বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

নাটকের সংখ্যার চেয়ে মানই আমার কাছে বড় বিষয়


আশনা হাবিব ভাবনা। ছোটপর্দার এই ব্যস্ত অভিনেত্রী আলোচনায় আসেন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। অনিমেষ আইচের ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে খুব সহজেই চলচ্চিত্রবোদ্ধাদেরও নজর কাড়েন তরুণ এই মডেল অভিনেত্রী।

এরই মধ্যে কক্সবাজারে উড়াল দিয়েছেন ভাবনা। সেখানে ভাবনা গিয়েছিলেন বিজ্ঞাপনের কাজে। সে সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। সৈকতে শিশুরা তখন মেতে আছে ফুটবল খেলায়। ভাবনা গিয়েছিলেন বিজ্ঞাপনের কাজে। তবে শিশুদের ফুটবল খেলা দেখে লোভ সামলাতে পারলেন না। নেমে পড়লেন ভাবনা নিজেও। বালুকাবেলায় বৃষ্টির জল আর ফুটবল মাখামাখি হলো অভিনেত্রীর পায়ের জাদুতে।

নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে ফুটবল খেলার কিছু ছবি শেয়ার দিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। সেখানে বৃষ্টিতে ভিজে তাকে ফুটবল খেলতে দেখা যাচ্ছে।

করোনার কারণে ভ্রমণও তেমন একটা হয়নি ভাবনার। দীর্ঘদিন পর কক্সবাজারে গিয়ে যেন নতুন প্রাণ পেয়েছেন তিনি। যে কদিন ছিলেন, বিজ্ঞাপনের শুটিং শেষে বন্ধুদের নিয়ে প্রতিদিনই আড্ডায় মেতেছিলেন। মুক্ত বাতাস, সমুদ্রের গর্জন, ঘোড়ায় চড়া- সবকিছুই আনন্দ দিয়েছে তাকে।

ভাবনা বলেন, ‘এখনো আমাদের পরিচিত অনেকেই কক্সবাজারে রয়েছে। মুক্ত বাতাসে যেন আনন্দের ছড়াছড়ি। অনেক সুন্দর সময় কেটেছে সেখানে।’

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নানা চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করে দর্শকদের হূদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ভাবনা। নিয়মিত তাকে টিভিপর্দায় দেখা না গেলেও নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন আপন কাজে।

অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পেলেও ভাবনার লেখালেখির অভ্যাস অনেক আগে থেকে। পরিবার থেকেই পেয়েছেন লেখার অনুপ্রেরণা। কারণ নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা বাবা হাবিবুল ইসলাম হাবিব লিখতেন। বাবাকে দেখে তার প্রথম আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।

ভাবনা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির অভ্যাস ছিল। বাবা লেখালেখি করতেন। তা দেখে নিজের মধ্যেও আগ্রহ তৈরি হয়। স্কুল-কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন কবিতা ও গল্প লিখতাম। বিভিন্ন পত্রিকায়ও আমার লেখা ছাপা হয়েছে। এভাবেই লেখালেখি শুরু।’

অন্যদিকে অভিনয়েও সচল রয়েছেন ভাবনা। তবে খুব বেশি কাজ না করে ভালোমানের অল্প কাজকেই প্রাধান্য দেন এ অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘সবসময় নিজেকে টিভিপর্দায় না দেখিয়ে বছরে বেছে বেছে অল্প সংখ্যক কাজ করি। লেখালেখিটা যেমন ভালো লাগা থেকে করি তেমনই অভিনয়টাও। তাই হয়তো আমাকে নাটকে কম দেখা যায়। তবে যা করি তা দেখে দর্শকরা পরিতৃপ্ত হন।’

নাটকে চরিত্র নিয়ে ভাবনা বলেন, ‘যেহেতু টিভিপর্দায় নিজেকে বারবার দেখানোর ইচ্ছে আমার একেবারইে নেই। তাই বেছে বেছে কাজ করি। নাটকের সংখ্যার চেয়ে মানই আমার কাছে বড় বিষয়। অনেক প্রস্তাব এলেও সব করি না। কাজের ক্ষেত্রে নাটকের স্ক্রিপ্ট ও চরিত্রের গুরুত্ব বিবেচনা করেই কাজ করে থাকি। একই চরিত্রে বারবার অভিনয় না করে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে নিজেকে ভাঙতে চাই।’

