বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২১

ফুড ভ্যানে হাসছে বশেমুরবিপ্রবি'র চার তরুণের স্বপ্ন


পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এটি প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাধারণ চিত্র। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের প্রায় শতভাগই টিউশন শিক্ষক হিসেবে লেখাপড়ার খরচ বহন করে থাকে। টিউশনি ছাড়া দুয়েকজনের ক্ষেত্রে ছোটখাটো ব্যবসা, ইন্টারনেটের যুগে কাউকে ফ্রিল্যান্সিং, কাউকে আবার অনলাইনে জামাকাপড় বা অন্যান্য জিনিস বিক্রির ব্যবসাও করতে দেখা যায়। 

কিন্তু রাস্তার পাশে ফুড কার্ট বা ভ্যানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ফাস্ট ফুড বিক্রি? হ্যা এটা ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়া নয়। বলছিলাম বাংলাদেশের ছোট এক শহর গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের চার শিক্ষার্থীর কথা। তারা হলেন- শিহাব শাহরিয়ার, জগৎ মোহন, ইমন মারুফ ও তানিম মিয়া।

গোপালগঞ্জের মতো ছোট একটি শহর, টিউশন সুযোগ যেখানে অপ্রতুল তেমনি সম্মানীও অতি সামান্য। করোনাকালে সেই টিউশনিও হারিয়েছে অনেকে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে পুরোপুরি বেকার হয়ে বসে না থেকে চার তরুণ ভাবতে থাকেন কী করবেন? এই ভাবনাতেই তাদের চলে যায় কয়েক মাস।

এমন পরিস্থিতিতে অল্প পুঁজি নিয়ে এই চার শিক্ষার্থী চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি নবীনবাগ হাসপাতালের সামনের মোড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেন ফুড ভ্যানে ফাস্ট ফুড বিক্রি। তারা শপটির নাম দিয়েছেন ‘মিলস অন হুইলস'। শুরুটা বার্গার দিয়েই। অল্প কয়েকদিনেই তাদের চিকেন জুসি বার্গারের খ্যাতি ছড়িয়েছে আশেপাশে। তাদের বার্গার শপে সমাগম বেড়েছে। তারা আশা করে ক্যাম্পাস খুললে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আড্ডায় আরো বেশি মুখরিত হয়ে উঠবে বার্গার শপটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা থাকে সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার, রাস্তার পাশে ফাস্ট ফুড বিক্রি করা অনেকে নিম্ন আয়ের মানুষের কাজ মনে করে। সে কাজ করতে কেমন লাগে প্রশ্নে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জগৎ বলেন, "আমি ব্যাক্তিগত ভাবে খুবই আনন্দিত। লাভ নিয়ে মাথা ঘামাই না আমরা। কেউ আমাদের ফুডের পজেটিভ রিভিউ প্রকাশ করলে ঈদের মতো আনন্দ অনুভব হয়।

ফুড ভ্যানে প্রতিদিন কতটা সময় দেওয়া লাগে, পড়াশোনা করে কিভাবে সময় বের করেন জবাবে এই তরুণ বলেন, 'ছাত্রনং অধ্যানং তপ' পড়াশোনাকে ঠিক রেখে আমরা আমাদের কাজ গুলা এগিয়ে নিয়ে যাব। বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাস পড়াশোনা ঠিক রেখে বাকি সময়টুকু এই কাজটি চালিয়ে নিতে চাই আমরা।

এই বার্গার শপে লাভ কেমন, কতদিন চালানোর ইচ্ছে আছে, ক্রেতা কারা এ বিষয়ে কথা হয় তানিমের সাথে। তিনি জান‍ান, ফুড ভ্যানে বার্গারের রেসিপিটা দেখছে ইমন, কুকিং টা সে নিজের হাতেই করে। বাকি কাজ গুলা আমরা সবাই মিলে করি। আমাদের লাভ খুবই সামান্য। এই বার্গারে যে উপাদান দেওয়া হয় তাতে বার্গার টি ৩০ টাকায় দেওয়া যায়না। কিন্তু সর্বসাধারণের কথা বিবেচনা করে আমরা অতি সামান্য লাভে বার্গার টি দেই, কারণ আমাদের বার্গারের প্রধান ক্রেতাই শিক্ষার্থীরা। আর সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এই অল্প টাকার বার্গার প্রকল্প টি চলতে থাকবে। আমরা একদিন ক্যাম্পাস ছেড়ে যাব কাউকে না কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যাব। প্রতিষ্ঠান তার আপন গতিতে চলতে থাকবে।

