বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২১

মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের চিত্রকলা


বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক চিত্রকলার বয়স খুব কম। স্বাধীনতার মাত্র তেইশ বছর পূর্বে এর যাত্রা শুরু হয়। যারা বাংলায় চিত্রশিল্পে বীজ বপন করেন, তারা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও শিল্পচর্চা ও শিক্ষাদান করে গেছেন। এরাই বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের শিল্পী; জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, এস এম সুলতান, সফিউদ্দিন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের চিত্রকলা চর্চা হতে থাকে ঢাকাকে কেন্দ্র করে, জয়নুল আবেদিনের প্রতিষ্ঠিত গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস বর্তমান চারুকলা আনুষদে। স্বাধীনতার পর প্রায় পাঁচ-ছয় বছর জয়নুল আবেদিন চিত্র এঁকে গেছেন যেগুলো ফিগারেটিভ কাজ। কামরুল হসানকে এ সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের চিন্তাধারা আবিষ্ট করে রাখে যা তার চিত্রের মাঝে ফুটে ওঠে। সহজ-সরল বাঙালি মানুষের জীবনধারা আঁকতে থাকেন তিনি। লোকধারার অনুষঙ্গও লক্ষ করা যায় তার চিত্রে। বিষয়বস্তু হিসেবে বাংলার মানুষ, প্রকৃতিকে উপস্থাপন করেছেন লোকশিল্পের ঢঙে। কিন্তু স্বাধীন বাংলায় অশুভ শক্তি আগ্রাসন সেই স্বাধীনতার সাধকে বিষাক্ত করে তোলে; যা তার ক্যানভাসে প্রতীকীভাবে আসতে থাকে। স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণাকে উপস্থাপন করেছেন চিত্রে বিভিন্ন জীবজন্তুর আগমনে। এই ধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম ‘শেয়াল’, যা ১৯৭৬ সালে আঁকা। শেয়ালের ধূর্ত চেহারা আর শরীরের কর্কশ রূপ যেন চটুলতারই প্রকাশ করে। তার চোখের দৃষ্টি যেন সব শুভ সবকিছুকে গ্রাস করে ফেলতে চায়। এই রকম ধূর্ত শেয়াল আবার হাতে ফুল ধরে আছে, যেন কপটতা আর মিথ্যাচার মুখোশের প্রতীক এটি। ১৯৭৫-এর নির্মম হত্যাযজ্ঞের পাশবিকতা তুলে ধরেছেন এই চিত্রের মাধ্যমে। যুদ্ধ-উত্তরকালে কামরুল হাসান এমন অনেক অসাধারণ চিত্র এঁকেছেন, যেগুলোতে সহজ-সরল গ্রামীণ জীবন উঠে এসেছে, পক্ষান্তরে স্বপ্নভঙ্গের পীড়া যেন কুরে কুরে খাচ্ছে বাংলার সংস্কৃতিকে।

এ সময়ের আরো একজন শিল্পী সফিউদ্দিন আহমেদ যিনি বরাবরই এই দুই শিল্পী থেকে আলাদা। তার প্রকাশ ভঙ্গি বিমূর্ততার মধ্য দিয়ে। তার চিত্রের বিষয় হয়ে আসে দেশীয় উপাদান, যা শিল্পীকে এবং দেশকে উপস্থাপন করে। তার চিত্রে মাছ, মাছ ধরার জাল, শ্রমজীবী মানুষ, বন্যতা প্রভৃতি উঠে এসেছে। তবে একাত্তরের স্মৃতি, একাত্তরের স্মরণ, একুশে স্মরণ, কান্না প্রভৃতি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের সফল চিত্র। রেখা প্রধান এই চিত্রগুলোতে ঘুরেফিরে চোখের ড্রয়িং এসেছে। যেন সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলেছে এ কাজগুলো। সেই সঙ্গে যুদ্ধের সময়ের দুঃখ-কষ্টকে দলিল করে রাখা হয়েছে এসব চিত্রে।

