বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২১

গোলাপি কি নারীদের রঙ


নারী মানেই গোলাপি রঙ। এমন ধারণা বহুকাল ধরেই চলে আসছে। কিন্তু সত্যি কি জেন্ডার আর রঙ- এ দুটোর মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে? আবার নারী শিশুর প্রসঙ্গ এলেই আমরা গোলাপি রঙের জামা জুতো আর খেলনার কথা ভাবি? তাহলে জেন্ডারের সঙ্গে কি কোনো সম্পর্ক রয়েছে নাকি এটা বাণিজ্যিক বা সামাজিক  কারণ?

নারী মানেই গোলাপি রঙ। এমন ধারণা বহুকাল ধরেই চলে আসছে। কিন্তু সত্যি কি জেন্ডার আর রঙ- এ দুটোর মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে? আবার নারী শিশুর প্রসঙ্গ এলেই আমরা গোলাপি রঙের জামা জুতো আর  খেলনার কথা ভাবি? তাহলে জেন্ডারের সঙ্গে কি কোনো সম্পর্ক রয়েছে নাকি এটা বাণিজ্যিক বা সামাজিক  কারণ? এমন প্রশ্ন নিয়ে কথা বলেছিলাম কয়েকজন ফ্যাশন ডিজাইনারের সঙ্গে।

এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন ডিজাইনার দোয়েল বলেন, নারী বা মেয়েদেও গোলাপি রঙ পছন্দের ব্যাপারটা পুরোপুরি সামাজিক কিংবা বাণিজ্যিক নয়। এর পেছনে আছে মানসিক এবং শারীরিক কিছু ব্যাপারও। ছেলেদের চাইতে একটু বেশি লালচে রঙ পছন্দ নারীদের জন্মগতভাবে পছন্দ।

এসব তথ্য গবেষণায় উঠে এসেছে বলেও জানান দোয়েল। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী এনিয়া হার্লবার্ট এবং ইয়াজু লিং ২০-২৬ বছরের মোট ২০৮ জন মানুষের উপরে রঙ নির্বাচন পরীক্ষা চালান। অংশগ্রহণকারীদের বলা হয়, খুব দ্রুত কার্সর ঘুরিয়ে কয়েকটি রঙ, কয়েক শেডের রঙ, আলো এবং অন্ধকারের মিশেলে রঙ, বিভিন্ন আকৃতিতে থাকা রঙের মধ্যে থেকে নিজের পছন্দের রঙটি বাছাই করতে। সপ্তাহ দুয়েক পর আবার তাদের নিয়ে একই পরীক্ষা করা হয়। সেখানে দেখা যায় প্রায় সব মানুষই সাধারণত নীল রঙ পছন্দ করে। তবে ছেলেরা যে ক্ষেত্রে নীলের সাথে সবুজের মিশ্রণ পছন্দ করে,  সেক্ষেত্রে মেয়েরা একটু লালচে রঙয়ের নীল পছন্দ করে। অনেকটা বেগুনী ধাঁচের রঙ এগিয়ে থাকে মেয়েদের পছন্দের তালিকায়।

ফ্যাশন ডিজাইনার বকুল বেগম বলেন, নারীরা পুরুষদের চাইতে রঙয়ের আভা ভালো বুঝতে পারে। এই ক্ষমতা আজকের নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে অভ্যাসের ফলে তৈরি হয়েছে। সাধারণত নারীদের বাচ্চা লালন-পালন করতে হয়। সেক্ষেত্রে শিশুর যত্ন নিতে গিয়ে তাদের বুঝতে হয় যে, শিশুর গালে আভা কতটুকু লালচে হলে তার শরীর খারাপ। এসব অভ্যাসের কারণের রঙ এবং রঙের মিশ্রণ পুরুষের চাইতে অধিকতর পরিষ্কারভাবে দেখতে পান নারীরা। তাই অনেক সময় পুরুষেরা গোলাপি রঙ হালকা বিধায় সেটাকে খুব ভালো করে দেখতে এবং পছন্দ করতে পারে না। কিন্তু অভ্যাসগতো কারণে গোলাপি রঙের প্রতি মেয়েদের দুর্বলতা তৈরি হয়।