করোনা পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা শুরু হলেও এই ব্যবসা চালিয়ে যাবেন কিনা ইমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই, দিনের একটি নির্ধারিত সময়ে আমরা শ্রম দিয়ে বাকি সময় পড়াশোনা ক্লাস সব কিছুই ঠিকঠাক রাখতে পারবো আশা করি। এবং আমাদের ইচ্ছা আছে আমাদের প্রজেক্ট সফল ভাবে রান করাতে পারলে আমাদের লভ্যাংশের একটি অংশ দিয়ে দরিদ্র মেধাবীদের পাশে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।

এই কাজের আড়ালে যে বড় মানুষ হওয়া ব্যাহত হবে তেমন নয়। বড় মানুষ যে শুধু চাকরিতে হয় আমি এমন মনে করি না। একজন পরিশ্রমী উদ্যোক্তা দেশের জন্য সম্পদ স্বরূপ। আশা করি আত্মনির্ভরশীল এই ছেলেরা পরবর্তীতে দেশের সম্পদ হয়ে কাজ করবে। চাকুরির বাজার বা ব্যবসাতে সব জায়গায় আত্বনির্ভরশীল ছেলেরা এগিয়ে থাকে।

এই ধরনের পার্টটাইম কাজের প্রতি শিক্ষার্থীদের অংশ নেওয়ার পরামর্শ, তাদের জন্য এমন সুযোগ সৃষ্টির পরিকল্পনা, শুরুর আইডিয়া নিয়ে এই ফুড ভ্যানের প্রধান উদ্যোক্তা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শিহাব শাহরিয়ার বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই কিছু শুরু করতে চাচ্ছিলাম। গোপালগঞ্জে ফাস্ট ফুডের বেহাল অবস্থা দেখে আমরা এই দিক টায় বেছে নিয়েছি। আর সকল ক্যাম্পাসের ছাত্ররাই এমন কাজের সাথে জড়িত কিন্তু আমাদের ক্যাম্পাসে এমন কিছু ছিল না। সেখান থেকেই পরিকল্পনা শুরু। 

যে যত ছোট থেকে শুরু করবে তার ভেতরের অহংকার জড়তা তত বেশি কমে যাবে। তাই আমি চাই সব শিক্ষার্থী পার্টটাইম কাজের সাথে সম্পৃক্ত হোক যাতে করে পাস করে বেকার থাকার প্রবনতা কমে যাবে। শিক্ষার্থীদের উচিৎ যথাসম্ভব অন্যান্য আয়ের সুযোগ কাজে লাগানো। এই ধরনের অসংখ্য কাজের সুযোগ থাকা সত্বেও কেবল টিউশনির পিছনে ছোটা বোকামি। এখানেও শেখার অনেক কিছু আছে, সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে এটা খুব সহায়ক।  

ভবিষ্যতে বার্গার শপটার মত ভিন্ন ভিন্ন ফুডের ১০ টি ফুড ভ্যান দাঁড় করানোর পরিকল্পনা জানালেন শিহাব। তিনি আরো জানালেন, আমাদের ইচ্ছা শপগুলো গোপালগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করবে যেটার মাধ্যমে আমাদের ইইই বিভাগের প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করি। খুব শীঘ্রই আমরা হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু করব।

আমাদের শপ গুলাতে ইমন, তানিম, জগৎ দের মতো যোগ্যদের তুলে আনা হবে। আশা করছি তারা তাদের দৈনন্দিন খরচ এখান থেকে ইনকাম করতে পারবে।

অস্বচ্ছল সকলের ইচ্ছা টিউশনি পাওয়া কিন্তু গোপালগঞ্জের অবস্থা আমাদের সকলের জানা। ন্যায্য বেতনের টিউশনি নাই বললেই চলে তাই তাদের প্রতি আহবান থাকবে ছোট হোক বা বড় সৎ পথে নিজের অলস সময় টা বিনিয়োগ এর জন্য।

এই চার তরুণ মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে মেধাবীরা যা করবে তাই সুন্দর হতে বাধ্য। যে কোন কাজ তারা করতে পারে এতে করে বড় কাজ করার অনুপ্রেরণা আসবে তাদের। এই ধরনের কাজ যে শুধু গরীব মেধাবী দের জন্য এমনটা নয়। সবারই আত্বনির্ভরশীল হওয়ার জন্য কাজ করতে হবে তবেই বেরিয়ে আসবে অনেক উদ্যোক্তা, এদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসবে আগামীর স্বনির্ভর বাংলাদেশ। কোন কাজই ছোট নয়, 
শিক্ষা কখনো কাজকে ঘৃণা, অবজ্ঞা করতে শেখায় না।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১