এ সময়ে ঢাকার বাইরে শিল্পচর্চা হয়নি বললেই চলে। একমাত্র চর্চা হয় নড়াইলে এস এম সুলতানের মাধ্যমে। তিনি বিশ্বভ্রমণ শেষ করে লক্ষ্মী ছেলের মতো মায়ের কোলে ফিরে যান। সেখানেই তিনি শিল্পচর্চা করতে থাকেন ছন্নছাড়ার মধ্য দিয়ে। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তার চিত্রের আমূল পরিবর্তন আসে। বিষয়বস্তুতে পূর্ব থেকেই গ্রামবাংলার জীবনযাত্রা ছিল; এ সময়ে এসে বিষয়বস্তুর উপস্থাপনে পরিবর্তন আসে। অর্থাৎ তার চিত্রের মানুষগুলো পেশিবহুল ও সাহসী হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিল্পী এ দেশের মানুষের সংগ্রাম ও দীপ্ত তেজ দেখেছেন। যা পরবর্তী সময়ে তার চিত্রের মাঝে প্রবেশ করে। তার চিত্রের মানুষগুলো প্রাকৃতিক বা মানুষ সৃষ্ট কোনো বিপর্যয়কে ভয় করে না। বরং সেগুলোকে দাপটের সঙ্গে প্রতিহত করে। তার যাত্রা, চর দখল, ক্ষেত দখল, ঝড়ের পরে প্রভৃতি চিত্রগুলো এই চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে। এছাড়া তিনি বাংলার কৃষকদের শক্তি-সাহস বোঝানোর জন্য পেশি ব্যবহার করেছেন। উর্বর এই ভূখণ্ডে মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই শক্তিশালী কিন্তু বারে বারে শাসন-শোষণের ফলে তারা আজ দেখতে জীর্ণ হলেও মনের দিক থেকে অসীম ক্ষমতার অধিকারী। সেই ক্ষমতাকেই সুলতান তার চিত্রে ধরেছেন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে।

পরে গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্টস বর্তমান চারুকলা অনুষদে থেকে যেসব ছাত্র বের হন তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের শিল্পী সম্বোধন করা যায়। এরা হলেন মোহাম্মাদ কিবরিয়া, রশিদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, কাজী আবদুল বাসেত, আমিনুল ইসলাম, কাইয়ুম চৌধুরী, দেবদাস চক্রবর্তী, সৈয়দ জাহাঙ্গীরসহ আরো অনেকে। এই শিল্পীরা সকলেই স্বাধীন বাংলার স্বাধীন শিল্পী হিসেবে শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন। তবে এই প্রজন্মে এসে বাংলাদেশের শিল্পের বিশাল পটপরিবর্তন হয়েছে। এই শিল্পীরা প্রায় সকলেই ঢাকায় শিক্ষাগ্রহণ শেষ করে উচ্চতর পাঠের জন্য পাশ্চাত্যে যান। সেখানকার শিল্প ও সংস্কৃতিকে তারা গ্রহণ করেন। দেশে আসার পর বিষয়বস্তুতে হয়তো দেশীয় বিষয় এসেছে কিন্তু টেকনিকে এবং প্রকাশ ভঙ্গিতে পাশ্চাত্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এ সময় শিল্পকলায় বিমূর্ততার ছোঁয়া পাওয়া যায়, এটি অবশ্য সফিউদ্দিন আহমেদই শুরু করেন। তবে এই প্রজন্মে এসে সকলেই যেন সেদিকেই ঝুঁকে পড়েন। এটির দুটি কারণ হতে পারে-বংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় ফিগারেটিভ কাজের গ্রহণযোগ্যতা কম অথবা প্রফেশনাল দন্দ্ব। প্রথম প্রজন্মে শিল্পরা রিয়েলিস্টিক কাজ করে পরিচিতি ও সম্মান অর্জন করেছেন। তাই দ্বিতীয় প্রজন্মে শিল্পীরা অন্যভাবে কাজ করতে চাইলেন নিজেদের অস্তিত্বকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।