এতো গেল ফ্যাশন ডিজাইনারদের কথা এবার আসি আপনার কাছে। আচ্ছা আপনি বলুন তো, আপনার নিজের শিশুটির জন্য কোনো জামা কিনতে হলে বা কোনো পণ্য কিনতে হলে কোথায় যাবেন? অবশ্যই কোনও শপিংমলে বা দোকানে। আর দোকানে গিয়ে জানতে পারলেন যে, নির্দিষ্ট রঙয়ের জামা এখন ফ্যাশন দখল করে রেখেছে। সবাই কিনছেও সেটা। তাহলে আপনিও সেই রঙের জামা বা জুতা কিনবেন না? হয়তো কিনবনে। আসলে রঙের প্রতি বিশেষ আকর্ষণ তৈরি হওয়া শুরু হয় তখন থেকেই। আপনার কেনা জিনিসটিই আপনার সন্তান পরছে। আর শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। সে তার চারপাশে যা দেখবে সেটাই তো শিখবে। এভাবেই একটি রঙের প্রতি তারও দুর্বলতা তৈরি হয়।

এ নিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার তাসনিম কবীর বলেন, সবার ভেতরে এই ধারণা অনেক আগে থেকেই বদ্ধমূল হয়ে আছে যে, মেয়ে শিশুর জন্য গোলাপি রঙটাই একদম ঠিকঠাক। তাই তার জন্য ছোটবেলা থেকে কিনে আনা হয় গোলাপি জামা, জুতো, খেলনা। আশেপাশে নারীদের মুখেও থাকে গোলাপি রঙয়ের প্রতি আকর্ষণের গল্প। এতকিছু শুনতে শুনতে নিজের পছন্দের রঙয়ের জায়গায় গোলাপিকে বসিয়ে দেওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। গোলাপির বদলে রঙটা যদি হতো খয়েরী, তবে নারী শৈশব থেকে সেটাকেই বেশি পছন্দ করতো।

তবে গবেষণা কিন্তু অন্য কথা বলছে। গবেষকদের যুক্তি, জন্মগতভাবে নয়, বরং জন্মাবার বেশ কিছুদিন পর চারপাশের মানুষের এবং সমাজের মন মানসিকতা দ্বারা প্রভাবিত হয়েই এমন রঙ বেছে নেয় মেয়েরা। তাই পছন্দের রং এখানে কোনো বড় ব্যাপার নয়। আসল ব্যাপার হলো চারপাশের পরিবেশ। পরিবেশ একটা শিশুকে যে ধারণা দেবে, সে সেটাই করবে। তাদের দাবি, দুই বছর বয়স থেকেই মেয়েরা গোলাপি রঙয়ের দিকে ঝুঁকতে থাকে। আর ঠিক তার কাছাকাছি কোনো একটি বয়স থেকেই গোলাপী রঙকে সতর্কতার সাথে দূরে সরিয়ে রাখতে শুরু করে  ছেলেরা। সেদিক দিয়ে বলতে গেলে, এই আচরণ থেকে বোঝাটা খুব স্বাভাবিক যে,

এ প্রসঙ্গে মনোবিদ মোহিত কামাল বলেন, ইচ্ছা করে গোলাপি রঙয়ের পোশাক পরে কোনো ছেলেশিশু নিশ্চয়ই নিজেকে মেয়েলী বলে প্রমাণ করতে চাইবে না। সেই সাথে, কোনো মেয়ে নিশ্চয়ই চারপাশের সবার চাইতে আলাদা হয়ে উঠতে চাইবে না। গোলাপীতে তাকে মানায়, সুন্দর দেখায়, গোলাপিই তার পছন্দনীয় রং সেটা ভাবতে অনেকটাই বাধ্য সে।

আসল কথা হলো- গোলাপি রঙ আর দশটা রঙয়ের মতোই একটি রঙ। একজন মানুষ, নারী ও পুরুষভেদে, গোলাপি রংটিকে পছন্দ করতেই পারেন। তার মানে এই নয় যে, তাকে নারী হতে হবে। তবে সামাজিক প্রভাবে ইতিহাসে বারকয়েক হাতবদল হয়ে গোলাপি এখন হয়ে উঠেছে নারীদের রঙ। তবে একটি ব্যাপার সঠিক যে, গোলাপি মানুষকে আকর্ষণ করে বেশি। ২০০২ সালে সুইজারল্যান্ডে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কাগজে গোলাপি রঙ দিলে মানুষ লিফলেট কিংবা ফর্মের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। যেটা কিনা অন্য  কোনো রঙয়ের ক্ষেত্রে হয় না!

শেষ কথা গালাপী মিষ্টি এবং চমৎকার একটি রঙ। একে যেকোনো নারী পছন্দ করতেই পারেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১