বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাঘের থাবায় স্বামী হারানো রাশিদার মানবেতর জীবন


জেলার শ্যামনগর উপজেলার মধু আহরণকারীদের গ্রাম নামে পরিচিত গাবুরা গ্রামের বাসিন্দা রাশিদা খাতুন (৪৭)। নিজের জীর্ণ কুঁড়েঘরে কাতর স্বরে রাশিদা বলেন, ‘সবাইতো মুখ ফিরিয়ে নিলোই, আমার ছেলেরাও আমায় বলল, আমি নাকি অলক্ষ্মী! তারাও আমায় ছেড়ে গেল!’ বাঘের থাবায় স্বামীর প্রাণ যাওয়ায় রাশিদাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে ‘অলক্ষ্মী’ অপবাদ। সুন্দরবনের বাঘের থাবায় স্বামীর প্রাণ হারানোর দায় এই প্রৌঢ়াকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বছরের পর বছর।

রাশিদা জানান, গাবুরা গ্রামের আরো কয়েকজনের সঙ্গে মধু আহরণে গিয়েছিলেন তার স্বামী। হঠাৎ মাঘে আক্রমণ করে তার স্বামীকে। মানুষখেকো ওই বাঘের থাবায় প্রাণও হারান তিনি। স্বামীকে হারানোর পর রাশিদার ২৪ ও ২৭ বছর বয়সী দুই সন্তানও তাকে ছেড়ে চলে যায়। রাশিদা জানান, যে ছোট্ট খুপড়ি ঘরে থাকেন তিনি, সেটার চালাও নেই। একবার এক ঘূর্ণিঝড়ে সেই চালা উড়ে গিয়েছিল। তখন গ্রামবাসীর সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পাশের ঘরের ভাঙা চালা ঠিক করছিলেন মোহাম্মদ হোসেন। জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি রাশিদাকে সাহায্য না করার কথা স্বীকার করেন। বেসরকারি সংস্থা লেডারস বাংলাদেশের প্রধান মোহন কুমার মন্ডল বলেন, বাঘ-বিধবাদের এমন অবজ্ঞার চোখে দেখার সংস্কার সুন্দরবনের গোঁড়া রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোতে দেখা যায়। অনেক সমপ্রদায় এই কুসংস্কার লালন করছে শত বছর ধরে। রাশিদার মতো আরেক ‘বাঘ-বিধবা’ রেজিয়া খাতুন। ১৫ বছর আগে তার মধু আহরণকারী স্বামীকে বাঘে খেলে রেজিয়াকেও ‘হতভাগী’ অপবাদ দেওয়া হয়। তবে তিনি ধীরে ধীরে সামলে ওঠেন। রেজিয়াকে জীবনে স্বাভাবিক করতে সমাজের মানুষের আড়ালে গোপনে সহায়তা করে আসছেন তার ভাগনে ও অন্য আত্মীয়রা। রেজিয়া বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার সময় আমার ছেলেরা খুব ছোট্ট ছিল। কেউ আমাকে তখন সাহায্য করতে এগিয়ে আসছিল না। তারা স্বামীর মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী করছিল বিধায় প্রথম দিকে আমার খারাপ লাগতো, কারণ আমি জানতাম না যে আমার অপরাধ কী। এখন আমি এই দুর্দশার মধ্যেই বেঁচে থাকার লড়াই শিখে গেছি।  এক পরিসংখ্যান মতে, ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কেবল সাতক্ষীরা জেলার ৫০ গ্রামেই বাঘের থাবায় প্রাণ গেছে ৫১৯ জনের। তাদের মৃত্যু স্ত্রীদের যেমন করেছে স্বামীহারা, তেমনি ফেলে গেছে রাশিদা-রেজিয়াদের মতোই মানবেতর জীবনে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১