মোহাম্মাদ কিবরিয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের একেবারে প্রথম দিকের শিল্পী। তার চিত্রকর্মগুলো আগাগোড়াই বিমূর্ত ধারার। অল্পকিছু চিত্রকর্মে ফিগারের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়; সেগুলোতে কিউবিজম ফর্মের ব্যবহার বিদ্যমান। তবে ফিগারেটিভ কাজের থেকে বিমূর্ত কাজে তার অবদান সবচেয়ে বেশি। কেননা তার মাধ্যমেই বা অন্যভাবে বললে কিবরিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চিত্রশিল্পে বিমূর্ততা প্রবেশ করে। যে ধারা বর্তমান সময় পর্যন্তও বিদ্যমান। যদিও তা বর্তমান সময়ের মতোই অস্থির ও দুর্বোধ্য। তবে শিল্পী কিবরিয়ার চিত্রে শান্ত ও প্রশান্তিময় পরিবেশ উপলব্ধি করা যায়। তার চিত্রে কালো, নীলচে কালো, হালকা-গাঢ় নীল, হালকা-গাঢ় বাদামি প্রভৃতি রঙের ব্যবহার হয়েছে। এসব বর্ণের লেপন এবং টেকচারের ব্যবহার যেন অন্য এক আমেজ বয়ে আনে। রবীন্দ্রনাথের গানের মতো কিবরিয়ার চিত্রসম্বন্ধেও বলতে হয়, মানব মনের এমন কোনো অনুভূতি নেই যা তার চিত্রে প্রকাশ করে না।

শিল্পী রশিদ চৌধুরী স্বাধীন বাংলাদেশের চিত্রকলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি চট্টগ্রামে শিল্পের একটি আবহ সৃষ্টি করেছেন, যা বাংলাদেশকে আরো একধাপ শিল্পের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। স্বাধীনতা-উত্তরকালে শিল্পী রশিদ চৌধুরী শিল্পচর্চার জন্য ট্যাপিস্ট্রি বাবয়ন শিল্পশৈলীকে খুঁজে পেয়েছিলেন, যা বাংলাদেশে একেবারে নতুন। তিনি এই শিল্পের যাত্রা শুরু করেন এই নবভূখণ্ডে। তার ট্যাপিস্ট্রির গাঁথুনিতে যেন নিপুণ শরীর তৈরি হয় শিল্পকর্মের। তাতে রং যেন প্রাণের সৃষ্টি করে। তিনি গাঢ় রং বেশি ব্যবহার করেছেন; তবে গাঢ়র সঙ্গে উজ্জ্বল হালকা রঙের ব্যবহার বৈপরীত্যের আবহ সৃষ্টি করে। এটিই তার শিল্পের প্রধান আকর্ষণের বিষয়; যা বিমূর্তধারায় সৃষ্ট। ট্যাপিস্ট্রিতে বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন বাংলার লোককারুশিল্পের নকশাগুলোকে, যেমন নকশিকাঁথা, নকশি পিঠা, আলপনা প্রভৃতি। বাংলার প্রাচীনতম চরিত্রগুলো চিত্রে ব্যবহার করেছেন, যেমন রাধা-কৃষ্ণ, কালী, দুর্গা প্রভৃতি। আবার ইসলামী শিল্পকলার ক্যালিগ্রাফি; আদম ও ইভকে চিত্রের চরিত্র বানিয়েছেন। তার চিত্রে বিষয়বস্তুতে বহুমাত্রিকতা লক্ষ করা যায়। এছাড়া তিনি শিল্পের প্রসারের জন্য বহুমাত্রিকভাবে কাজে করেছেন।

শিল্পী মুর্তজা বশীরের ‘দেয়াল’ সিরিজের চিত্রে যুদ্ধের সময়কার বীভৎষ দমবন্ধ হওয়া আবহ সৃষ্টি করে। যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার ফলে তার চিত্রে ফুরফুরে আমেজের এর আবহ সৃষ্টি হয়। স্বাধীন দেশে তার অন্যান্য চিত্রের মাঝে ‘পাখা’ সিরিজের কাজগুলো দর্শকদের হূদয়ে এক আনন্দের অনুভূতি বয়ে আনে। শিল্পী প্রজাপতির এই পাখাগুলো বাস্তব প্রজাপতি দেখে দেখে আঁকা তথাপি বিমূর্ত উপস্থাপন। প্রজাপতির জীবনে যে ভাইব্রেশন, যে আনন্দের ধারা সেটি তিনি আঁকতে চেয়েছেন। উজ্জ্বল রঙের পাখার মাঝে যেন প্রজাপতির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। পাখার আনন্দধারা দর্শকদের বিমোহিত করে। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি পাখা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে মিউরাল, ‘ক্যানটোস’ শিরোনামের সিরিজ, ক্যালগ্রাফি, আত্মজা, প্রস্ফুটিত প্রভৃতি কাজ তিনি করেছেন।

