিয়ে আসে। চাঁদা তোলা, ঠাকুর নিয়ে আসা, ভাসান দেওয়া- সবেতেই সবাই থাকি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এই তো মহররম গেল। আমরাও বাজার করেছি, খাবার বিলি করেছি, জল দিয়েছি। কখনো কোনো সমস্যা হয় না এ পাড়ায়। বিরানব্বইয়ের বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে যখন সারা দেশ জ্বলছিল, তখনো এ পাড়ায় তার আঁচ পড়েনি।’

পূজার আরেক উদ্যোক্তা শেখ বাবু বলেন, ‘ঠাকুর নিয়ে আসতে যাই আমরা, প্যান্ডেলে ঠাকুর তোলা, দেখভাল-সবই মুসলমানরা করি হিন্দু ভাইদের সঙ্গে। কিন্তু প্রতিমার কাছে যারা পূজায় বসেন তারা হিন্দু, কারণ সেই কাজে তো মন্ত্র লাগে! আমি তো আর মন্ত্র জানি না!’

এদিকে শাস্ত্র বা মন্ত্র না জানলেও পূজার ব্যবস্থাপনায় পাড়ার মুসলমান ছেলেরাই সামনের সারিতে থাকেন। প্যান্ডেল কর্মীদের কাজ দেখভালও করেন। তেমনই একজন মুহম্মদ নাজিম। তিনি বলেন, ‘আসলে এটা রেডলাইট এলাকা তো। যেসব মানুষ এখানে থাকেন, বিশেষ করে মহিলারা, তারা কেউ একটা জাত বা ধর্মের তো নয়। আবার যারা আসেন এ পাড়ায়, তারাও নানা জাত-ধর্মের। তাই আমাদের পাড়ায় জাতপাত-হিন্দু-মুসলিম ব্যাপারটাই নেই। একটা হিন্দু বাড়ির বাচ্চা আর মুসলিম বাড়ির বাচ্চা ছোট থেকেই একসঙ্গে বড় হয়। তারা এই ভাগাভাগিটা ছোট থেকেই দেখে না। আমরাও যেমন ছোট থেকে এভাবেই বড় হয়েছি।’

বিবিসি বাংলা জানায়, পূজা এলো বলে ভরদুপুরে চাঁদার বিল নিয়ে বের হন কজন তরুণ। তারা দোকানিদের বলেন, বছরে একবারই দুর্গাপূজা। একটু বুঝেশুনে চাঁদাটা দেবেন কাকা। তবে আপনার যা মন চায় তাই দেবেন।

সেই চাঁদা তোলার দলেরই একজন মুহম্মদ সেলিম বলেন, ‘আগে আমাদের পূজায় আর্টিস্ট এনে শো হতো। এখন খরচ এত বেড়ে গেছে, সেসব বাদ দিতে হয়েছে। পাড়া প্রতিবেশী আর রাস্তা থেকে চাঁদা তুলে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মতো ওঠে। তাই দিয়েই পূজা করতে হচ্ছে।’

আনন্দের বিষয়, আর কত দিন নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে শুধু চাঁদা তুলে পূজা চালিয়ে যেতে পারবেন, সেই চিন্তা রয়েছে মুন্সীগঞ্জের এই পাড়ার বাসিন্দাদের। ধর্মের চমৎকার বন্ধনের এ গল্প সত্যিই ভালোবাসা শেখায়। দেয় শিক্ষা ধর্ম যার যার উৎসব সবার।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১