আঞ্চলিকতার প্রচুর ব্যবহার, প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যবহারের গুরুত্ব কমসহ টিভি নাটকে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়ে নানা অভিযোগ শোনা যায়। এ নিয়ে ভাবনা বলেন, ‘আমরা একেক জনের সঙ্গে একেকভাবে কথা বলি। বাসায় যেরকম ভাষায় কথা বলি, অফিসে সে ভাষায় কথা বলি না। বন্ধুর সঙ্গে একরকম ভাষায় কথা বলি, রিকশাওয়ালার সাথে কথা বলি আরেকভাবে। ব্যক্তি ও পরিবেশ ভেদে ভাষার ব্যবহার হয়। নাটকের বেলাতেও তা-ই হয়। আমার কাছে এ বিষয়গুলো সমস্যা মনে হয় না।’

টেলিভিশনের জন্য নিয়মিত কাজ করছেন ভাবনা। বিশেষ করে বিশেষ দিবস ও উৎসবের সময় খণ্ডনাটক, ধারাবাহিক ও টেলিছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় এই অভিনেত্রীকে। মনের মতো চিত্রনাট্য পান না বলে অভিনয় করেন না চলচ্চিত্রে। এ প্রসঙ্গে ভাবনা বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৬টি সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। যেসব ছবি পয়সা খরচ করে হলে গিয়ে নিজেই দেখব না, সেসব ছবিতে কেন অভিনয় করব?’

মনের মতো সিনেমা পান না, আবার নাটকে কাজ করা নিয়েও নানা বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয় তাকে। নাটকপাড়ার অনাকাঙ্ক্ষিত নানা ঘটনা নিয়ে কথা বলেন ভাবনা। তিনি বলেন, ‘আমাকে পরিচালকরা নিতে চায়, কিন্তু প্রযোজকরা চায় না। কোনো কোনো পরিচালক এসে বলে, আপু আপনার জন্য একটা ক্যারেক্টার লিখেছি। পরে দেখা যায় প্রযোজক সেখানে বাগড়া দেয়।

আমাদের এখানেও কাজ পেতে হলে নারীশিল্পীদের কেবল কাজ জানলেই চলে না, প্রযোজকের সঙ্গে কফি খেতে যেতে হয়, হাহা-হিহি করতে হয়। আমি সেটা পারি না, পারবও না। মানুষ আসলে সিঙ্গেল নায়িকা পছন্দ করে। এখানে ভালো কাজও করতে হবে, সিঙ্গেলও হতে হবে, তেলও দিতে হবে। এত কাহিনীর মধ্যেও প্রতিদিন কাজের অফার পাই।’

ভাবনা বলেন, ‘আমার সম্পর্কে একবার অভিযোগ উঠল আমি নাকি বেয়াদব। নাটকের প্রস্তাব দেওয়ায় স্ক্রিপ্ট পাঠাতে বলেছিলাম একজনকে। বলেছিলাম, স্ক্রিপ্ট পছন্দ হলেই কাজ করব। তিনি আমাকে বেয়াদব বানিয়ে দিয়েছেন। একে তো মানসম্মত কাজের অভাব, তার ওপর আবার এসব যন্ত্রণা।’

ভাবনা আরো বলেন, ‘আমি শুধু টাকা রোজগারের জন্য কাজ করি না। কাজের প্রস্তাব, বিশেষ করে নাটকের, প্রতিদিনই পাই। কিন্তু সব কাজ কি আমার পক্ষে করা সম্ভব? আমি একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। অনেকে আমাকে বলে, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকো, তোমার আবার কিসের সংগ্রাম? ইচ্ছে হলে কাজ করো, নয়তো করো না।’

আমি বলি, আমার হয়তো তিন বেলা খাওয়ার জন্য কাজ করতে হয় না। কিন্তু আমার সংগ্রামটা অন্য জায়গায়। আমি শিল্পী হতে চাই। আমি চাই আমাকে যথাযথভাবে কেউ ব্যবহার করুক। আমি সারা জীবন নাচ শিখেছি, কিন্তু আমাকে কোনো বড় অনুষ্ঠানে কেউ নাচ করতে দেখেছেন? নাচের ‘ন’ জানে না, কোনো দিন শেখেনি, বড় বড় অনুষ্ঠানে তাদেরই নাচতে দেখবেন। এই যে একজন আর্টিস্টকে কেউ ঠিক জায়গায় কাজে লাগাতে পারছে না, এটা শিল্পীর জন্য একটা যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে আমাকে। আমার ইন্ডাস্ট্রি আমাকে আলাদা করতে জানে না। অথচ ভারতে আর্টিস্ট হিসেবে অমিতাভ বচ্চন এবং ভিকি কৌশলকে একই রকম সম্মান করা হয়।’


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১