শিল্পী কাজী আবদুল বাসেতের কাজে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে বাস্তবধর্মিতা থাকলেও; স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিমূর্ততা বা আধা বিমূর্ততা লক্ষ করা যায়। যেগুলোর মধ্যে আছে কম্পোজিশন, ছন্দময় প্রকৃতি, প্রতিবিম্ব, গোধূলি, বসন্ত প্রভৃতি চিত্র। এসব চিত্রে বিভিন্ন ফর্মের ব্যবহার হয়েছে নানা রঙের উপস্থিতিতে। আবদুল বাসেত উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার খুব কম করেছেন। তার নিষ্প্রভ রং মানুষের মনে আনন্দ-বেদনা দুই অনুভূতি জাগায়। তবে ১৯৮৫ সালের পর থেকে তিনি ফিগারধর্মী চিত্র রচনা শুরু করেন। যেগুলোতে বিষয় হিসেবে স্থান পেয়েছে বাংলার নারী। অপেক্ষা, মা ও মেয়ে, মাছ বিক্রেতা, জলকে চল প্রভৃতি শিরোনামে সিরিজ চিত্র রয়েছে। যেগুলোতে নারী হয়ে উঠেছে প্রধান বিষয়। নারীর দুঃখ-কষ্ট ও বেদনা যেন তার রংতুলিতে বিষাদময় হয়ে ওঠে। তার অপেক্ষা সিরিজের চিত্রগুলোর মাঝে নারীর হূদয়ের দীর্ঘদিনে চাপা কষ্টের প্রতিফলন দেখা যায়। শিল্পীর ফিগারেটিভ কাজগুলোতে কিউবিজমের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এ সময়ের অনেক শিল্পীর মাঝেই কিউবিজমের প্রভাব পাওয়া যায়। শিল্পী বাসেতের কাজের রং, প্রকাশভঙ্গি এবং বিষয় দর্শকদের মনকে তৃপ্ত করে।

শিল্পী আমিনুল ইসলামের স্বাধীনতা-উত্তর চিত্র ১৯৭২ সালে আঁকা গণহত্যা। এই চিত্রে ৭১-এর গণহত্যার ফলে শিল্পীর মনের যে প্রতিক্রিয়া তা প্রকাশ পেয়েছে। এরপর স্বাধীনতা নিয়ে তার স্বপ্ন যখন স্বার্থপরের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হলো তখন তিনি ঢ়ড়ৎঃৎধরঃ ড়ভ ংবষভরংযহবংং শিরোনামে বিমূর্ত মোজেইক শিল্প সৃষ্টি করেছিলেন। এই মোজেইক চিত্রে তিনি একাধিক ভাঙা কাচের টুকরো ব্যবহার করেছিলেন। স্বাধীনতার ভাবমূর্তি এমন অবক্ষয়ের দিকে গেছে যাকে জোড়া দেওয়া অনেক কঠিন; ঠিক ঐ কাচগুলোর মতো। এই চিন্তাধারার তার আরো একটি কাজ হলো ‘রঙিন চশমার বাস্তবতা’। ক্যানভাসে তিনটি চশমা রয়েছে-লাল, নীল ও সবুজ রঙের। চশমা তিনটি একটি দাবা বোর্ডের ওপর বিদ্যমান। আর দূরে একটি সূর্য দেখা যায়; যা প্রতীকী অর্থে স্বাধীনতাকে বোঝায়। কেননা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন মানুষের মাঝে একতার জন্ম দিয়েছিল। অথচ আজ রঙিন চশমার মতো প্রত্যেকের আলাদা আলাদা চিন্তাধারা সেই একতাকে ভেঙে দিচ্ছে। দারুণ দারুণ সব কাজ করেছেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চিত্রকলাচর্চা যেসব শিল্পী করেছেন তাদের মধ্যে কাইয়ুম চৌধুরীর অবদান সর্বাগ্রে। কেননা যুদ্ধোত্তর সময়ে তার চিত্রকলার পটভূমিতে জাতির বীরত্ব, বাঙালির জীবন ধারা, স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা প্রভৃতি এসেছে। সেই সঙ্গে রঙের ব্যবহার যেন দেশের উপস্থিতি প্রতিফলিত করে। লাল সবুজের মাঝে নীল হলুদ প্রভৃতি রঙের ব্যবহার দর্শককে নিয়ে যায় গ্রাম্যজীবনে। আর রংগুলোকে তিনি এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে একটি রঙের বিপরীতে অন্য রঙের ব্যবহারে ফর্ম সৃষ্টি হয়; এই ফর্মগুলোর মাঝেই থাকে চরিত্র। অসাধারণ উপস্থাপন আর নান্দনিক প্রকাশভঙ্গি তার।

শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী বিমূর্ত ও আধা বিমূর্ত ধারায় কাজ করেছেন। বিমূর্ত চিত্রগুলো রঙের বৈচিত্র্য প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করেছেন। তার এ সময়ের চমৎকার সৃষ্টি ‘বৃষ্টি’ শিরোনামের চিত্রাবলি। এই চিত্রগুলোতে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির ব্যবহার, অঝোর ধারায় ঝরছে সে বৃষ্টি। তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি এই সিরিজের চিত্রগুলো আঁকতে থাকেন এই স্বাধীন বাংলায়।

সৈয়দ জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের শিল্পকলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন; দীর্ঘদিন শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে জড়িত থেকে। আর চিত্রকলার ক্ষেত্রে তিনি মূর্ত-বিমূর্ত দুই ধারাতেই কাজ করছেন। খুব উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার দেখা যায় তার চিত্রপটে। ‘ধ্বনি’ শিরোনামের চিত্রগুলোতে প্রতিধ্বনির আমেজ পাওয়া যায়। যেখানে একই রঙের বিভিন্ন গ্রেডেশন এমনভাবে ব্যবহার করেছেন যেন একটি শব্দের প্রতিধ্বনি বার বার ফিরে আসে দর্শকদের নিকটে। 

দ্বিতীয় প্রজন্মে এই শিল্পীদের অনেকেই অনেকভাবে শিল্পশিক্ষা পাঠদানের সঙ্গে জড়িত থেকেছেন। যারা অনেক শিষ্য সৃষ্টি করেছেন এই স্বাধীন বাংলাদেশে। অর্থাৎ এই দ্বিতীয় প্রজন্মের শিল্পীদের হাতধরে জন্ম হয় তৃতীয় প্রজন্মের শিল্পীদের। যাদের অনেকেই বর্তমান সময়েও শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছেন। হাশেম খান, আব্দুস সাত্তার, রফিকুল নবী, মারুফ, দীপ হক, মনিরুল ইসলাম, কালিদাস কর্মকার, আবুল বারাক আলভী, শহিদ কবীর, মনসুর-উল-করিম, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, নাজলী লাইলা মনসুর, ফরিদা জামান, নাইমা হক, জামাল আহমেদ, রণজিৎ দাশ, নাসরীন বেগম, রুহুল আমিন কাজল, রোকেয়া সুলতানা, ঢালী আল মামুন, দিলারা বেগম জলি, নিসার হোসেন, ওয়াকিলুর রহমান, শিশির ভট্টাচার্য, আতিয়া ইসলাম এ্যানি, কনকচাঁপা চাকমা, গৌতম চক্রবর্তী ও সুশান্ত কুমার অধিকারীর মতো অনেকেই কাজ করে যাচ্ছেন। যাদের শিল্পকর্মে বর্তমন সময়কে ধরা যায়। সকলেরই আলাদা আলাদা দর্শন ও আদর্শ আছে। সেগুলোকে কেন্দ্র করে তারা চিত্র এঁকে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের চিত্রগুলো বাস্তবধর্মী হতে পারছে না। এটি কি কেবলই প্রফেশনাল দ্বন্দ্ব? বিষয়গুলো বুঝতে হবে আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রামের মতো জাতীয় জীবনের অনুষঙ্গের ভেতরে।

নাজমা পারভীন

লেখক: চিত্রশিল্পী


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১